মো: ইব্রাহিম খলিল
সাতক্ষীরা আশাশুনিতে আশ্রয়ন প্রকল্পের সরকারি ঘর নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের মহিষকুড় এলাকায় সরকারি ভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বিনামূল্যে জমি সহ ঘর উপহার দেওয়ার নিমিত্ত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে ৫৫ শতক বিলান জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের প্রথম দিকে আশাশুনি উপজেলা প্রশাসন ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম এর তত্বাবধানে ১৮টি ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, কাজের শুরু থেকেই নিন্মমানের সামগ্রী আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এসব নিন্মমানের সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে নিন্মমানের বালু, ঘরের দেয়ালের গাথুনিতে নিন্মমানের ইটের ব্যবহার, বিম ও কলামের ঢালাই কাজে নিন্মমানের বালু ও সিমেন্টের সাথে নিন্মমানের খোয়া সহ পরিত্যক্ত সুরকি। বিম ও কলামের রিংয়ের খাঁচা তৈরিতে ৬ ইঞ্চি দূরত্বে কয়েল রড দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অধিক লাভের আশায় বশীভূত হয়ে বিপরীত মুখি কাজ করেছে। বিম ও কলামের রিংয়ে ৬ ইঞ্চির জায়গায় ৮/ ৯ ইঞ্চি দূরত্বে কয়েল রড দিয়ে খাঁচা তৈরি করে ঢালাই দেওয়া হয়েছে যা নিয়মবহির্ভূত কাজ। এছাড়া ঘরের দেয়ালে ইটের গাথুনিতে নিন্মমানের বালু ও একেবারেই সীমিত পরিসরে সিমেন্ট ব্যবহারের ফলে হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে গাথুনির ইট। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর তৈরিতে তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। এস্টিমেট অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় টেকসই ও মানসম্মত ঘর নির্মান দুরভিসন্ধ হয়ে পড়েছে যা বলাই বাহুল্য। এসব নানাবিধ অনিয়ম এবং দূর্নীতির কারণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ সুশীল সমাজের ব্যক্তি সহ সচেতন মহল। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশাশুনি শ্রীউলা ইউনিয়নের মহেষকুড় এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ৫ম ধাপে ১৮ ঘর তৈরির জন্য প্রতিটি ঘরের বিপরীতে সরকারি প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানে ব্যবহার হচ্ছে নিন্মমানের ইট, খোয়ার সাথে পরিত্যক্ত সুরকি। বিম ও কলামের খাঁচার রিংয়ের দূরত্ব সিডিউল অনুযায়ী ৬ ইঞ্চির জায়গায় ৮/৯ দুরত্বে দেওয়া হচ্ছে যা নিয়মবহির্ভূত। এছাড়া ঘরের দেয়ালে ইটের গাথুনিতে চির ধরেছে যা হাতের টানে উঠে যাচ্ছে। এদিকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান কাজে অনিয়ম করে বরাদ্দের টাকা থেকে অবশিষ্ট টাকা কার পকেটে যাবে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে এখন রীতিমতো ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ বিষয় আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আমিরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানে অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সরেজমিনে তদারকি করছি। ইট, বালু সিমেন্ট ঠিক আছে। বিম ও কলমের রিংয়ের দূরত্ব বেশি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিস্ত্রি বেশি দূরত্ব দিয়েছে, পরবর্তীতে ঠিক করে দেওয়া হবে। এ বিষয় আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আপনার মুখে শুনলাম, আমি সরেজমিনে যাবো এবং কাজের কোন অসংগতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানে অনিয়ম ও দূর্নীতি হওয়ায় সচেতন মহল সহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।