কণ্ঠ ডেস্ক
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বরিশালের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন নগরীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে অনেকটা অচল হয়ে পরেছে বরিশাল নগরী।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ এলাকায় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এরমধ্যে সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজসহ আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এবং চৌমাথা এলাকায় বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্নস্থানে বর্বর হামলা হয়েছে। আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই। আমরা সরকারের কাছে অধিকার চাইতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমরা যা পেয়েছি তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশা করেনি। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনে হামলা করে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি এসএম মাকসুদ আলম জানান, শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ যানাবাহন যেতে দেওয়া হচ্ছে। ওসি আরো জানান, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছে। সরকারি যানমাল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের আহবানে অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করেছে নগরীর বেসরকারি অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, ইনফ্রা পলিটেকনিকসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিএম কলেজের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক হুজাইফা রহমান বলেন, বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বিএম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা এসএম সাউদ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে কতিপয় শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শ্লোগান দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করেছে।
অপরদিকে বেলা ১১টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর আমতলা এলাকায় গিয়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কোটা সংস্কারের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে ব্যাচ থেকে হামলাকারী শিক্ষার্থীদের বহিস্কারের দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের হামলা ॥ বরিশালে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে কোটা বহাল রাখার দাবিতে ছাত্রলীগ কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শেষে কলেজের অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও ইংরেজীসহ কয়েকটি বিভাগে গিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। ছাত্রলীগের হামলায় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে নগরীর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে সড়ক অবরোধ করেন। এরপর তারা সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অভ্যন্তরে মিছিল সহকারে প্রবেশ করে হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া করেন। পরে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা পুরো ক্যাম্পাস দখলে নিয়েছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা ক্যাম্পাসে রয়েছি। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি।