ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ হরিনাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের প্রবাসী জিয়াউর রহমানের স্ত্রীকে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।আর এমন অমানবিক নিষ্ঠুর কাজটি হয়েছে প্রবাসী জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই ঠান্ডুর নেতৃত্বে। এছাড়া মারপিটের পরে প্রবাসীর ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর নগদ টাকা ও চার ভারি সোনার গহনা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এরপর বিষয়টি ধাপাচাপা দিতে বিভিন্ন হুমকি,ধামকি চাপ প্রয়োগ করছে ভুক্তভোগী পরিবারটির উপর। এবিষয়ে থানা পুলিশ কেস মামলা করলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।বর্তমান প্রবাসী জিয়াউর রহমান নিজের বসতভিটা ছেড়ে তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কোন সময় শশুড়বাড়ি কোন সময় থানা কোর্টে কিংবা পথে পথে ঘুরছে। নিজের ঘরবাড়িতে উঠতে না পেরে পরিবারটি ব্যাপক হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গত ০৬/০৭/২০২৪/ তারিখে হরিণাকুন্ডু থানার সহায়তায় জিয়াউর রহমান তার বড় ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে যাবার চেষ্টা করলেও তাদেরকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।এসময় বাড়িতে থাকা আশা সেখ, মিজানুর সেখ জিয়াউরের উপর উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে নিজের জীবনের নিরাপত্তার অভাবের কারণে বাড়ির উঠানে কান্নাকাটি করে আবার ফেরত চলে যায় জিয়াউর। এঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী ভুক্তভোগী জনি খাতুন জানান,দীর্ঘদিন স্বামী বিদেশে ছিল আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে শশুড় বাড়িতে বসবাস করি। পৃথক সংসার ও ছেলেমেয়ে ছোট থাকার কারণে আমার দরকারি কাজ নিজেকে করতে হয়।
এসব বিষয়ে আমি স্বামীর সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখি। কিন্তু আমার দেবর ঠান্ডু আমার কাছে টাকা ধার চায় ও খারাপ প্রস্তাব দেয়। আমি এসব বিষয়ে রাজি না হওয়ার কারণে আমার স্বামী বিদেশ থেকে বাড়ি আসার দু’দিন আগে গত ০৮/০৬/২০২৪ তারিখে আমার ঘরে বাইরের লোক আছে বলে জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে আমার ছেলেমেয়ের সামনে অমানবিক নির্যাতন করে। কিন্ত আমার ঘরে বাইরের কোন লোক পায়নি।এরপর ঘর থেকে টাকা পয়সা ও সোনাদানা নিয়ে যায় ঠান্ডু। পরে আমি ৯৯৯ কল করে পুলিশের সহায়তায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়।এরপরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ঠান্ডু লোক দিয়ে হুমকি দেয়।পরবর্তীতে আমি বাবার বাড়ি মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি।ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি কেঁদে ওঠেন বলেন, একজন মহিলাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে নির্যাতন করেছে তা প্রকাশ করা কঠিন আমি ওদের উপযুক্ত বিচার চাই। স্ত্রীকে মারধর ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর লুটপাটের বিষয়ে প্রবাসী জিয়াউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,প্রায় পাঁচ বছর ধরে সৌদি প্রবাসে অনেক কষ্ট করে ইনকাম করেছি।ভাবলাম দেশে এসে মা,বাবা আর তিন সন্তান স্ত্রীকে নিয়ে একসাথে থাকবো। এজন্য গত ০৯/০৭/২০২৪/ তারিখে সৌদি দেশে আসি। বাড়ি এসে শুনতে পায় আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করে ছেলেমেয়ে সহ পাঠিয়ে দিয়েছে।এসময় আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। কিভাবে আমার স্ত্রী সন্তানদের ফিরে পাবো। এরপর ছোট ভাই ঠান্ডুর কাছে জানতে চাই আমার বউ ছেলেমেয়ে কোথায়। তখন ঠান্ডু বলে তোর বউ বাড়ির মানসম্মান নষ্ট করেছে এজন্য বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।পরবর্তীতে খোঁজাখুঁজি করে আমার স্ত্রী সন্তানদের শশুড়বাড়িতে দেখতে পায়।এখন আমি তাদের বাড়িতে নিয়ে আসবো অথচ আমার দুই ভাই ঘরে থালা মেরে রেখেছে। এছাড়া আমার টাকা পয়সা,সোনাদানা নিয়ে রেখেছে। আমার কোন ভাবেই তাঁরা ঘরে বসবাস করতে দেবেনা এখন আমি কি করবো?আমি একজন প্রবাসী অনেক কষ্ট করে দেশে আসছি কিন্তু আমার জীবন এলোমেলো করে দিলো আমার ভাই ঠান্ডু। আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।এবিষয়ে ঠান্ডু সেখের কাছে জানতে চাইলে সে জানান, বাড়ির মানসম্মানের দিক তাকিয়ে অনেক কিছুই করা লাগে। কমবেশি মারধরের ঘটনা ঘটছে বিষয়টি আমরা পারিবারিক ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি প্রবাসীর স্ত্রীর নির্যাতনের বিষয়ে হরিণাকুন্ডু থানার চাঁদপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত বিট পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন জানান,থানায় ৯৯৯ রাতে একটি কল আসে মহিলার মারধরের ঘটনায়। সকাল ১০ টার দিকে আমি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি একজন বিদেশির স্ত্রীকে মারধর করেছে।তবে যে অভিযোগে মারধর করা হয়েছে তাঁর সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপর ভিকটিম উদ্ধার করে বাবা,মায়ের জিম্মায় পাঠিয়ে দিই। এবিষয়ে হরিনাকুন্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,কিছুদিন আগে পারমথুরাপুর গ্রামে রাতের বেলায় একটা মহিলাকে মারধরের ঘটনা ৯৯৯ মাধ্যমে জানতে পারি। এরপর থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী কোন অভিযোগ করেনি।লিখিত অভিযোগ কিংবা এজাহার দিলে ব্যাবস্থা নেবো। উল্লেখ্য এঘটনায় ভুক্তভোগী জনি খাতুন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
কোর্ট থেকে মামলাটি হরিনাকুন্ডুর অফিসার ইনচার্জকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।