বেনাপোল প্রতিনিধি ঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১ আগস্ট এর গ্রেনেড হামলা তার একটি। ২০০৪ সালের ঐ দিনে যা ঘটেছিল এবং যে ভাবে ঘটেছিল তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাবও ফেলেছে। এ হামলায় বেঁচে থাকা অনেকে আজ ও পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। ঘাতক চক্রের লক্ষ ছিল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে নেতৃত্বহীন করে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেওয়া এবং দেশে স্বৈরশাসন ও জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। এই ভয়বহ ২১ আগস্ট শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৭ তম বার্ষিকী আজ আমরা পালন করছি। দেড় দশক আগে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয় বিশ্ব মানবতার মা, জাতির জনকের তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য। কথাগুলো বললেন ২১ আগষ্টের ভয়াবহ হত্যান্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশে মেয়র লিটন।
শুক্রবার বিকাল ৪টার সময় বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগ আয়োজিত বেনাপোল পৌর বিয়েবাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে ২১ আগষ্ট ভয়াবহ গ্রানেড হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। এসময় সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আহসান উল্লাহ মাষ্টার। প্রধান অতিথি মেয়র লিটন বলেন, সেদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা। দলটির প্রধান এবং তখনকার বিরোধি দলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ঐ সমাবেশের প্রধান অতিথি। আওয়ামী অফিসের সামনে রাস্তায় একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করা হয়েছিল। দলীয় নেত্রীর বক্তব্য শেষ হবার সাথে সাথে হঠাৎ করে বিকট শব্দে চারিদিকে লোক ছুটাছুটি করতে লাগল। তখন চারপাশে চিৎকার হতে লাগল। এ ভাবে দফায় দফায় বিস্ফোরনের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। তখন শেখ হাসিনাকে মানব ঢাল তৈরী করে নেতা কর্মীরা বাঁচিয়েছিল। এই মানব ঢালের অন্যতম ছিল তৎকালীন ঢাকার মেয়র মোহাম্মাদ হানিফ। সেদিন ২৪ জন নেতা কর্মীকে এই গ্রানেড হামলা করে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান এর স্ত্রী আইভি রহমান ও ছিলেন। গ্রানেড হামলায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে পড়ে ছিল জুতা স্যান্ডেল ও অবিস্ফোরিত গ্রেনেড ক্ষত বিক্ষত মানুষের মাংসের টুকরা,ও রক্তের দাগ। শেখ হাসিনাকে মানব ঢালে ঘিরে রাখা অনেকে সেদিন আহত হয়েছেন। মোহাম্মাদ হানিফ ও মাথায় আহত হয়ে অবশেষে ২০০৬ সালে মারা যান।
মেয়র লিটন বলেন ১৯৭১ সালে জাতির জনককে হত্যা করার সময় তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন তখন বিদেশে। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মার্চ দেশে ফেরেন। এবং এদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেন। তিনি এদেশের কুচক্রী মহল পাকিস্তানীদের দোষরদের দ্বারা ২১ বার হত্যার হাত থেকে বেঁচে গেছেন। তাকে ওই খুনি তারেক জিয়া পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নীল নকশার ছক করে ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রানেড হামলা করে। তারপরও তিনি থেমে নেই। তিনি লড়াই সংগ্রাম করে এদেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন। ১৯৭৫ এর পর এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় ভ্যান রিক্সা চালিয়েছেন, জুতায় কালি করিয়েছেন, শ্রমিকের কাজ করেছেন তাদের সন্মানে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করেছেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্ব ভাতা চালু করে এক অনন্য উচ্চতায় নাম লিখিয়েছেন। আজ দেশে করোনা দুর্যোগকালীন সময় তিনি দেশের একটি মানুষকে ও অনাহারে রাখেন নাই। তিনি মাত্র ১০ টাকায় চাউল দিচ্ছেন জনগনকে। সেই নেত্রীকে যারা বার বার খুন করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে তারা সুস্থ্য ধারার রাজনীতি করতে পারে না। ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী বাবর বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভুইয়াকে তারেক জিয়া সম্পর্কে বললে মান্নান ভুইয়া বলেন জিয়াউর রহমান ছিলেন খুনি তার ছেলে তারেক জিয়া আর কি হতে পারে। সে কখনো সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে পারবে না। আজ শেখ হাসিনাকে খুন করতে যেয়ে সেই কুলাঙ্গার তারেক জিয়া দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছে। তিনি নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেন আমরা শার্শার রাজনীতি ও সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। শার্শায় আর কোন রক্তচক্ষুকে আমরা ভয় পাই না। যদি কেউ আপনাদের আঘাত করে সাথে সাথে আমাকে জানাবেন আমি নিজে সেখানে উপস্থিত হব। তবু অন্যায় জুলুম, অত্যাচার নির্যাতন মেনে নিব না।
শার্শা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন যারা ২১ আগষ্ট গ্রানেড হামলা করেছিল আজ তারা বাংলার মাটিতে নেই। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে দেশ বিদেশে। তার মধ্যে খালেদার পুত্র তারেক প্রধান। তিনি বলেন সেই দিন থেকে আমরা প্রতিবাদ মিছিল সমাবেশ করছি। আর এই শার্শার মাটিতে মিজানুর রহমানকে একই আওয়ামীলীগ দলীয় কর্মীরা হাত পা সেদিন ভেঙ্গে দিয়েছিল। সেই মিজান এখনও তার নিতী অনুযায়ী ওই সন্ত্রাস জুলুমবাজদের সাথে যায় নাই। মানবতা যেখানে মানুষ যাবে সেখানে এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বলেন আজ করোনা দুর্যোগে শার্শার মাটিতে মেয়র লিটন বিগত ৭ টি মাস মানুষের পাশে আছে। তিনি অক্সিজেন পর্যন্ত মানুষের ঘরে ঘরে পৌছিয়ে দিচ্ছে। শার্শার এমপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন আর আপনি এই মহাদুর্যোগের সময় মানুষ থেকে দুরে কোথাও হারিয়ে গেছেন, আপনাকে হারিকেন দিয়েও খুজে পায় নাই। আপনি বুঝতে পারছেন আজ প্রকৃত আওয়ামীলীগ এর কর্মীরা আপানার পাশে নেই। আপনার পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ায় আপনি জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক আজিবর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইলিয়াছ আযম, বনও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শেখ সারোয়ার, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান, কোষাধ্যাক্ষ খোদাবক্স, বেনাপোল পৌর প্যানেল মেয়র সাহাবুদ্দিন মন্টু, কাউন্সিলার রাশেদ আলী, আওয়ামীলীগ নেতা মিজানুর রহমান,বেনাপোল পৌর ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শান্তিপদ গাঙ্গুলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, বেনাপোল পৌর ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল হক খোকন,বেনাপোল পৌর আাওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মাতিন টেনা, পুটখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান গফফার সরদার,যশোর জেলা আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম এর সিনিয়র সহ-সভাপতি এমদাদুল হক বকুল, কার্যনির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন আালম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন,বেনাপোল পৌর আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম এর সভাপতি রহমত আলী, শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আকুল হোসাইন, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাইফুজ্জামান সজল, প্রচার সম্পাদক এনামুল হক মুকুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বেনাপোল পৌর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক সুকুমার দেবনাথ।