1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman
শিরোনামঃ
রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে অফিস পাড়া দখলে মরিয়া একটি পক্ষ সাদীপুরে পরিবারিক জমি বণ্টন না করে জবরদখলের অভিযোগ ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিলেন এইডস আক্রান্ত নারী বাঁচুক অমর প্রেম গাঁথার চন্ডিদাস-রজকিনীর ঘাট, জেগে উঠুক ইতিহাস! বিপুল পরিমাণ সরকারি ঔষধ সহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক-১ যবিপ্রবিতে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ক ন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত কৃষির আধুনিকায়নে ‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ ও ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ অপরিহার্য: ডিএই’র অতিরিক্ত পরিচালক আলমগীর বিশ্বাস কালীগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত একাধিক কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষনে সরকারিভাবে লবন সরবরাহ মনিরামপুরে আসাদুজ্জামান মিন্টুকে সংবর্ধনা প্রদান

বাঁচুক অমর প্রেম গাঁথার চন্ডিদাস-রজকিনীর ঘাট, জেগে উঠুক ইতিহাস!

  • প্রকাশের সময় রবিবার, ১ জুন, ২০২৫
  • ৮ বার সংবাদটি পাঠিত

জাহিদ হাসান

মাগুরা জেলার সীমাখালী ইউনিয়নের শতখালী বাজারের পাশে ধোপাখালি গ্রামে নিরব নিস্তব্ধতায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি সাইনবোর্ড, যেন ইতিহাসের চাপা কান্নার নিঃশব্দ ঘোষক। সেখানে লেখা ‘রজকিনী চণ্ডীদাসের ঘাট’। ৭০০ বছর আগে এই স্থানে ঘটা এক ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনী, আজও ভেসে বেড়ায় আমদের লোকসংগীত, সাহিত্য উপখ্যান সহ স্থানীয় জনশ্রুতি আর নিসর্গের বুকজুড়ে। ব্রাহ্মণ জমিদারপুত্র চণ্ডীদাস সমাজের নিয়ম উপেক্ষা করে নিচু জাতের অপরুপ সুন্দরী ধোপার মেয়ে রজকিনীকে দেখার আশায় একটানা ১২ বছরের নিঃশব্দ গভীর চাহনি—এ প্রেম সেসময়ের জাত, ধর্ম শ্রেণি আর সমাজের সীমানা ছিন্ন করা সত্য ঘটনা অবলম্বনের এক উপাখ্যান, যে ইতিহাসের চিহ্ন আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে।চণ্ডীদাস ১৪ শতাব্দীর বৈষ্ণব কবি, যিনি কেবল সাহিত্য রচনা করেননি, বরং সমাজের কঠোর জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবতাবাদী প্রেমের দর্শন উপহার দিয়েছিলেন।চণ্ডীদাস, ছিলেন দাস বংশের ব্রাহ্মণ জমিদার পুত্র। আজও এই এলাকায় দাস বংশের উত্তরসূরিরা বসবাস করেন। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, যেখানে এমন এক আবেগঘন, লোকঐতিহ্যে সমৃদ্ধ স্থান রয়েছে, সেখানেই নেই কোনো স্থাপনা, নেই কোনো ঘাটের চিহ্ন— কেবল সবুজ ঘাসে ঢাকা খোলা জমি আর একটি বিস্মৃত ছোট নদী।চণ্ডীদাস-রজকিনীর স্মৃতিঘেরা ছায়া সুনিবিড় ধোপাখালী গ্রামের মাঝে এখনো অযত্নে অবহেলায় পরে আছে কুমোরকোঠা দুয়া। যার পানি কখনোই শুকায়নি। এই দুয়ার তিন পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরু তিনটি শাখা যা ফটকি নদী নামে পরিচিত। কুমোরকোঠা দুয়া এই অমর প্রেমের সাক্ষী হয়ে রয়েছে আজও।বর্তমানে নদীটি প্রায় শুকিয়ে এসেছে, কোথাও কোথাও জমে থাকা জল ও ঘাসে ঢাকা ভূমি যেন আদি সেই দৃশ্যপটকেই মনে করিয়ে দেয়। এপারে আজ রজকিনী কাপড় ধোঁয়া ঘাটে গরু চরে, আর ওপারে জঙ্গলে ঢেকে গেছে চণ্ডীদাসের প্রেমের জন্য ১২ বছর ধরে বরশি ফেলা ঘাটের জায়গাটি। সেখানে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করলেই যেনো রোমান্টিকতা আর অপূরণীয়তা মিশে অনুভব হয় এক প্রাকৃতিক ট্র্যাজেডি। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রশাসন শুধু রাস্তার পাশে একটি সাইনবোর্ড বসিয়ে দায় শেষ করেছে। নেই সেখানে যাওয়ার উপযুক্ত রাস্তা, নেই পর্যটকদের জন্য কোনো ব্যবস্থা, এমনকি এলাকাবাসীর মাঝেও অনেকের জানা নেই এই স্থানের আসল ইতিহাস। অথচ ঠিক এখানেই তৈরি করা যেতে পারে একটি ঐতিহাসিক ঘাট, স্থাপন করা যেতে পারে তথ্যপাট, প্যাভিলিয়ন, কিংবা লোককাহিনীভিত্তিক প্রদর্শনী।আশার বাণী এইযে, সাম্প্রতিক সময়ে এখানে উদ্ধার হওয়া দখলে থাকা প্রায় ১৬ একর খাস জমিতে যে কোনো সময় গড়ে তোলা যেতে পারে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা ঐতিহাসিক পুনর্গঠন। যা ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। একটি সুষ্ঠ পরিকল্পনা শুধু ইতিহাসকে সংরক্ষণ করবে না, বরং স্থানীয় জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পর্যটন উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে।এই ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনা মানে শুধু একটি প্রেমকাহিনীকেই বাঁচিয়ে রাখা নয়— এটা আমাদের শিকড়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন। ধোপাখালীর এই রজকিনী চন্ডিদাসের ঘাট হতে পারে মাগুরার সাংস্কৃতিক পর্যটনের গর্ব, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ইতিহাসচর্চার কেন্দ্র, এবং সকল বাঙালির হৃদয় স্পর্শকারী প্রেমকাহিনীর এক দৃশ্যমান ঐতিহাসিক মাইলফলক।সময় এসেছে— শুধু ইতিহাসে নয়, স্থাপত্যেও বাঁচুক চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেম। চাই দায়িত্ববান উদ্যোগ, সচেতনতা এবং সম্মিলিত চেতনা। তাহলে এই ১৬ একর জমির প্রতিটি ইঞ্চিই ইতিহাস ধারণ করতে পারে, যদি আমরা চাই।এই লেখাটি শুধুই আবেদন নয় — এটি একটি আহ্বান: এই ঘাটকে বাঁচান। ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলুন ইতিহাস ঐতিহ্যের এক চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION