1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

ফিনিশীয় সভ্যতা

  • প্রকাশের সময় রবিবার, ২১ জুন, ২০২০
  • ২৫০ বার সংবাদটি পাঠিত

আয়ুব হোসাইন,যশোর প্রতিনিধিঃ গ্রিক শব্দ Phoinikes থেকেই মূলত ফিনিশীয় নামের উৎপত্তি, যার অর্থ Purple বা বেগুনি রং। প্রাচীন ভূমধ্যসাগরের বিশেষ খোলসযু্ক্ত মাছ এবং শামুক থেকে বেগুনি রং আহরণ করা হতো। আর এর সাথে জড়িতদের গ্রিকরা বলতো ‘বেগুনি বর্ণের মানুষ’। পরবর্তীতে পূর্ব ভূখণ্ডে বসবাস করা সেমেটিক গোষ্ঠীভুক্ত কেনানাইটরাই ফিনিশীয় বলে খ্যাত হয়। সর্বপ্রথম ফিনিশীয় শব্দটির ব্যবহার দেখা যায় গ্রিক মহাকবি হোমারের লেখায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে দক্ষিণ সিরিয়া, উত্তর ইসরায়েল ও লেবাননের উপকূলীয় অঞ্চলে সংগঠিত বসতি স্থাপন করে তারা। আদি আবাস ছিলো পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে। অনেকেই তা বর্তমান বাইরাইন বলে দাবি করেন।
চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাদের আধিপত্য বলয়
সে যা-ই হোক, ভূমধ্যসাগরীয় পূর্বাঞ্চলে কৃষিভূমির পরিমাণ কম থাকায় তারা সমুদ্রের দিকে ঝুকে পড়ে জীবন ও জীবিকার জন্য। খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ সালেই মিশরের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৫৫০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে ফিনিশীয় অঞ্চল পরিণত হয় প্রদেশে। ১২০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে সিডন, টায়ার, বিবলোস এবং আরদুসকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বলা বাহুল্য, এদের প্রথম তিনটি বর্তমান লেবানন এবং শেষটি বর্তমান সিরিয়ায় অবস্থিত। যদিও রাজনৈতিক কাঠামোর চেয়ে বাণিজ্যিক প্রতিপত্তি তৈরির প্রতিই তাদের অধিক মনোযোগী দেখা যায়। তবু মিশর, এশিয়া মাইনর, বলকান অঞ্চল এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়।

ফিনিশীয়দের অবদান
মৃতের সৎকারের জন্য চিলঘর ব্যবহার করে জোরোস্ট্রিয় বা জরথুস্ত্র ধর্মাবলম্বীরা। পারস্যের ইতিহাসে কাইরাস ও দারিয়ুস ছিলেন সবচেয়ে সফল শাসক। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার অধিকার করে নেন সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্যকে।

সাংস্কৃতিক উন্নতি
সভ্যতার ইতিহাসে ফিনিশীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান হল বর্ণমালা (Alphabet) এর উদ্ভাবন। তারা ২২ টি ব্যঞ্জনবর্ণের (Consonants) উদ্ভাবন করে। আধুনিক বর্ণমালার সূচনা হয় এখান থেকে। ফিনিশীয়দের উদ্ভাবিত বর্ণমালার সাথে পরবর্তীতে গ্রিকরা স্বরবর্ণ যোগ করে বর্ণমালাকে সম্পূর্ণ করে।

কারিগরি দক্ষতা
ফিনিশীয়রা মাটির পাত্র তৈরি করতে পারত। দক্ষতার সাথে কাপড় তৈরি ও রং করতে পারত।

