জহুরুল ইসলাম
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের ৫৩ নং এফএমবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবনের লক্ষাধিক টাকার মালামাল প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমির হোসেন, দেয়াড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক শাহ আলম সাগর এবং বিএনপি নেতা আমিন হোসেন পরস্পরের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমির হোসেন স্কুলের ইট ও সুড়কি দিয়ে নিজের বাড়ির রাস্তার কাজ করিয়েছে। এড়াছা স্কুলের ঘর ভাঙার লোহার দরজা, জানালা ও লোহার রড বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলেও তারা কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এই বিদ্যালয়টি আমাদের গ্রামের শিক্ষার প্রাণ। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলীয় পদ-পদবিতে থাকা নেতারা স্কুলের সম্পদ নিয়ে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় অনেকেই মুখে কিছু না বললেও মনের ভেতর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পোষণ করছেন।
স্থানীয়দের দাবি, স্কুলের সম্পদ বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করার ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল কোনোভাবেই ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, আমরা খুব আতঙ্কে আছি। কিছু বললে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছি।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমির হোসেন বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে মালামাল নিয়েছি। আর মাত্র ২হাজার টাকার সুড়কি আমার বাড়ির রাস্তার জন্য ব্যবহার করেছি। প্রধান শিক্ষক আমাদের বিক্রি করার জন্য দিয়েছিল তাই আমরা ওই মালামাল স্কুল থেকে নিয়ে এসেছিলাম।
আরেক বিএনপি নেতা শাহ-আলম সাগর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমি ওই স্কুলে ওয়াশব্লকের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে স্কুরের প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান ঝরনা জানায়, সাম্প্রতি আমার স্কুলের একটি রুমের বরাদ্ধ পায়। এ কারনে একটি ঘর ভাঙতে হয়েছে। ঘর ভাঙার সকল মালামাল আমির হোসেন ও সাগর নিয়েগেছে স্কুল বন্ধ থাকার কারনে তারা সুযোগ পেয়েছে। মালমালের বিষয় জানতে চাইলে আমির ও সাগর ২৬ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে বলে জানান এবং প্রধান শিক্ষককে ১০ হাজার টাকা দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহন করেননি।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, পরে জানতে পারি তারা ওই সকল মালামাল বিক্রি করে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমি টাকা না নিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার(এটিও) সোহেল রানাকে জানায়।
এবিষয় জানতে এটিও সোহেল রানার মুঠোফোনে দফায় দফায় ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি এ বিষয় কিছুই জানেননা তবে খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
স্থানীয়ও সচেতনমহল জানায়, সরকারি সম্পত্তি চুরি যাওয়ার পেছনে প্রধান শিক্ষক ও এটিও সোহেল রানা জড়িত না থাকলে এতদিন পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন? সরকারি এ মালামাল অতিদ্রুত ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।