লকডাউনের মধ্যেও ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে সিলেটে যায় আন্তঃনগর একটি ট্রেন। শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে অন্তত ৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি সিলেটে পৌঁছায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।রেলওয়েতে কর্মরত লোকজন ও নিরাপত্তারক্ষীদের সহায়তায় আন্তঃনগর ট্রেনের দুটি কোচে করে ওইসব যাত্রীদের বহন করা হয় বলে জানা গেছে।তবে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘বেতন-ভাতা নিয়ে ঢাকা থেকে রেলওয়ের পাঁচজন লোক এসেছে। আর ট্রেনটি প্রতি স্টেশনে থেমে থেমে বেতন পৌঁছে দেওয়ায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনসহ ২৪ জন সিলেটে এসে পৌঁছেছে। অন্য কোনো লোকজন ট্রেনে আসেনি।’এদিকে অভিযোগ উঠেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দুটি কোচে করে ঢাকা থেকে যাত্রী তোলা হয়। বেতনের টাকা আনার অজুহাতে তাদের সিলেট নিয়ে আসা হয়।এ ব্যাপারে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এটি কোনো সম্পূর্ণ ট্রেন ছিল না, শুধু ট্রেনের দুইটি বগি ইঞ্জিনের সাথে ছিল। এখানে শুধু রেলের স্টাফরাই ছিল বাইরের লোক ছিল না। ট্রেনটিতে করে আমাদের স্টাফদের বেতন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভোলাগঞ্জে রেলের যে পাথর মহল আছে সেখানে কর্মরত কিছু নিরাপত্তা কর্মী ওই ট্রেনে করে গিয়েছে, মাঝপথে তারা ট্রেনটি উঠেছিল তাই লোক বেশী মনে হয়েছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এটা রেলের নিয়মিত কার্যক্রম, ট্রেনে করে রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও স্টাফদের বেতন বহন করা হচ্ছিল। ট্রেনে থাকা টাকার নিরাপত্তা দিতে কিছু নিরাপত্তাকর্মী নেয়া হয়। ওখানে সাধারণ যাত্রী ছিল না। তবুও আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, ইতোমধ্যে সিলেট স্টেশনের এক নিরাপত্তাকর্মীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনিয়ম কিছু হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রেন গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেটে পৌঁছেছে। এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা–সমালোচনা।করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সিলেট জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। লকডাউন অবস্থায় সিলেটে প্রবেশ এবং সিলেট থেকে বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে রেল চলাচলও বন্ধ আছে। এই অবস্থায় প্রায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে দুটি বগিসহ আন্তনগর ট্রেন গতকাল বিকেলে সিলেট রেলস্টেশনে পৌঁছায়। লকডাউনের মধ্যে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।তবে সিলেট রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে রেলওয়ের কর্মীদের বেতনের টাকা নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা সিলেটে এসেছেন।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে দুটি বগি নিয়ে সিলেট রেলস্টেশনে একটি ট্রেন এসে থামে। এ সময় ট্রেনের দুটি বগি থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রী স্টেশনে নামেন। যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন রেলওয়ের কর্মী থাকলেও অধিকাংশ সাধারণ যাত্রী ছিলেন। তাঁরা ট্রেনটি স্টেশনে থামার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মালামাল নিয়ে নেমে দ্রুত স্টেশন এলাকা ত্যাগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ সময় কয়েকজন যাত্রীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা ঢাকা থেকে এসেছেন বলে জানান। তাঁদের মধ্যে রেলওয়ের কর্মী ছাড়াও সাধারণ যাত্রী ছিলেন।সিলেটে লকডাউন অবস্থায় যাত্রী নিয়ে ট্রেন আসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর মো. এরশাদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘লকডাউন অবস্থায় ট্রেন আসছে—এটি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়নি। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন যে রেলের কর্মচারীদের বেতন নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা সিলেট এসেছেন। তাঁদের হিসাবে চালক, নিরাপত্তকর্মীসহ মোট ২৪ জন ট্রেনে করে সিলেট আসার কথা। কিন্তু রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখে প্রায় ৫৪ জন যাত্রীর হিসাব পেয়েছি। এ সংখ্যা বেশিও হতে পারে। এ ব্যাপারে স্টেশন ব্যবস্থাপককে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’এই কর্মকর্তা আজ রোববার বলেন, ‘যাঁরা ঢাকা থেকে সিলেটে এসেছেন, তাঁরাই ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েছেন। এতে অবৈধভাবে কিছু লেনদেন হতে পারে। ঢাকা থেকে ওই ট্রেনে আসা রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম, পদবি আমরা সংগ্রহ করেছি। গতকাল রাতেই ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।’
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা থেকে রেলের কর্মীদের বেতন দিতে কয়েকজন সিলেটে এসেছিলেন। পথে ট্রেন প্রতিটি স্টেশনে থেমে থেমে বেতন পৌঁছে দিয়ে এসেছে। আজ সকালে ট্রেনটি সিলেট থেকে ওই ২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেছে।’