আর,হাসান : পুঁথিগত শিক্ষা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও শরীরচর্চা ও খেলাধুলা ভার্চুয়ালে কখনই সম্ভব নয়। এতে বড় প্রভাব পড়ছে শিশুদের বিকাশে; এছাড়া আগের চেয়ে বেশি মোবাইলমুখী হয়ে পড়ছে অনেক শিশু। এমন পরিস্থিতিতে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, শিশুদের প্রয়োজনমতো মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে। তবে সময়সূচি যেন কোনভাবেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা কনসালটেন্ট ওসিডি ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন, শিশুদের কানে হেডফোন, চেখের সামনে পর্দা কতক্ষণ থাকবে, তা চিন্তার ব্যাপার। শিক্ষণীয় মাধ্যমের পাশাপাশি অশিক্ষার প্রভাবও তো কম নয়। তা ছাড়া শারীরিক সুস্থতা ও অসুস্থতার দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। বেশি পর্দার সামনে বসে থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগ না দিয়ে অনেকে অন্যান্য দিকে নজর দেয়। অনেকে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যায়। পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পাশাপাশি অনৈতিকতাও শেখে। পরীক্ষায় নকল করা, ছবি, রেফারেন্স সরবরাহ করা এই বয়সে শিশু-কিশোরদের মননে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরবর্তী সময় এদের ব্যক্তিত্ব ঠিকমতো তৈরি হয় না। ইন্টারেনেটে সহিংস সিনেমা, গেম, কার্যকলাপ যে শিশুরা দেখে, তাদের মধ্যে স্মৃতিগুলো গেঁথে যায়। পরবর্তী সময়ে পৃথিবীকে তাদের কাছে ভয়ংকর মনে হয়। আপন লাগে না। শিশু-কিশোররা সহিংস হয়ে ওঠে। টিভি সিরিয়াল, সিনেমা বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত চরিত্রগুলোর সঙ্গে অনেক শিশু-কিশোর অজান্তে নিজেদের মিলিয়ে ফেলে। পরবর্তী সময়ে সেই চরিত্রে নিজেরাই নিজেদের জীবনে ঘটাতে চেষ্টা করে। বাচ্চাদের মানসপটে কী কখন গেঁথে যাবে, কে জানে।
এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তৈফিকুর রহমান বলেন, দিনে ৪ ঘন্টা পর্দার সামনে থাকলে বাচ্চাদের ওজন বেড়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন প্রভৃতি শারীরিক রোগের বীজ নিয়ে চলতে হবে। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় বিশেষত শিশুদের। কারণ, যন্ত্র থেকে যে রেডিয়েশন হয়, তা বাচ্চাদের শরীরের হাড়ে, টিস্যুতে অনেক বেশি ঢুকে পড়ে, যা কারসিনোজেন হিসেবে শরীরে থেকে যায়। রেডিয়েশন মস্তিষ্কের কাজকর্মে বাধা দেয়। এর ফলে বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হতে পারে না। আর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় বাধা দেয়।
তিনি আরো বলেন, স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোর এবং ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য প্রয়োজনমতো যন্ত্র ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে। তবে তাদের সময়সূচি যেন অভিভাবকের জানা থাকে। এছাড়া ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকতে হবে। যথেষ্ট ঘুম না হলে পড়াশোনা মনে রাখাটা কষ্টকর হয়ে উঠবে। নিয়মিত শারীরিক নড়াচড়া করা জরুরি। এতে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ে।