কণ্ঠ ডেস্ক
ঘড়িতে বিকেল ৩টা ছুঁই ছুঁই! যশোরের মডেল পৌরসভা মণিরামপুর কার্যালয়ের প্রশাসনিক ও প্রকৌশল বিভাগের ১০৩,১০৪,১০৫,১০৬ নং রুমে পড়ে গেছে তালা। বারান্দায় অপেক্ষায় আছেন মণিরামপুর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে আসা বিভিন্ন সেবা গ্রহীতারা।
গত ১৯ মে সোমবার সরেজমিনে পাওয়া তথ্য ও ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে ভেসে উঠেছে মণিরামপুর পৌরসভা কর্তৃক সেবাদানের নামে জনসাধারণের সাথে অবহেলা, হয়রানি ও খামখেয়ালীপনার দৃশ্য।
তথ্য আছে, ১০৬ নং রুমে দীর্ঘ ২৩ বছর প্রশ্নবিদ্ধ সেবা দিয়ে আসছেন উদ্দোক্তা মোঃ সবুজ হোসেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, সবুজ হোসেন নিয়মিত ১১ টা না বাজলে অফিসে আসেন না, দুপুরে খেতে যেয়ে আসেন বিকাল ৪টার দিকে। জন্ম সনদে নেন অতিরিক্ত অর্থ, সেবা নিতে আসা লোকেদের সাথে করেন অসাধচারণ, ভালো লাগলে অফিসে বসেন না লাগলে বাইরে ঘুরে আসেন। এছাড়াও একাধিক অভিযোগ এই সবুজের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালেও একবার গর্ভকালীন ভাতার কার্ড নবায়নে এই সবুজ বিতর্কে আসেন। তখন কার অভিযোগ ছিল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বাসিন্দা ভ্যান চালক মোঃ বাবু হোসেনর স্ত্রীর নামে নবায়নকৃত গর্ভকালীন ভাতার কার্ডের তথ্য সবই ঠিক রেখে শুধু সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নং দিয়েছিলেন পাল্টে। সে সময় আরও কয়েকটি কার্ডেও দেখা দিয়েছিল ঐ জটিলতা। এ সমস্ত অভিযোগ ও বাস্তবিক ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে কারণ জানতে চাইলে সবুজ হোসেন জানান, আমি দীর্ঘ ২৩ বছর এখানে কাজ করছি! কত অফিসার, সাংবাদিক এলো আর গেলো আমি সবুজ আমার চেয়ারেই আছি। গত ১৯শে মে দুপুরে একটু দেরিতে খাইতে গেছিলাম তাই দেরিতে আসছি। এটা আহামরি কিছুনা। সবুজ তার পাশের খালি চেয়ার দেখিয়ে বলেন উনাকে ধরেন উনিতো ১টার সময় খেতে যেয়ে এখনো আসেননি! তথ্য আছে, পাশের চেয়ারের রীনা নাসরিন মূলত ১০৫ নং রুম ও সবুজের রুমের সহকারি হিসাবে কাজ করেন। তিনিও নিয়মিত ১০টার আগে অফিসে আসেন না আর দুপুর ১টাই দুপুরের খাবার খেতে যেয়ে আসেন ৩টারও পরে। কোনদিন ঐ রুম গুলো থাকে তালাবদ্ধ বা ভিতরে ফ্যান চলছে কর্মরত ব্যক্তিরা কেউ চেয়ারে নাই। রুমের সামনেই থাকা চেয়ারে বা বারান্দায় হাটাহাটি করে অতিষ্ঠ হয়ে যান সেবা গ্রহীতারা। তবে এ বিষয়ে রীনা নাসরিন ১৯শে মে দুপুরে খেয়ে এসে নামাজে ছিলেন বলে জানা যায়।
এখানেই শেষ না! অভিযোগ ও অনিয়মের অন্ত নেই মণিরামপুর পৌরসভা প্রশাসন এবং পৌরসভা প্রকৌশলী শাখার বিরুদ্ধে। এক একটা জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, যে কোন প্রত্যায়নপত্র সহ সকল সেবা গ্রহীতাদের সেবা নিতে এসে পড়তে হয় নানান সব জটিলতায়।আজ সার্ভার ডাউন,বপ্রশাসনিক কর্মকর্তা নাই, আজকে হবেনা কাল আসেন, এখন সময় নাই এমন নানান সব বাহানায় চলছে মণিরামপুর পৌরসভার সেবাদানের নামে নয়-ছয় কার্যক্রম।এ সমস্ত বিষয়ে আলাপকালে নবাগত পৌর সচিব মোঃ তফিকুল আলম জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি সবাইকে সঠিকভাবে অফিসে বসার কথা জানিয়ে দিয়েছি। তিনি আরও জানান, আমি নতুন আসছি আগামিতে সকল সমস্যা সমাধান করা হবে।
এদিকে ১০৪ ও ১০৩ নং রুমে বসেন পৌরসভার প্রকৌশলী শাখার এক কর্মকর্তা ও এক কর্মচারী। নির্ধারিত কর্মকর্তাকে রুমে না পেয়ে পৌর প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারকে ফোন করলে জানান, সহকারি ইন্জিনিয়ার তপু বিশ্বাস সহ টিম সহকারে বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও ড্রেন সংস্কারের কাজ পরিদর্শনে এসেছি। তবে তথ্য বলছে প্রকৌশলী শাখার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে যে, ৯টি ওয়ার্ডের ১টিতেও নেই সঠিক তদারকি। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য নিষ্কাশন জটিলতা, ফুটপাত দখল ও যানজট নিরসনে ব্যর্থ, সোলার লাইটে জ্বলেনা আলো, প্রশ্নবিদ্ধ সাপ্লাই পানি সেবা। এসমস্ত একাধিক অভিযোগ আছে পৌর প্রকৌশলী শাখার বিরুদ্ধে। অভিযোগ দিলেও আমলে নেন না পৌর প্রকৌশলী শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার।
