⚫ ভূমিহীনদের উপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা
⚫ মারপিট করে ২০ জনকে জখম
⚫ জমি দখল নিতে ৪০ টি বাড়িঘর ভাংচুর
⚫ আহতদের চিকিৎসা নিতে বাঁধা প্রদান
⚫ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
মোঃ ইব্রাহিম খলিল,সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে ইউএনও ও সাংবাদিকদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলায় চেয়ারম্যান আজিজুর বাহিনী কর্তৃক ভূমিহীনদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, প্রায় তিন যুগ ধরে বসবাসকারী ভূমিহীনদের সরকারি খাস জায়গা ইতিপূর্বে জোর পূর্বক দখল ও ভাংচুরের ঘটনা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের পালিত কিছু সংখ্যক নামধারী সন্ত্রাসীরা মধ্যযুগীয় কায়দায় তান্ডব চালিয়ে অন্তত ৪০ টি বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। এসময় ভুক্তভোগীরা বাঁধা দিতে গেলে নারী-পুরুষ ,শিশুসহ প্রায় ২০ জনকে মারপিট করে আহত করে ওই সন্ত্রাসী চক্রটি। মঙ্গলবার ৪ মার্চ ইফতারের আগ মুহূর্ত হতে প্রায় ৩ ঘন্টা যাবত কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ভূমিহীন অধ্যুষিত শহিদ জাহেদা নগর , ভাঙ্গনমারী গ্রামে চেয়ারম্যান আজিজ এর সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ভয়াবহ ওই তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেনঃ জাহেদা নগরের ভূমিহীন নেতা আব্দুল ওহাব (৬৫), প্রয়াত ইশার আলীর পুত্র জহুরুল (৪০), নজরুল সরদারের পুত্র আল মামুন (৩৮), প্রয়াত নাজির আলীর পুত্র মহাসিন (৪৫ ), নজরুলের স্ত্রী অরিজিনা খাতুন (৩২), আজগর শেখের পুত্র আব্দুল গফুর (৩৮) এবং শাজাহান শেখের শিশু পুত্র সুমন (১২ )। এদের মধ্যে ৪ জনকে কালিগঞ্জ হাসপাতালে, ২ জনকে নলতা হাসপাতালে এবং শিশু সুমনকে প্রথমে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশু সুমন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বলে জানা যায়। বাকি আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে তান্ডবের পরে আহতরা যন্ত্রণায় ছটফট করা অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে তাদেরকে বাধা দিয়ে জোরপূর্বক আটকে রাখে চেয়ারম্যান আজিজুর বাহিনীর সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ভূমিহীন পরিবার। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহতরা কৌশলে সন্ত্রাসীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে যেয়ে ভর্তি হয়। ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদার, মহাসিন, জহুরুল সহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানায়, মঙ্গলবার ৪ মার্চ ভাঙ্গানমারি ভূমিহীন এলাকায় বসবাসকারী ১০৭টি ভূমিহীন পরিবারের প্রায় ১ শত বিঘা সরকারি খাস জমি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের কথিত ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীরা গত ১ মার্চ জোর পূর্বক দখল করে নেয় । উক্ত ঘটনা কে কেন্দ্র করে অভিযোগ জানাতে মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১০ টা থেকে ৩ থেকে ৪ শত ভূমিহীন নারী-পুরুষ উপজেলা সদরে জমায়েত হতে থাকে । ঐ সময় বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল তাদের সঙ্গে পরে কথা বলবে বলে তিনি বাজার মনিটরিং এর কাজে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় ভূমিহীনরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বাড়ি চলে যায়। বিকালে ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াত ইসলামের অফিসে যাকাত শীর্ষক একটি কর্মশালা শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে কাজলা গ্রামের ডাঃ আবু নেছার বাড়ির নিকটে পৌছানো মাত্রই চেয়ারম্যান আজিজুর কালিগঞ্জ গেছোস কেনো মর্মে কৈফিয়ত চায়? একপর্যায় ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদারকে গালিগালাজ করে হুমকি দেয়। পরে বাকি রোজাদার ভূমিহীনরা ইফতারের আগে বাড়িতে পৌছানো মাত্র চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের কথিত সন্ত্রাসী মমিন, রফিকুল, সেকেন্দার ওরফে সেকেন, গফুর পাড়, ইয়াদ শেখ, শরিফুল গাজী, মেহেদী গংদের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা যাবত তান্ডব চালিয়ে ৪০ টি ভূমিহীন পরিবারের বাড়ি ঘর, মোটরসাইকেল আসবাবপত্র ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান। ঐ সময় সন্ত্রাসীদের বেধড়ক মারপিট ও লাঠিপেটায় নারী, পুরুষ, শিশুসহ অন্তত ২০ জনকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। আহতদের হাসপাতালে নিতে চাইলে বাধা প্রদান করে বলে ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা সাংবাদিকদের জানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে বিষয়টি কালিগঞ্জ থানাকে জানালে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ৯৯৯ ফোন দেওয়া হয়। সেখান থেকে থানায় নির্দেশ দেওয়া হলেও থানা থেকে কোন পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানায়। চেয়ারম্যান আজিজুর এর সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এলাকায় এখন জনশূন্য হয়ে পড়েছে বলে এ দাবি করে ভুক্তভোগীরা। এ বিষয় চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয় কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনার রশিদ মৃধার নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।