কণ্ঠ ডেস্ক
বিগত বছরগুলোয় শ্রম ইস্যুতে বিশ্বমহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যতটা ক্ষুণ্ন হয়েছে তা পুনরুদ্ধারে শ্রম সংস্কার কমিশন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শ্রম সংস্কার কমিশন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রমভবনের সভা কক্ষে কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করতে গিয়ে চাকরিচ্যুতি, হুমকি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন অনেক শ্রমিক। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে নানারকম বৈচিত্র। শিশু থেকে বৃদ্ধ, নিরক্ষর থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী, সমতল থেকে পাহাড়ি, সব শ্রমিকের সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে বাষ্ট্রকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমিশনা প্রধান আরও জানান, শ্রম সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশের সব শ্রমিকের অধিকারের সুরক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নে সচেষ্ট থাকবে। শ্রমিকের জন্য গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শোভন ও মর্যদাপূর্ণ কর্মসংস্থান, কাজের নিরাপত্তা, জাতীয় ন্যূনতম ও ন্যায্য মর্যাদাপূর্ণ মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, সংগঠিত হওয়া, দর কষাকষির ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের চর্চা, শিল্পখাত বিকাশ স্বার্থে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি পর্যালোচনা ও সুপারিশসহ ন্যায্য অংশিদারত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশন প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে। সুপারিশসমূহ শুধু শ্রমিক ও শিল্প স্বার্থ এবং শিল্পসম্পর্ক চর্চা, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং মর্যাদাকর বাংলাদেশ গড়ে তোলার অভিযাত্রায় অবদান রাখবে।শ্রম সংস্কার কমিশন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে সকল বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে কাজ করবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে–– শ্রম আইন সংস্কার, শ্রম সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের কাঠামোগত সংস্কার, শিল্পসম্পর্ক ও ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থার উন্নয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন, সংগঠিত হওয়া ও দর কষাকষির চর্চার পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও বিরোধ নিষ্পত্তি, কর্মসংস্থান ও চাকরির নিরাপত্তা, মজুরি ও ক্ষতিপূরণের মানদক, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন, অভিবাসী শ্রমিক সুরক্ষা, শিশুশ্রম নিরসন, শ্রমজীবী কিশোর কিশোরীদের সুরক্ষা, পিছিয়ে পড়া শ্রমিক যেমন– নারী, কৃষি, গ্রামীণ শ্রমিক, গৃহশ্রমিক, খামারভিত্তিক, মৌসুমি, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রমজীবী গোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা ও অন্যান্য।সুপারিশ প্রণয়নের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, ঘোষণা ও নীতিমালা, মানবাধিকার, পরিবেশ, অভিবাসন ও ব্যবসা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দলিলাদি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ২০৩০), এলডিসি গ্রাজুয়েশনে অনুসরণীয় বিষয়াদি এবং উন্নয়ন সহযোগী ও ক্রেতারাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাশা ও নীতিমালা। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের সব (প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক) শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদাকর জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন–– শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের (শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং পরিবেশ) সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ) অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্তসহ কমিশনের আরও অন্যান্য সদস্যরা।