জাহাঙ্গীর আলম মুকুল,ডুমুরিয়া(খুলনা)
নিউটন মন্ডল প্রায় এক যুগ ধরে খুলনার দৌলতপুর বেসরকারি পাটকলে কাজ করেছেন । একপর্যায়ে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় পড়েন। পরে পাটকলের কাজ ছেড়ে দেন এবং একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। গ্রামের কিছু কৃষকের পরামর্শে অল্প কিছু জমি বর্গা নিয়ে শুরু করে সোনালী ফসল ধান চাষ।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধান চাষ লাভজনক না হওয়ায় জমির একটি অংশে স্থানীয় জাতের পানি কচুর চারা রোপণ করেন নিউটন মন্ডল। এরপর থেকে আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সে প্রায় লাখ টাকা আয় করছে প্রতিবছর। পানি কচুর চাষ করে ভাগ্য বদলে যাওয়া এই কৃষকের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের ঘোনা মাদারডাঙ্গা গ্রামে। খুলনার দৌলতপুর-শাহপুর সড়কের ঘোনা মাদারডাঙা গ্রাম ধরে সামনের দিকে এগোলেই চোখে পড়বে পানি কচুর খেত। এটাই নিউটনের কচুক্ষেত।নিউটন মণ্ডল দৈনিক প্রতিদিনের কণ্ঠের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম মুকুলকে জানান , বিগত ২০০৮ সাল থেকে পানিকচু চাষ করে আসছি। গত বছর ২৫ শতক জমিতে পানিকচু চাষ করে দেড় লাখ টাকার ওপর লাভ হয়েছে। চলতি বছরে লাখ টাকার ওপর কচুর লতি, ফুল ও কচু বিক্রি করেছি। এখনও খেত থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে সে জানায়, স্থানীয় মৎস্য ঘেরের ভেঁড়িবাঁধ থেকে দেশি প্রজাতির কিছু পানি কচুর চারা সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করি। এ পানিকচুর চারা ডিসেম্বর মচসের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি রোপন শেষ করতে হয়। সারিবদ্ধভাবে তিন ফুট দূরত্বে, এক ফুট গভীর করে কোদাল দিয়ে চাষ করে পানিকচুর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপনের পর জৈব ও রাসায়নিক সার সুষমভাবে বন্টন করা হয়, রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় কচুর লতি সংগ্রহ করা যায়। কচুগাছ ১০ ফুটের মতো লম্বা হয়। একেকটির ওজন হয়ে থাকে প্রকারভেদে ২০ থেকে ৩২ কেজির মতো।অনেকেই এই পানি কচুর নাম দিয়েছেন নিউটন কচু।নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মণ্ডল আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, ‘কচু চাষ করার পর থেকে আমার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে, মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে,টাকা জমিয়ে এবার একটি গরুর খামার করেছি। এ বছর গরুর খামারটি আরও বড় করব। প্রতিদিন নিউটন মন্ডল নিজস্ব ভ্যানে করে খুলনা শহরে এ পানিকচু বিক্রি করে থাকে সে জন্য মাসিক বেতনের একজন কর্মচারিও রয়েছে তাঁর। তাছাড়াও নিউটন মন্ডল সামাজিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও শুরু করেছেন বিক্রয় কার্যক্রম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক ক্রেতাদের কাছে খেত থেকে পানিকচু বিক্রয় করে থাকে। এ বছর প্রতি কেজি লতি ২২ থেকে ৩৮ টাকা, প্রতিটি কচু আকারভেদে ৪০ থেকে ১০০ টাকা এবং প্রতিটি ফুল ১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগের সহায়তায় কচুর চারা বিক্রি করেছ বরগুনার বামনা, খুলনার রূপসা, যশোর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিটি চারার দাম ৩ থেকে ৪ টাকা। নিউটনের সাফল্য দেখে এলাকার কৃষকেরাও কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক ব্রজনাথ বিশ্বাস বলেন, জমিতে ধান চাষ তেমন লাভজনক নয়। নিউটনের সহযোগিতা এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুই বছর ধরে জমিতে কচু চাষ করছি। গত বছর এক বিঘা জমিতে শুধু লাখ টাকার লতিই বিক্রি করেছিলাম। এ বছর আরও লাভ হবে। ডুমুরিয়া ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিউটন মণ্ডলের দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে কচু চাষ করছেন। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কচু চাষে এখানকার অনেকের ভাগ্য খুলেছে।