সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
২০০৬ সালে এতিম ও প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে নির্মাণ করা হয় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। খুলনা বিভাগের একমাত্র এই কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অনুমোদিত পদ রয়েছে ২৬টি। ২০১৩ সালে মাত্র ছয়টি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়। এরপর দেড় যুগেও অবশিষ্ট পদে জনবল নিয়োগ করা হয়নি। মেশিনারিজ, কম্পিউটার, এমব্রয়ডারিসহ অন্যান্য মেশিনারিজ রয়েছে এখানে। তবে প্রশিক্ষকের অভাবে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনবল চেয়ে অনেকবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। শুধু জনবল নয়, অনেক ধরনের সংকট নিয়ে চলছে সরকারি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরারআ শাশুনি উপজেলা সদরে ২০০৬ সালে প্রশিক্ষণকে ন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। গার্মেন্ট, এমব্রয়ডারি,টেইলারিং, উড নিটিং, জুট ওয়ার্কস, বাটিকস, প্রিন্টিং, বিউটিফিকেশন, ক্রিস্টাল ওয়ার্কস, উড ওয়ার্কস, উডকার্ভিং, অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অ্যান্ড পোলট্রি, কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, মবিলিটি এবং শারীরিক, মেশিনারি ওয়ার্কশপ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তবে শুরু থেকেই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। জনবলের অভাবে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান মেশিনারিজ। তাছাড়া আবাসিক প্রশিক্ষণার্থীদের তিনবেলা যে খাবার বরাদ্দ রয়েছে, সেটাও অপ্রতুল। লবণাক্ত এলাকায় কারণে রয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হোসেনুজ্জামান বলেন, ‘খুলনা বিভাগের একমাত্র এতিম ও প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি সাতক্ষীরার মানুষের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। তবে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের পর এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। এখানে দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তার সুফল পাবেন প্রশিক্ষণার্থীরা।’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন জানান, সাড়ে ছয় বিঘা জমির ওপর ২০০৬ সালে নির্মাণ হয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। যার মধ্যে একটি প্রশাসনিক ভবন, হোস্টেল ভবন, অ্যাকাডেমিক ভবন, কোয়ার্টার, ব্যাচেলর কোয়ার্টার, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টার ও ওয়ার্কশপ রয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ রয়েছে ২৬টি। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে নির্মাণ হলেও কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালে। ২৬টি পদের বিপরীতে ছয়জন দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়। বর্তমানে সহকারী পরিচালক, স্টোরকিপার, হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষক, ফার্নিচার প্রশিক্ষক ও একজন কেয়ারটেকার রয়েছেন। বাকি ২০টি শূন্য পদে দেড় যুগেও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। জনবল চেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে আউটসোর্সিং জনবল নিয়ে কিছু কার্যক্রম চালানো হয়। ফারুক হোসেন বলেন, ‘আবাসিক প্রশিক্ষণার্থীদের তিনবেলা খাবারের জন্য দৈনিক ১০০ টাকা হারে বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২০ টাকা কেটে রেখে ৮০ টাকা পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে ৮০ টাকায় একজন মানুষকে তিনবার খাওয়ানো সম্ভব হয় না।এছাড়া লবণাক্ত এলাকার কারণে এখানে রয়েছে সুপেয় পানির সংকটও।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ছেলেমেয়েদের হলেও এখন কেবল ছেলেদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ১০০টি আসনের বিপরীতে ৭০জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।’ জনবলসহ অন্যান্য বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তিনি।এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন, ‘আশাশুনি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য জনবল চেয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিছুদিন আগেও আরেক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে বিদ্যমান সমস্যা দূর হবে।’