উল্লেখ্য, যে সমস্ত ড্রেন নির্মান হয়েছে তার ৯০% অপরিকল্পিত। ড্রেনের শুরু আছে তবে যেখানে গিয়ে পানি পড়বে তারই মাথা নেই, কোনোটা আবার ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে পড়ে আছে। পৌরশহরের ৫নং ওয়ার্ড তাহেরপুর গ্রামীন ব্যাংকের সামনেই ড্রেনের উপর ফজলু নাম করে এক ব্যক্তি খুলে বসেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখানে ময়লা ফেলে, ড্রেন বন্ধ করে ও সরকারি জায়গা দখল করে তৈরি করেছে ছাগল পালনের ঘর। বারবার অভিযোগ দিলেও প্রকৌশলী শাখার লোকজন যেয়ে চা-নাস্তা করেই চলে আসেন। বাকি সব কয়টি ওয়ার্ডেও একই সমস্যা চলমান।
এ সমস্ত কিছু ছাপিয়ে চলতি বছরে মণিরামপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না পৌরসভা চত্বরে ব্যায়বহুল প্রায় ৯ লক্ষ্য টাকা খরচ করে গড়ে তুলেছেন নয়নাভিরাম কৃত্রিম সৌন্দর্য্য। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটা লেক বা পার্ক চত্বর।সন্ধ্যা নামলেই পৌরশহর ও বাইরে থেকেও সৌন্দর্য্য প্রেমীরা আসেন এ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ অবলোকন করতে। তবে বেশিরভাগ পৌরবাসী ও সচেতন মহল বলছেন সৌন্দর্য্য বর্ধনের চেয়ে পৌরবাসীর সেবার মান উন্নয়ন ও সঠিক কার্যক্রমের তদারকি বড়ই প্রয়োজন পৌরবাসীর জন্য। বাস্তবের চিত্রটিও তাই বলছে, নিজ উদ্যোগে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা পৌরসভার সৌন্দর্য্য বর্ধনের কৃত্রিম দৃশ্য ভাইরাল এখন অনলাইনে। যা অনেকটা উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাটের মতই লক্ষ্যণীয়।
এ ব্যাপারে পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার জানান, আমরা ড্রেন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি, আস্তে আস্তে সব বিষয়ে সংস্কার করে শতভাগ সেবা নিশ্চিত হবে।
তথ্য মোতাবেক, গেল বছরের ৫ই আগস্টে দেশের পট পরিবর্তনের পরপরই স্বৈরাচারের দোসর মণিরামপুর পৌরসভার সাবেক সচিব মোঃ কামাল হোসেনের নানান অপকর্ম বিভিন্ন পত্রিকাতে উঠে আসায় তার বদলি হলে পৌরসভার প্রশাসনিক অবস্থা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। পৌরসভার নির্বাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে মণিরামপুর পৌরসভার দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না।বৃহত্তর মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের নির্বাহী কর্মকর্তার বিরাট এলাকার দায়িত্বের বাইরেও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের দায়িত্বটা হয়তো যৌথভাবে পালন করা ও খবরা খবর নেওয়া একটু বেশিই ভারী হয়ে দাড়ায়। এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো অফিস কর্যক্রম করে সেবার নামে পৌরবাসীর সাথে উদ্যগক্তা সবুজ হোসেন সহ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী করে চলেছেন প্রহসনের নাটক।
এতে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।অতি দ্রুত শতভাগ সেবা নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছে মণিরামপুরের সচেতন পৌরবাসী।
মণিরামপুর পৌরবাসীর সেবার মান উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দিয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান,উদ্যগক্তা সবুজ হোসেনের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।