প্রশাসন ব্যবস্থা
ইতিহাসের অধিকাংশ সময় ফিনিশীয় রাজনীতি ছিলো অনেকটা কনফেডারেশন ধরনের। গোড়ার দিকে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের করদ প্রদেশ হিসাবে থাকলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। মিশর, ক্রীট ও হিট্টাইটদের পতনের কারণে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পায় তারা। সিডানে Tetramnestos, টায়ারে Mattan এবং আরাদোসে Marbalos নামের তিনজন শাসক মিলে একটা কনফেডারেশন গঠন করে। এই কনফেডারেশন ছিলো মূলত গ্রিক শক্তির বিরোধী। তারপরেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেয়ে ফিনিশীয়রা বাণিজ্যিক প্রাধান্য বিস্তারে গুরুত্ব দিতো। কার্থেজের মতোন কিছু অঞ্চলের ছিলো পৃথক মুদ্রা।
কার্থেজের মতো কিছু ফিনিশীয় অঞ্চলের মুদ্রা ছিলো পৃথক।
প্রত্যেক শহরের আলাদা প্রতিরক্ষা, সৈন্য ও নৌবহর ছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের দিকে তিউনিশিয়া, উতিকা, হাদ্রমেতাম ও অন্যান্য স্বাধীন অঞ্চল নিয়ে কার্থেজ রাষ্ট্র গঠিত হয়। তবে তা ছিলো নগর রাষ্ট্র। ফিনিশীয়রা পারসিক অধীনে থাকার সময় ধনী ব্যবসায়ীদের নিয়ে জ্যেষ্ঠ কাউন্সিল গঠন করে, যা ছিলো অনেকটা রাজার উপদেষ্টা পরিষদের মতো। এরিস্টটল মনে করেন, সমস্ত ক্ষমতা পরিচালিত হতো দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে। আজীবনের জন্য নির্বাচিত হতো ৩০০ সদস্যের বিশেষ সিনেট। আর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হতো ১০৪ সদস্যের সাধারণ সভা।

অর্থনীতি
প্রথম দিকে কৃষি ও পশুপালনের প্রতি নির্ভরশীল থাকলেও ক্রমে ফিনিশীয়রা বহির্বাণিজ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। উপত্যকায় আঙুর, জলপাই ও খেজুরের চাষ হতো। পশুর মধ্যে থাকতো গাধা ও ভেড়া। পরবর্তীতে নগরগুলো শিল্পজাত নানা পণ্যে ব্যাপকতা লাভ করে। জাহাজ নির্মাণে তাদের কৃতিত্ব প্রবাদ প্রতীম।
সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির কারণে বিবর্তন আসে জাহাজে।
দুই ধরণের জাহাজ মূলত তৈরি করতো বাণিজ্যিক পণ্যের জন্য গোল জাহাজ এবং যুদ্ধের জন্য লম্বা জাহাজ। এছাড়া ছিলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছ ধরার নৌকা। রাতে তারা যাতায়াত করতো ধ্রুবতারা লক্ষ্য করে। স্পেন থেকে রৌপ্য ও টিন, আফ্রিকা থেকে সোনা ও হাতির দাঁত এবং আরব থেকে সুগন্ধি দ্রব্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতো। মিশরীয় ও হিব্রুদের সাথেও তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো সন্তোষজনক।

বর্ণমালা ও লিখনপদ্ধতি
সভ্যতায় ফিনিশীয়দের সবথেকে বড় অবদান বর্ণমালা আবিষ্কার ও তার ব্যাপক প্রচলন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৬০০ সালের মধ্যে খুব সম্ভবত তারা মিশরীয়দের থেকে প্রভাবিত হয়ে অপেক্ষাকৃত সরল লেখার পদ্ধতির জন্ম দেয়। কিছু কিছু শব্দ ও প্রয়োগরীতি হিব্রু থেকে উৎসারিত হলেও এরা পৃথকভাবে বেড়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন রজার্স ও এডামস্। বাণিজ্যিক কারণেই হিসাব ও সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজন পড়ে অপেক্ষাকৃত সহজ বর্ণমালার। ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ২২ টি ব্যঞ্জনবর্ণ উদ্ভাবিত হয়। এই বর্ণমালাকে বলা হতো আবজাদ। প্রথম তিন বর্ণ ছিলো যথাক্রমে আলেফ, বেথ, জিমেল।
সভ্যতার ইতিহাসে তাদের এই আবিষ্কার ছিলো মাইলফলক।
খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালের দিকে গ্রীকরা এর সাথে স্বরবর্ণ যোগ করে বর্ণমালায় পূর্ণতা আনে। গ্রীস থেকে এই বর্ণমালা যায় রোমানদের হাতে। পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশ এই পদ্ধতি পরবর্তীতে গ্রহণ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানের অনেক ভাষার বর্ণমালাই তার বংশধর। ফিনিশীয়রা কাগজ, কালি ও কলমের বিবর্তনেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

এশিয়ার মেসোপটেমীয় ও হিব্রু সংস্কৃতি, আফ্রিকার মিশরীয় সংস্কৃতি এবং ইউরোপের গ্রীক সংস্কৃতি মিলিত হয়েছিলো ভূমধ্যসাগরের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। ফিনিশীয়রা সকল অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক জ্ঞানকে একত্রিত করে গড়ে তুলেছে সম্পূর্ণ স্বাধীন এক প্রাগ্রসর সংস্কৃতি, যা পরবর্তী সভ্যতাগুলোকে প্রভাবিত করেছে ব্যাপকভাবে।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION