কণ্ঠ ডেস্ক
ফাঁকা বিলের মধ্যে ক্ষেত। তার মধ্যে বাঁশের মাচায় ঝুলছে থোকায় থোকায় আঙুর। ঝুলে থাকা সবুজ রঙের এই আঙুর দূর থেকে পথচারীদের নজর কাড়ছে।যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সাহারাত আলী (৬৪) মিষ্টি জাতের এই আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন। শখের বসে চাষ শুরু করার মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি ছয় মণ আঙুর বিক্রি করেছেন। এখনো তার ক্ষেতে এক থেকে দেড় মণ আঙুর রয়েছে।সাহারাত পরীক্ষামূলকভাবে ছয় শতক জমিতে আঙুর চাষ করে সফল হন। ইউটিউব দেখে এক বছর ধরে তিনি আঙুর চাষ করছেন। শখের বসে আঙুর চাষ করে সফল হওয়ায় এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়ে ১৭ শতাংশ জমি প্রস্তুত করেছেন। মিষ্টি এসব আঙুরের চারা বিক্রি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন তার আঙুরক্ষেত দেখতে ও চারা কিনতে। বর্তমানে তার সংগ্রহে আছে ভারতীয় চয়ন জাতের প্রায় দেড়শ চারা। আরও দেড়শ চারা তিনি তৈরি করছেন।মনিরামপুর উপজেলার যশোর-চাকলা সড়কের পাশে মশ্বিমনগর ইউনিয়নের কাঁঠালতলা বাজার। বাজার এলাকায় যশোর-চাকলা সড়ক থেকে বেরিয়ে একটি সরু আঁকাবাঁকা পাকা সড়ক পশ্চিম দিকে চলে গেছে। সড়কটি ধরে এক কিলোমিটার এগোলে ময়নার বিল।সম্প্রতি ময়নার বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের ফসল ঘরে তোলা হয়েছে। বিলটি এখন ফাঁকা। বিলের মধ্যে মরুদ্যানের মতো একটি বাগান। খেতের চারপাশ গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা। পুরো ক্ষেতজুড়ে উঁচু করে বাঁশের বড় মাচা তৈরি করা হয়েছে। মাচার চারপাশ ও ওপরে নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মাচার নিচের দিকে সবুজ রঙের কাঁচা-পাকা আঙুর থোকায় থোকায় ঝুলছে। মাচার নিচে মাটিতে পেয়ারা এবং কমলা গাছ। কিছুটা ব্যবধানে মরিচ, পুঁইশাক, মানকচু ও মেটেআলু গাছ। ক্ষেতে আঙুরের পরিচর্যার কাজ করছিলেন সাহারাত নিজেই।কৃষি উদ্যোক্তা সাহারাত জানান, তিনি লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আঙুর চাষের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। একবছর আগে তিনি ইউটিউবে আঙুর চাষ দেখেন। এরপর তিনি আঙুর চাষে আগ্রহী হন। আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য না জেনে শুধু ইউটিউব দেখে শখের বসে আঙুর চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গতবছর বৈশাখ মাসে ঝিনাইদহের মহেশপুরের একটি নার্সারি থেকে ৪০০ টাকা করে ২০টি ভারতীয় মিষ্টি জাতের চারা এনে ছয় শতক জমিতে রোপণ করেন। জমি প্রস্তুত, চারা কেনা এবং মাচা তৈরি করতে সব মিলিয়ে তার ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। চারা রোপণের আট মাসের মাথায় ফলন আসে। পাঁচ কেজির মতো আঙুর ধরে এবং ভালোই মিষ্টি হয়। এক বছরের মাথায় এখন ওই গাছ থেকে তিনি প্রায় ছয় মণ আঙুর পেয়েছেন। গাছে আরও এক থেকে দেড় মণের মতো আঙুর রয়েছে। নতুন করে আবার গাছে আঙুর ধরছে।তিনি বলেন, স্থানীয় মনিরামপুর, কাঁঠালতলা, ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কলারোয়া এবং খোর্দ বাজারে তিনি আঙুর বিক্রি করেন। এ ছাড়া ফেসবুক ও ইউটিউবে খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আঙুর কিনতে চান। তাদের কুরিয়ারে করে আঙুর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতি কেজি আঙুর তিনি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।তিনি আরও বলেন, এই আঙুর খেতে মিষ্টি। তবে আঙুরে এক থেকে তিনটি করে বিচি আছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, গাছে আঙুর ধরার পর একটা ওষুধ স্প্রে করলে এই বিচি আর হবে না। প্রথমবার তাই বুঝতে পারিনি। এরপর থেকে আঙুরে যাতে বিচি না হয় সে জন্য ওষুধ স্প্রে করব। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, সাহারাত আলীর আঙুর খুবই মিষ্টি ও রসাল। তিনি ছয় শতক জমিতে আঙুর চাষ করেছেন। আরও ১৭ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। যদি তিনি এখানে সফল হন, তাহলে কৃষকদের নিয়ে আঙুর চাষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।