1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman
শিরোনামঃ

তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদকের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ পুরো বাহিনী

  • প্রকাশের সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
  • ৪৩ বার সংবাদটি পাঠিত

খুলনা প্রতিনিধি

খুলনা শহরে মাদকবিরোধী অভিযানের মাঝেই পুলিশের তিন কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সদর থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা—ইব্রাহিম, হাসান ও তুহিন—একটি বড় মাদক চালান উদ্ধারের পর আসামিদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ‘ছাড়িয়ে’ দিয়েছেন, যা শুধুমাত্র অনৈতিক নয়, বরং পুরো পুলিশ প্রশাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।গত ৩০ মে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা সদর থানাধীন রেলওয়ে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স এলাকার একটি ফার্নিচারের দোকানের সামনে থেকে ২০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানে ব্যবহৃত হয় একটি ইঞ্জিনচালিত নছিমন, যার বডির ভেতর সুকৌশলে লুকানো ছিল নিষিদ্ধ ফেনসিডিলের বোতল। প্রতিটি বোতল ছিল ১০০ মিলিলিটার পরিমাণ এবং সব মিলিয়ে যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ লক্ষ টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইঞ্জিনচালিত ঐ নছিমনে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল ছিল বলে দাবী করেছেন গোপন একটি সূত্র। তবে এখানেই শেষ নয়। গোপন সূত্রে জানা গেছে, আড়ংঘাটা বড়ইতলার জাহিদের বাসা থেকে একটি চোরাই নছিমন গাড়ি উদ্ধার করে একই দিন সদর থানার তিন কর্মকর্তা—ইব্রাহিম, হাসান ও তুহিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আসামিদের কৌশলে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, অথচ পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। আড়ংঘাটা বড়ইতলার জাহিদের স্ত্রী জানান, পুলিশ এসে ঐ মালপত্র, নছিমন গাড়িসহ নিয়ে গেছে। যে লোকটা বাসা ভাড়া নিয়েছিল, সে তখন বাসায় ছিল না—তবে তার ছেলে ছিল। তবে পুলিশ তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে কি না, তা আমি নিশ্চিত নই।স্থানীয়দের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাঁদের ভাষ্য, পুলিশ প্রথমে গোপনে অভিযান চালিয়ে গাড়ি ও মাদকসহ আসামি আটক করে। পরে অর্থের বিনিময়ে চুপিসারে ছেড়ে দেয়। এরপর একটি সাজানো ‘উদ্ধার নাটক’ মঞ্চস্থ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায়।এ বিষয়ে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি বলেন, পুলিশ নিজেরাই যখন মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকে, তখন সাধারণ মানুষ আর কার কাছে যাবে?এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিমের মোবাইল ফোনে মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি এড়িয়ে যান এবং ফোনটি কেটে দেন। অন্য দুই অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসান ও তুহিন-এর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।আড়ংঘাটা থানা জানায়, মাদক উদ্ধার অভিযানের ঘটনায় আমাদের থানাকে আগে থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়ংঘাটা থানার এক কর্মকর্তা জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের কাছ থেকে জানতে চাইলে, আমরা থানার আওতাধীন সব রাস্তায় খোঁজ নিয়ে বিষয়টি যাচাই করার চেষ্টা করি। তবে তেমন কিছু খুঁজে পাইনি। যদি সত্যিই অন্য কোনো থানা থেকে এসে অভিযানের নামে কেউ কাউকে নিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই আমাদের থানা কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল।তিনি আরও বলেন, এভাবে গোপনে অভিযান পরিচালনা করা হলে পরবর্তীতে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে।অন্যদিকে, সদর থানার ওসি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে, কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।কেএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ আবু তারেক বলেন, আমার জানা নেই—এই গাড়িটি কোথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাকে শুধু জানানো হয়েছে, রেলওয়ে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের সামনে একটি পরিত্যক্ত নছিমন গাড়ি থেকে ২০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি অন্য কোথাও থেকে আনা হয়েছে কি না—এ ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সদর থানার সার্কেল অফিসার অথবা ওসির সঙ্গে কথা বলেন।কেএমপি’র মিডিয়া সেল সূত্রে জানাযায়, একটি থানা পুলিশের পক্ষে অন্য থানার অধিভুক্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার দেখানো এবং সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত না করাটা পুলিশের নিয়মানুবর্তিতা এবং পেশাগত শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এতে শুধু আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা বিঘ্নিত হয় না, বরং গোটা বাহিনীর ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ যখন অপরাধ দমনের বদলে অপরাধে সহায়তা করে, তখন মাদকবিরোধী অভিযানের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন অনিয়ম আরও বাড়বে। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ বাহিনী নিজের ঘরের ভেতরের ‘ভক্ষকদের’ রুখতে পারে কি না। জনসাধারণ এবং সুশীল সমাজের একটাই প্রশ্ন—“রক্ষকই যখন ভক্ষক, তখন রক্ষা করবে কে?”

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION