মোঃ ইব্রাহিম খলিল,সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা আশাশুনি ইট ভাটায় সংবাদ সংগ্রহকালে এক সাংবাদিককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার বড়দলে নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইট ভাটা। আর এসব ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কাঠ ও টায়ারের গুড়া। এর ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। সে কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। অবৈধভাবে ইট ভাটায় কাঠ ও টায়ারের গুড়া পোড়ানো রোধে প্রশাসনের তদারকির অভাবকে দুষছেন জলবায়ু পরিষদের নেতৃবৃন্দরা। সাতক্ষীরায় ইট প্রস্তুতকারি মালিক সমিতির তথ্যমতে, জেলায় ১শত ৪০টি ইট ভাটা আছে। এদিকে গত ০৪ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১১ টার দিকে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক যশোর বার্তা’র আশাশুনি প্রতিনিধি সাংবাদিক ইয়াসিন আরাফাত পিন্টু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়ে দেখেন আশাশুনি বড়দলে এ,কে,এস ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাদেরের ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে ফলজ কাঠ ও টায়ারের গুঁড়া। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অনুমোদন ছাড়াই স্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধের মাটি কেটে গভীর খনন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভাটা ম্যানেজার হরেন শীলের কাছে জানতে চাইলে, তিনি প্রতিবেদকের কোন কথার জবাব না দিয়ে তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার একপর্যায় তাকে মারতে উদ্যত হন। ভাটা ম্যানেজার হরেন শীল আস্ফলন করে বলেন, তুই যদি কোন পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট করিস তাহলে তোর সাংবাদিকতার স্বাদ মিটিয়ে দেবো বলে প্রকাশ্যে প্রাননাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক ইয়াসিন আরাফাত পিন্টু জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশাশুনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন যাহার জিডি নং-১২৬। প্রসঙ্গত, আশাশুনির বড়দলে কপোতাক্ষ নদীর ধারে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে এ,কে,এস ব্রিকস নামীয় অবৈধ ইটভাটা। ইট ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ এর কোন আইনই এসব ভাটাগুলোতে মানা হচ্ছেনা। এসব ইট ভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে নিষিদ্ধ কাঠ। ভাটা ঝিকঝাক কিলন পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ম থাকলেও এ,কে,এস ব্রিকস ভাটা পুরনো ফিড পদ্ধতির ফলে কালো ধোয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। তোয়াক্কা করছে না হাইকোর্টের নির্দেশনা। এ,কে,এস ব্রিকসের মালিক আব্দুল কাদের হয়েছেন লেবার শ্রমিক থেকে ভাটা মালিক, হয়ে উঠেছেন ভূমি দস্যু কালো টাকার মালিক। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায় আশাশুনির বড়দলের এ,কে,এস ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাদের অতীতে ইটভাটার একজন লেবার শ্রমিক ছিলেন। অনিবন্ধিত অনুমোদনহীন ইটভাটা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই প্রসঙ্গে ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। পরিবেশ বিপন্নের জন্য অনেকাংশে দায়ী অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ইটভাটা। আর তদারকির জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ি করছেন জলবায়ু পরিষদের কর্মকর্তারা। এ বিষয় জেলা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাধব দত্ত বলেন, সাতক্ষীরায় দেড় শতাধিক ভাটা রয়েছে এর মধ্যে কিছু বৈধ এবং কিছু অবৈধ। তিনি বলেন, ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা খুবই ভয়ানক বিষয়। আমরা পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। তার মধ্যে ভাটায় যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, সেটি রোধে প্রশাসন নির্বিকার। পরিবেশ যদি বজায় রাখা না যায়, তবে সবচেয়ে ক্ষতি হবে মানুষের। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমাদের আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প থাকবেনা। এ বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, লোকবল সংকটের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। তিনি বলেন, আমরা উদ্যোগ নিবো তবে আমাদের লোকবল খুবই কম এবং ট্রান্সপোর্ট নেই। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটও খুবই কম। তারপরেও আমরা ভাটা মালিকদের নোটিশ করেছি। এ,কে,এস ব্রিকস টা নোট করে রাখলাম, ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। আশাশুনি ইউএনওকে এসব ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে।