মোমিনুর রহমান, দেবহাটা
দেবহাটায় শালিস চলাকালেই প্রকাশ্য জনসম্মুখে বাবুর আলি গাজী (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ বাদি কে লাঠিপেটা করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। চেয়ারম্যানের লাঠিপেটায় আহত বাবুর আলি গাজী উপজেলার কাজীমহল্যা গ্রামের মৃত মহিম গাজীর ছেলে। একপর্যায়ে শালিস পন্ড হলে গুরুতর আহতবস্থায় বাবুর আলিকে বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। পরে বুকে ব্যাথা দেখা দিলে তাকে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিটের চিহ্ন রয়েছে এবং বুকে তীব্র ব্যাথা এমনকি কথা বলতেও তীব্র কষ্ট অনুভব করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।
বুধবার (৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যেই শালিস বৈঠক চলাকালীন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিবাদি পক্ষের উষ্কানিতে উত্তেজিত হয়ে বাদি বাবুর আলি গাজীকে কাঠের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবর আলি গাজীর পরিবার জানায়, গত ৩/৪ দিন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবর আলী গাজীর বাড়িতে ঢুকে তাকে মারপিট করেন প্রতিবেশি সিরাজুলের ছেলে মাসুম বিল্লাহ (১৯)। সেসময় ভাত খাওয়ারত বাবর আলী ও তার পরিবারের ভাতের প্লেটও লাথি মেরে ফেলে দেন বখাটে মাসুম বিল্লাহ। এনিয়ে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বাবর আলি গাজী। এনিয়ে বুধবার সকাল ১০টায় ইউনিয়ন পরিষদে নিজের অফিসে দু’পক্ষকে নিয়ে শালিসে বসেছিলেন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। একপর্যায়ে বিবাদি বখাটে মাসুমের পক্ষ বাদি বাবর আলির বিরুদ্ধে উষ্কানিমুলোক উপস্থাপন করতেই উত্তেজিত হয়ে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। জনসম্মুখে অফিসের টেবিলের পাশ থেকে কাঠের লাঠি বের করেই বাদি বাবর আলিকে বেধড়ক মারপিট শুরু করেন তিনি। চেয়ারম্যানের মারপিটে বৃদ্ধ বাবর আলি মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে পন্ড হয়ে যায় শালিস বৈঠক। তড়িঘড়ি করে অসুস্থ বাবর আলিকে ভ্যানে তুলে বাড়িতে নেন তার স্বজনরা। পরে বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হওয়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাবর আলিকে মারপিটের সত্যতা স্বীকার করে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শালিস নিয়ে বাদি বাবর আলী বাজে মন্তব্য করেছিল, তাই তাকে লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে। তার বুকে-পিঠে নয়, হাত লক্ষ্য করে কয়েকটি লাঠির বাড়ি দিয়েছিলাম।’
দেবহাটা থানার ওসি সেখ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘শালিসে মারপিটের বিষয়টি শুনেছি, তবে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রাম্য আদালতে বিচার চাইতে এসে সেবাপ্রার্থী মারপিটের শিকার হলে তিনি আইনের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা হারাবেন। তাছাড়া শালিস বৈঠক চলাকালে জনপ্রতিনিধি কোনভাবেই আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’