খুলনা প্রতিনিধি
দিন যত যাচ্ছে, ততই যেন খুলনার ডিমের বাজার বেশামাল হয়ে উঠছে। ভারত থেকে দেশে ডিম আমদানি করা হলেও খুলনায় তার কোন প্রভাব পড়েনি। বরং গত একসপ্তাহে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সরকার দেশের বাজারে ডিমের ঘাটতি মেটাতে গত ৫ দিন আগে এ পণ্যটি আমদানির ঘোষণা দেয়। তবে ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম দেশে আমদানি করা হলেও তার একটিও খুলনায় আসেনি। খুলনায় পাইকারীতে ১০০ ডিম ১২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরায় প্রতিপিচ ডিম ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও সরকার প্রতিপিচ ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তারও কোন প্রতিফলন নেই বাজারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরসহ ৯টি থানায় প্রতিদিন ৪ লাখ পিচ ডিমের প্রয়োজন হয়। চাহিদা অনুযায়ী খুলনার বাজারে যোগান মেলে ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার পিচের মতো। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ চাহিদা মেটাতে বাগেরহাট ও রাজশাহী থেকে ডিম আনতে হয়। পোল্ট্রি মালিক সমিতির মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, আমদের শহরে বাজার ব্যবস্থাপনা নেই। বন্যার কারণে খুলনার পাইগাছা উপজেলার ৬০ টি মুরগীর ফার্ম পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিদিন খুলনাসহ ৯টি উপজেলায় ৪ লাখ ডিমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ডিমের উৎপাদন কম। খুলনা বিভাগের বাইরে থেকে সোয়া ২ লাখের মতো ডিম বাইরে থেকে আনতে হয়।ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য দেশী ও বিদেশী কয়েকটি কোম্পানীকে দায়ী করে তিনি বলেন, এ সকল কোম্পানি দেশে বাচ্চা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারগুলোতে ডিমের সরবরাহ করে থাকে। তারা ইচ্ছামতো ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। তারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন যেটি আমাদের মাঠ পর্যায়ের খামারীরা পান না। তারা স্থানীয় খামারীদের সাথে একটা প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। ডিমের মূল্য কমানোর জন্য তিনি খাবার ও বাচ্চার দাম কমানোর তাগিদ দিয়ে ডিম উৎপাদনকারী ফার্মের সংখ্যা বাড়লে চাহিদা অনুযায়ী সহবরাহ বাড়বে এবং এ পণ্যের দাম কমবে বলে মনে করেন তিনি।নগরীর ডালমিল এলাকার বাসিন্দা ওসমান গণি বলেন, ভারত থেকে ডিম আমদানি করে লাভ কী? খুচরা দোকানগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাদামি রঙের ডিম ১৫ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।একই এলাকার ডিম ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, সিন্ডিকেট ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজার চড়া। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্ডিকেট চক্র দাম নির্ধারণ করে, যাতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের ডিম কিনে আনা এবং বিক্রি করার মূল্য খতিয়ে দেখতে হবে এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমানতালে অভিযান পরিচালনা করতে হবে বলে এ ব্যবসায়ী মনে করেন। অপরদিকে পাইকগাছা উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার খামারী প্রতিষ রায় বলেন, বেশিরভাগ ডিম খুলনায় সরবরাহ করা হয় এখান থেকে। মাঝে বন্যার কারণে এ এলাকার বেশিরভাগ ডিম উৎপাদনকারী ফার্ম পানিতে তলিয়ে যায়। মাচা তৈরি করে সেখানে মুরগী রাখা হয়েছে। খাবারের মূল্য প্রতিবস্তায় ১ মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া ১ দিনের মুরগীর বাচ্চ ৯৫-১০০টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। যা ডিমের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে তিনি অভিযোগ করেন।