1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী আমিরন নেছা’র গল্প

  • প্রকাশের সময় শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬৬ বার সংবাদটি পাঠিত
এম কামরুজ্জামান 
সাহসী মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নারীকে উন্নয়নের শিখরে পৌছে দিতে পারে। তেমনই এক কঠোর পরিশ্রমী নারী আমিরন নেছা। নিজের ইচ্ছাশক্তি কে কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করে রীতিমত তাক লাগিয়েছেন পুরো এলাকা জুড়ে। সাতক্ষীরার উপকুলীয় শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পার্শ্বেখালি গ্রামের শাহিন ইসলামের স্ত্রী আমিরন নেছা।বিয়ের পরে হতদরিদ্র স্বামীর পরিবারের সংসারের হাল ধরতে হয় আমিরন নেছা কে। স্বামীর একার আয়ে সংসারের সকল খরচ সংকুলান হয় না। যে কারণে শ্বশুর বাড়ি আসার পর থেকে শুরু হয় আমিরুনের দৈনন্দিন মজুরি দেওয়া সহ বাইরের নানা বিধ কাজ। কখনো ঘেরের লোনা পানিতে সারাদিন কাজ করা, কখনো পুরুষ মানুষের সাথে পুকুরের মাটির কাজ করা, কখনো ঘেরের শামুক বেছে দেওয়া। এভাবে বিভিন্ন ধরনের দৈনন্দিন মজুরির কাজ করে সংসারের স্বামীর আয়ের সাথে পারিপারিক আয় বাড়াতে থাকেন তিনি।
পরপর দুইটি পুত্র সন্তান জম্ম দেওয়ায় তাদের ৪ জনের সংসারের খরচ যোগানো খুব কস্ট হয়ে যাচ্ছিলো দুজনের। স্বামী সুন্দরবনের মাছ কাঁকড়া আহরণ করে আয় বাড়ালেও তাতে সংকুলান হচ্ছিল না এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অসুখের সম্মুখিন হতে হয় তাদের। আমিরন নেছা মনে মনে কোন ছোট খাটো কাজ খুজছিলেন। কোন এক সময় তিনি দর্জির কাজ শিখেছিলেন কিন্তু সেলাই মেশিন ও অন্যান্য উপকরণের অভাবে কাজ করার সুযোগ হয়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বারসিকের পরিবেশ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তিনি উক্ত প্রকল্পের সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি আয় বর্ধন কর্মকান্ড হিসেবে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু বিভিন্ন রকমের সিট কাপড়ের সহায়তা পান। এর পর স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে আমিরন নেছা কাজ শুরু করেন।বাড়ীর আশে পাশের প্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের সাথে নিজের দর্জি কাজের কথা বলতে থাকেন এবং দিন দিন তার পরিচিতি শুরু  বাড়তে থাকে। নিজের এলাকার প্রতিবেশিদের ছোটখাট অর্ডার আসতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কাজের পরিধি। এখন আর দিনমজুরী দেওয়া লাতে না। আমিরন নেছা এ বিষয়ে বলেন, “স্বামীর একার আয়ে বর্তমান সময়ে টিকে থাকা কষ্টকর, তাই সংসারের আয় বাড়ানোর জন্য সেলাই মেশিন এর কাজ ও সিটকাপড়ের ব্যবসা করে আয় করছি। বারসিক থেকে সেলাই মেশিন ও সিটকাপড়ের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সহযোগিতা নিয়ে আমার ব্যবসাটাকে ভালোভাবে চালু করতে পারছি। লাভের টাকা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে নিয়মিত সঞ্চয় জমা করি।” সপ্তাহ বা ১৫ দিন পর পর সীটকাপড় বিক্রির টাকা একত্রিত করে পুনরায় মালামাল কিনে এনে ব্যবসাকে সমৃদ্ধি করে চলেছেন তিনি।এলাকার অধিকাংশ নারী ও শিশুদের পোশাক তৈরির জন্য প্রচুর পরিমানে অর্ডার আসে প্রতিদিন। যে কারণে তিনি একার পক্ষে সব কাজ সম্পন্ন করতে পারে না। সে কারণে তার সেলাই কাজে সহযোগিতা করার জন্য আলাদা ভাবে দুইজন কর্মী নিযুক্ত করেছেন। আমিরন নেছার কাজের বিস্তৃতির আরো একটি মূল কারণ হল তার কাছে নানা ধরনের সীটকাপড় রয়েছে। বাজারের দামেই সীট কাপড় পাওয়া যায় সেজন্য লোকজন তার কাছ থেকে সীট কাপড় ক্রয় করেন। তাছাড়া তার হাতের কাজের কোয়ালিটি খুব ভালো এবং নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরী করতে পারায় সর্বদা কাজের ভিড় লেগে থাকে।নিজের বাড়ীতেই সীটকাপড় এর দোকান ও সেলাই মেশিন এর কাজ করে সম্মৃতি পেয়েছেন আমিরন নেছা। তিনি এলাকার আরো ৩/৪ জন নারীকে কাজের সুযোগ করতে পেরেছেন। এলকার ২/৩ তিন জন নারী প্রতিদিন এখানে এসে কাজ করেন। প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন বলে তিনি জানান। লাভের টাকা দিয়ে তিনি একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান কিনেছেন। বর্তমানে তার দোকানে প্রায় ২৫ হাজার টাকার সীটকাপড় রয়েছে। তিনি এখন স্বপ্ন দেখছেন ছোট ছেলেকে লেখাপড়া শিখানো পাশাপাশি তার স্বামীকে একটি ইঞ্জিন চালিত ভ্যান কিনে দেবেন। পরে নিজের দোকান ও বসত ঘরটাকে পাকা করবেন।আর্থিকভাবে সাবলম্বী আমিরন নেছা এলাকার একজন উদ্যোগী নারী হিসেবে সুপরিচিত। তার সফলতার গল্প নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে। যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION