এম কামরুজ্জামান,শ্যামনগর
গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে নওয়াবেঁকী গণমূখী ফাউন্ডেশন (এনজিএফ) Resilient Homestead and Livelihood Support to the Vulnerable Coastal People of Bangladesh (RHL) শীর্ষক প্রকল্পটি শ্যামনগর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে পরিচালিত হচ্ছে। জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে, নওয়াবেঁকী গণমূখী ফাউন্ডেশনের RHL প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পভুক্ত ৯০০ উপকারভোগীর মাঝে প্রত্যেককে পাঁচটি করে (নিম, নারিকেল, কদবেল, সফেদা এবং পেয়ারা) মোট ৪৫০০ টি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। চারা বিতরনের সময় প্রকল্প সমন্বয়কারী জনাব মো: মাসুদুল হক সবুজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেনিএনজিএফ-এর সমৃদ্ধি প্রকল্পের সমন্বয়কারী জনাব হাসান ইকবাল রাসেল, আটুলিয়া পরিবেশ উন্নয়ন ক্লাবের সেক্রেটারি জনাব স্বপন কুমার বিশ্বাস, RHL প্রকল্পের একাউন্টস এন্ড এডমিন অফিসার জনাব ফয়সাল আহমেদ এবং বনায়ন বিষয়ক কমিউনিটি মোবিলাইজেশন অফিসার জনাব মাহ্দী হাসান। চারা প্রদানের পাশাপাশি সঠিকভাবে চারা রোপণ এবং রক্ষনাবেক্ষণ সম্পর্কে মাহ্দী হাসান দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। উপকূলীয় পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এসকল উদ্ভিদ শুধু বাড়ির আঙিনাকে সবুজায়নের মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই অবদান রাখে না, বরং এটি মানুষের জীবনের সুরক্ষা এবং বাসস্থানকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার মতো উপকূলীয় এলাকার চিরাচরিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এই উদ্ভিদসমূহ প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। উদ্ভিদগুলো মাটির ক্ষয় রোধ করে, ভূমির উর্বরতা বজায় রাখে এবং পানির সংরক্ষণে সহায়তা করে। এর ফলে স্থানীয় কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত হয়।জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এই উদ্ভিদগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পাখি, মৌমাছি, প্রজাপতি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী প্রাণীর জন্য আশ্রয় ও খাদ্য উৎস সরবরাহ করে, যা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রকে টেকসই রাখে। পাশাপাশি, অনেক গাছের ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে যা স্থানীয় জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এই উদ্ভিদসমূহের রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি ও ভেষজ গুণাগুন।
দীর্ঘমেয়াদে এসমস্ত উদ্ভিদ কেবল পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমেই নয়, বরং স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কাঠ, ফল, ওষুধ এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আয়ের একটি উৎস তৈরি হয়, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক। এছাড়া, বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কার্বন সংরক্ষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা সম্ভব, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখে।উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এই উদ্যোগটি কেবল সবুজায়নের একটি পদক্ষেপ নয়, বরং টেকসই উন্নয়নের একটি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। এটি শ্যামনগরের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ, টেকসই এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে আশা করা যায়।