কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য একটি পরীক্ষাগারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের ছয়টি জেলাকে। এ কারণে নমুনার স্তূপ জমে যাচ্ছে সেখানে। প্রতিদিন পাঁচ বা ছয় দিন আগে সংগ্রহ করা নমুনার পরীক্ষা হচ্ছে।চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে এই হাসপাতালে। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ নমুনা পরীক্ষা সম্ভব। গড়ে হচ্ছে ১৯০টি করে।বিআইটিআইডি সূত্র জানায়, ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সেখানকার পরীক্ষাগারে গত শুক্রবার পর্যন্ত ২ হাজার ২৫২টি নমুনার পরীক্ষা হয়। এতে পজিটিভ পাওয়া যায় ৮২টি। শতকরা হিসাবে যা ৩ দশমিক ৬৪।ওই সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবারও হাসপাতালটিতে ১ হাজার ১০০ জনের পুরোনো নমুনা সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার একটি পরিবারের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২০ এপ্রিল। নোয়াখালীর চাটখিলের এক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয় এক সপ্তাহ আগে। এখনো তাঁরা কেউ ফল পাননি। এ ছাড়া প্রতিদিন আরও দুই শতাধিক নতুন নমুনা হাসপাতালে আসছে।বিআইটিআইডি হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরীক্ষাগারের প্রধান শাকিল আহমেদ বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের পর আমরা ৫ থেকে ১০ শতাংশ নষ্ট পাচ্ছি। চট্টগ্রাম নগরের বাইরে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাঁরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন কি না, আমরা দেখতে পাচ্ছি না। নমুনা সংগ্রহের পর পরিবহনের সময় নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, সেটাও আমরা দেখছি না।’
শাকিল আহমেদ বলেন, প্রতিটি উপজেলা থেকে প্রতিদিন ২০টি করে নমুনা পাঠানোর কথা। কিন্তু সন্দেহভাজন রোগীর পরিবর্তে হাসপাতালের আয়া-বুয়া বা ভীতসন্ত্রস্ত লোকজনের নমুনা পাঠানো হচ্ছে, যা উচিত নয়। যাঁদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাঁদের চিহ্নিত করে যথাযথ নিয়ম অনুসরণের পর নমুনা পাঠানো হলে প্রকৃত করোনা রোগী শনাক্ত করা যাবে।
ফলাফল নিয়ে সন্দেহ
করোনা মোকাবিলায় স্বাচিপ গঠিত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজ উদ্দিন মনে করেন, পাঁচ বা সাত দিন আগের নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে কম।মিনহাজ উদ্দিন উদাহরণ দিয়ে বলেন, সাতকানিয়ার এক বৃদ্ধ ৯ এপ্রিল করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যান। ১৩ এপ্রিল তাঁর পরিবারের পাঁচ স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৪ এপ্রিল পরীক্ষায় সবার পজিটিভ ধরা পড়ে। তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহের পর দ্রুত পরীক্ষা করা হলে প্রকৃত ফলাফল আসে। তাঁর ভাষ্য, ‘এই ফলাফলে আমরা সন্দিহান। রোগী শনাক্তের হার চট্টগ্রাম অঞ্চলে এত কম হবে কেন?’বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ফয়সল ইকবাল চৌধুরীও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলাফলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একটি পরীক্ষাগারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রকৃত ফলাফল উঠে আসছে না। এ জন্য পরীক্ষাগার বাড়াতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি উপেক্ষা করলে বিপদ নেমে আসবেএকাধিক চিকিৎসক জানান, স্যালাইনের থলেতে নমুনা সংগ্রহ করে আনা হচ্ছে। এতে ভাইরাস জীবিত থাকছে কি না প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী ‘ভাইরাল মিডিয়া’য় (ভাইরাস জীবিত রাখার জন্য একধরনের ছোট কনটেইনার) করে নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহন করে আনতে হবে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চন্দন কুমার রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ম মেনে করা হলে পুরোনো সংগ্রহ করা নমুনার পরীক্ষার ফলাফলেও হেরফের হবে না। সবকিছু করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সেটা মানার জন্য দরকার কঠোর নজরদারি।তবে বিআইটিআইডি হাসপাতালের পরীক্ষাগারের প্রধান শাকিল আহমেদ তাঁর পরীক্ষা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে নমুনা জটের সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নমুনা সংরক্ষণ করছি। মাঠপর্যায়ে সংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আগে দূর করতে হবে।