মোঃ ইব্রাহিম খলিল,সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় নায়েব রফিকুল ইসলাম অপরাধ, অপকর্ম, অনিয়ম, দূর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্যে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। জানা গেছে, নায়েব রফিকুল ইসলাম ভূমি অফিসে চাকরির সুবাদে গড়েছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। তিনি সাতক্ষীরা, শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছেন। একজন ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তার বেতন-ভাতা সর্বসাকুল্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। অভিযোগ আছে, রফিকুল ইসলাম একজন সরকারি বেতন ভুক্ত কর্মচারী হয়ে অঢেল সম্পদ, ব্যাংক ব্যালেন্স, নামে বেনামে সম্পদের পাহাড়, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, রাজকীয় জীবন যাপন রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া সব মিলিয়ে অতীতের যে কোন রুপকথার কল্পকাহিনীকে হার মানায়। কোনভাবেই সরকারি বেতন ভাতার সাথে তার চলাচল এবং ব্যায়ভারের সাথে কোন প্রকার মিল নেই। নায়েব রফিকুলের বর্তমান জীবন যাপন এবং তার অর্জিত সম্পদ বলে দেয় সে একজন বড় ধরনের দূর্নীতিবাজ। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কেউ পর্চা নিতে আসলে দিতে হয় ঘুষ। পর্চা প্রতি ৩শ থেকে শুরু করে ৫শ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় তাকে। জমাখারিজ বা নামজারির রেটিংটা আবার ভিন্ন ধাচের কাগজপত্র সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১১ শত ৪৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও নিয়ম না মেনে আবেদনকারীকে দালালের হাত ধরে ঘুষ দিতে হয় কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া জমির রেকর্ডে ত্রুটি বা অর্পিত সম্পত্তি বা সরকারী খাস জমি হলে জমির বর্তমান বাজার দরে শতাংশ প্রতি লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিলেই নামজারী পেয়ে যায় ভুমিদস্যুরা। আর এভাবেই সরকারি খাল বিল, নদী-নালা ডোবা বা পতিত জমি চলে যায় ভুমিদস্যুদের দখলে। রফিকুল ইসলাম কে ঘুষ প্রদান করলে দ্রুত কাজ করে দেন, আর ঘুষ প্রদান না করলে হতে হয় নানা ভাবে হয়রানির শিকার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদরের পারকুকরালী গ্রামের বাসিন্দা। অসচ্ছল একটি পরিবার থেকে উঠে আসা আজকের কোটিপতি বনে যাওয়া রফিকুল ইসলাম। সরকারী চাকুরী নামক আলাদিনের চেরাগটি হাতে পাওয়ার পরে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। ঘষতে ঘষতেই গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের স্বর্গরাজ্য। রয়েছে ফ্লাট, খুলনার শহরে দশ কাটার উপরে আলিশান বাড়ি, গাড়ি এবং একাধিক ব্যাংক ব্যালেন্স। অবৈধ টাকায় তার স্ত্রীর নামে বানিয়েছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। সাতক্ষীরা শহরে রয়েছে তার ব্যাপক আধিপত্য, সেকারণে তার প্রতিবেশীরা ভয়ে আতঙ্কিত ও নানা ভাবে শংকিত। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখানোর কেউ নেই। তার বিরুদ্ধে যাওয়া মানে জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা। উপর মহল থেকে শুরু করে নিচের দিকে এমন কেউ নেই যে সে চেনে না। নায়েব রফিকুল ইসলামের অপরাধ, অপকর্ম আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে তিনি মাঝ পথেই থামিয়ে দেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা ছাড়া রফিকুলের অফিসে কোনো ফাইলে সই হয় না। অনেকেই বলছেন, টাকা দিলেও রফিকুল ইসলামের চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সেবা গ্রহীতাদের ঘুরতে হয় দিনের পর দিন হতে হয় নানা হয়রানি। জমির নামপত্তন, হাল নাগাদ খাজনা, দাখিলা কর্তন, মিউটেশনে ভুলভ্রান্তির সংশোধন, ভিপি সম্পত্তি, দেওয়ানি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, ১৪৪ ধারার পিটিশন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, এলএসডি মামলা সহ জমি সংক্রান্ত নানাবিধ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে। কিন্তু রফিকুল ইসলাম আইনের তোয়াক্কা না করেই সব কাজের ক্ষেত্রে করেন সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্য। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, নায়েব রফিকুলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে আছে। ভূমি সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অনুলিপি দেয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। অভিযোগকারী ভুক্তভোগীরা দুর্নীতিবাজ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এর দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাবসায়ী জানান, নায়েব রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্ব কালীন সময় আমার ক্রয়সুত্রে মালিকানা প্রাপ্ত ২শতাংশ জমির নামজারি করার নিমিত্তে ভূমি অফিসে গেলে নায়েব রফিকুল আমাকে কাগজপত্রে সমস্যার কথা বলে। এসময় তিনি বলেন ৩০ হাজার টাকা দিলে কাগজ ঠিক করার পাশাপাশি নামজারি করে দেবো। দূর্নীতিবাজ রফিকুল ধরাকে সরা জ্ঞান করতেও দ্বিধাবোধ করেনা। টাকার জন্য সে যা খুশি তাই করে থাকেন। ঘুষের টাকায় পারকুকরালী গড়ে তুলেছেন ২টা বাড়ী, কিনেছেন বাইপাসে জমি। এছাড়াও তার নামে বে-নামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। চলাফেরা করেন ২ লাখ মূল্যের একটি ডিসকাভার ১৩৫ সিসির গাড়িতে। এদিকে, নায়েব রফিকুল ইসলাম পূর্বের কর্মস্থলে থাকাকালীন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুজিব বর্ষের ঘর দেওয়ার নামে এক বিধবা মহিলার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে উপায়ান্ত না পেয়ে বিধবা মহিলা নায়েব রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের এক মাসের মাথায় দুর্নীতির দায়ে শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বদলি করা হয়। এ বিষয় রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন পর্চা তুলুনি কিংবা নামজারির ক্ষেত্রে যার যার নামজারি সেই করেছে আমি কারো টাকায় হাত দেয়নি। সদর ভূমি অফিস থেকে দূর্নীতির দায়ে বদলির ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, দূর্নীতির দায়ে আমাকে বদলি করেনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানিনা কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাকে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে নায়েব রফিকুল ইসলাম কে দূর্নীতির দায়ে শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলীর সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে নায়েব রফিকুল ইসলাম এর ঘুষ বানিজ্যে সচেতন মহল সহ সুশীল সমাজে নিন্দার ঝড় বইছে।