⬛ নিয়মিত থাকেনা অফিসে
⬛ ক্ষুব্ধ সেবা গ্রহীতারা
⬛ ঘুষ ছাড়া হয়না কাজ
⬛ দূর্নীতির দায়ে বদলি
⬛ গড়েছেন অঢেল সম্পদ
মোঃ ইব্রাহিম খলিল,সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় নায়েব রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত সময় কাটানোর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও নায়েব রফিকুল ইসলাম সেবা গ্রহীতাদেরকে নিয়মিত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছেন। নিয়মিত অফিস ফাঁকির বিষয়টি অনেকেই খারাপ দৃষ্টিতে দেখছেন। নিয়ম অনুযায়ী দেশের সব সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেবা গ্রহীতাদের সেবা দেওয়া একজন সরকারি চাকুরিজীবীর নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিধি মোতাবেক একজন সরকারি চাকুরিজীবি অফিস ফাঁকি দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক অফিসের সময়সূচি নির্ধারণ করা হলেও নির্দেশনা অমান্য করছেন সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী অনেক সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারী। সরকারি ছুটি ব্যাতিত প্রতিদিন সকাল ৯ টায় কর্মস্থলে এসে অফিস করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিয়ম অমান্য করে অনেকেই আসেন দেরিতে। দেরিতে এসে অনেক কর্মকর্তা বিকাল ৫টার আগেই বাসায় ফিরে যান। আবার অনেকে দুপুরের খাবার খেতে যেয়ে আর অফিসে ফেরেন না। এছাড়া অনেক কর্মকর্তা আছে যারা দুপুর ৩ টা এমনকি ৪ টার সময় বাসায় চলে যায়। বিধিমালা অনুযায়ী ৮ ঘন্টা অফিস করার নিয়ম থাকা সত্ত্বেও অনেকে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা অফিস করেন। এরপর অফিস ফাঁকি দিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ান। এছাড়া অনেক কর্মকর্তা আছে যারা নিয়মিত অফিস না করেও মাস গেলে সময়মতো বেতন ভাতা উত্তোলন করে থাকেন। এর ব্যতিক্রমী চিন্তা ধারার বাইরের মানুষ নন নায়েব রফিকুল ইসলাম। তিনি সরকারি চাকুরিজীবী হওয়া সত্বেও নিয়মিত অফিস করেনা। অভিযোগ আছে, প্রায়শই রফিকুল ইসলাম তার কর্মস্থলে না যেয়ে অফিস ফাঁকি মেরে বাইক যোগে দাপিয়ে বেড়ান সাতক্ষীরা শহরের আনাচে কানাচে। বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর দুপুর ১.২০ মিনিট সময় নায়েব রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সামনে দিয়ে বাইক যোগে শহরে ঘুরতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ তুলে বলেন, নায়েব রফিকুল ইসলাম সরকারি চাকুরিজীবী হয়েও তিনি নির্দেশনা অমান্য করে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাইক যোগে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। বর্তমানে রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত রয়েছেন। নায়েব রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ংকর অপরাধ, অপকর্ম ও সীমাহীন দূর্নীতি। জমির নামপত্তন, হাল নাগাদ খাজনা, দাখিলা কর্তন, মিউটেশনে ভুলভ্রান্তির সংশোধন, ভিপি সম্পত্তি, দেওয়ানি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, ১৪৪ ধারার পিটিশন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, এলএসডি মামলা সহ জমি সংক্রান্ত নানাবিধ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে। কিন্তু রফিকুল ইসলাম আইনের তোয়াক্কা না করেই সব কাজের ক্ষেত্রে করেন সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্য। জমাখারিজ বা নামজারির রেটিংটা আবার ভিন্ন ধাচের কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১১ শত ৪৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও নিয়ম না মেনে আবেদনকারীকে দালালের হাত ধরে ঘুষ দিতে হয় কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কেউ পর্চা নিতে আসলে নায়েব রফিকুল ইসলাম কে পর্চা প্রতি ৩শ থেকে শুরু করে ৫শ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া জমির রেকর্ডে ত্রুটি বা অর্পিত সম্পত্তি বা সরকারী খাস জমি হলে জমির বর্তমান বাজার দরে শতাংশ প্রতি লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিলেই নামজারী পেয়ে যায় ভুমিদস্যুরা। আর এভাবেই সরকারি খাল বিল, নদী-নালা ডোবা বা পতিত জমি চলে যায় ভুমিদস্যুদের দখলে। রফিকুল ইসলাম কে ঘুষ প্রদান করলে দ্রুত কাজ করে দেন, আর ঘুষ প্রদান না করলে হতে হয় নানা ভাবে হয়রানির শিকার হয়। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, নায়েব রফিকুলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে আছে। ভূমি সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অনুলিপি দেয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। অভিযোগকারী ভুক্তভোগীরা দুর্নীতিবাজ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এর দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাবসায়ী জানান, নায়েব রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্ব কালীন সময় আমার ক্রয়সুত্রে মালিকানা প্রাপ্ত ২শতাংশ জমির নামজারি করার নিমিত্তে ভূমি অফিসে গেলে নায়েব রফিকুল আমাকে কাগজপত্রে সমস্যার কথা বলে। এসময় তিনি বলেন ৩০ হাজার টাকা দিলে কাগজ ঠিক করার পাশাপাশি নামজারি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এর আগে, নায়েব রফিকুল ইসলাম পূর্বের কর্মস্থলে থাকাকালীন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুজিব বর্ষের ঘর দেওয়ার নামে এক বিধবা মহিলার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে উপায়ান্ত না পেয়ে বিধবা মহিলা নায়েব রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের এক মাসের মাথায় দুর্নীতির দায়ে শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বদলি করা হয়। নায়েব রফিকুল ইসলাম ভূমি অফিসে চাকরির সুবাদে গড়েছেন অঢেল সম্পদ, ব্যাংক ব্যালেন্স বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন গাড়ি। একজন ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তার বেতন-ভাতা সর্বসাকুল্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। রফিকুল ইসলাম একজন সরকারি বেতন ভুক্ত কর্মচারী হয়ে অঢেল সম্পদ, ব্যাংক ব্যালেন্স, নামে বেনামে সম্পদের পাহাড়, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, রাজকীয় জীবন যাপন রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া সব মিলিয়ে অতীতের যে কোন রুপকথার কল্পকাহিনীকে হার মানায়। কোনভাবেই সরকারি বেতন ভাতার সাথে তার চলাচল এবং ব্যায়ভারের সাথে কোন প্রকার মিল নেই। নায়েব রফিকুলের বর্তমান জীবন যাপন এবং তার অর্জিত সম্পদ বলে দেয় সে একজন বড় ধরনের দূর্নীতিবাজ। যদিও এর আগে নায়েব রফিকুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এদিকে নায়েব রফিকুল ইসলাম কর্তৃক অফিস ফাঁকি দিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ সেবা গ্রহীতারা। এঘটনায় ভুক্তভোগীরা নায়েব রফিকুল ইসলামের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয় নায়েব রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি যদি দুই একদিন অফিসে না যেয়ে থাকি তা হলে নিশ্চয় ছুটি নিয়েছি। অফিস টাইমে ছুটি ছাড়া আমি কখনো মটর সাইকেল যোগে বাইরে যায়নি। এ বিষয় শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, আপনার কাছ থেকে মৌখিক ভাবে শুনলাম। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।