কণ্ঠ ডেস্কঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে একটি জানাজা হাজার হাজার মানুষের জমায়েত খুব ক্ষতিকর হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, এতে ঝুঁকি তৈরি হলো। অনেক লোক আক্রান্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জানাজায় লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। জানাজায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা অনেকেই বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই প্রশাসনের নজরদারি জরুরি।
আজ রোববার দুপুরে অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
Lifebuoy Soap
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির যোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হয়। এই ঘটনায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। কমিটিকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যাহার করা দুজন হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল)মাসুদ রানা ও সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক( মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার (অপরাধ) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন (প্রশাসন)।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নুরুল হক নিজেও প্রথম আলোকে সেকথা জানিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার বেড়তলা জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ১৮ এপ্রিল সকাল ১০টায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল মাওলানা আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। মানুষের ভিড় মাদ্রাসার সীমানা ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গিয়ে ঠেকে। আনসারী শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মার্কাসপাড়ায় নিজের বাসায় মারা যান। তিনি ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে হেরে যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে মসজিদগুলোয় নামাজ পড়া এবং কবরস্থানে যেতেই বারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই অবস্থায় জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি সবাইকে হতবাক করে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়। সবাই এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করেন।
গতকাল যে স্থানে যোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজা হয়েছে, তার আশপাশের সরাইল ও সদর উপজেলার আটটি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দাকে গতকাল সন্ধ্যায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, শান্তিনগর, শীতাহরণ ও বড়ইবাড়ি, আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর ও খড়িয়ালা এবং সদর উপজেলার মলীহাতা ও বুধল গ্রাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ১০টায় বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা গ্রামের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা মাঠ ও পাশের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই কিলোমিটারে বিশাল জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। হাফেজ যোবায়ের আহমদ আনসারী ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। করোনা প্রতিরোধে ১১ এপ্রিল থেকে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় লকডাউন চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, লকডাউন ঘোষণা উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন। সকাল আটটা থেকে লোকজন বেড়তলা মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হতে থাকে। পুলিশ লোকসমাগম ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যোবায়ের আহমদ আনসারী শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাড়িতে মারা যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ও মুঠোফোনে প্রচার হতে থাকে শনিবার সকাল ১০টায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেওয়ার জেলার কয়েক শ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অনুসারিরা দল-মতনির্বিশেষে সংগঠিত হতে থাকে। এ বিষয়টি পুলিশ আমলে নেননি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, জেলা শহরের মোটরসাইকেলে করে এজনের বেশি চড়লে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করেন। কিন্তু গতকাল সকালে বিভিন্ন জেলার মানুষ ট্রাক,বাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক্টর, রিকশায় করে এখানে এসে জানাজায় অংশ নিয়েছে। সরাইল বিশ্বরোড হাইওয়ে থানার পুলিশ, আশুগঞ্জ টোল প্লাজা অতিক্রম করেই সেখানে যেতে হয়।