বিশেষ প্রতিনিধি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আলীম চৌধুরী মেডিকেল সেন্টারে গত ছয় মাস ধরে কোনো মনোচিকিৎসক না থাকায় একাডেমিক, পারিবারিক ও মানসিক চাপে ভুগছেন এমন শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম সঙ্কটে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে হতাশ হতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, পারিবারিক চাপ এবং ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে অনেকে শিক্ষার্থী মানসিক অবসাদে ভুগছেন। কিন্তু মনোচিকিৎসক না থাকায় তারা যথাযথ পরামর্শ পাচ্ছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন তাসনিম বলেন, ” নারী মনোচিকিৎসক না থাকায় আমরা অনেক সময় সমস্যার কথা বলতে পারতাম না। তাই উপযুক্ত পরামর্শ পায় না। আর এখন তো মনোচিকিৎসকই নেই। সামনে পরিক্ষা, এখন আর মানসিক প্রেসার নিতে পারছি না।”
মনোচিকিৎসক না থাকার বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ডঃ কানিজ ফাহমিদা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রার স্যারকে একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে মোট দুইজন মনোচিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছি। আশা করি খুব দ্রুতই মনোচিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের অন্যান্য চিকিৎসকেরা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যাতে হতাশায় না ভোগে, সে জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। তবে পেশাদার মনোচিকিৎসক না থাকায় সেবা অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।”
গত ৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌকির আহমেদ আবির মানসিক অবসাদ, পারিবারিক ও আর্থিক কারণে আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়। যা পুরো ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া ফেলেছিল। ওই ঘটনার পর মনোচিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্টভাবে সামনে আসে।
মনোচিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন “আমাদের মেডিকেলে মনোচিকিৎসক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আশা করি দুই মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”
মনোচিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানতে চায়লে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক মো: ফজলে রাব্বির মতে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দ্বায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিতে হবে। দ্রুত মনোচিকিৎসক নিয়োগ না দিলে এমন সংকট আরও বাড়তে পারে। যার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হবে আমাদের শিক্ষার্থীরা।”