মোঃ ইব্রাহিম খলিল
সাতক্ষীরায় বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের জায়গা ভরাটের নামে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১০ নং আগরদাড়ী ইউনিয়নের রামেরডাঙ্গা খাল থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে অবাধে ভূগর্ভস্থ থেকে মাসব্যাপী বালু উত্তোলন করছে। উত্তোলনকৃত বালু (৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র তৈরির নিমিত্তে বালুমহল থেকে বালু ক্রয় না করে ১০টাকা ফুট চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তথা বালু উত্তোলন করছে বালু খাদক আব্দুর রহিম। বালু খাদক আব্দুর রহিম আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া গ্রামের মৃত আহম্মেদ আলী গাজীর ছেলে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জায়গা ভরাটের চুক্তিবদ্ধ মুল ঠিকাদার থেকে মৌখিক চুক্তিতে সাব ঠিকাদার তুহিন হোসেন আইনের তোয়াক্কা না করেই অবলীলায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ আহরণ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জনবসতি এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে যেকোনো সময় ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই জায়গার মালিকানা সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। জমির পরিমান ৫৫ শতক, প্রকল্পের নাম “বি,আর,ই,বি নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি” খুলনা বিভাগ। নতুন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের জায়গা ভরাটের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কে ফুট প্রতি বালুর মুল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা। অথচ অধিক লাভের আশায় বশীভূত হয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। অবৈধভাবে এসব বালু উত্তোলনে ইন্ধন দাতা হিসেবে কাজ করছে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান। বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের জায়গা ভরাটের জন্য দেড় লক্ষ ফুট বালু উত্তোলনের নিমিত্তে ১৫ লক্ষ টাকা চুক্তি করেছে মেশিন মালিকের সাথে। বাকি টাকার বড় একটি অংশ পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের পকেটে। আর বাকি টাকা পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এসব দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। এদিকে সাব ঠিকাদার কর্তৃক চুক্তি বদ্ধ টাকা থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। এ ঘটনায় ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ সহ সচেতন মহল বালু উত্তোলন কারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি অবৈধ পন্থায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। “ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে” অধিক মাত্রায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে ফসলি জমি, জনবসতি এমনকি নদ নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী কুলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি,বায়ু দূষণ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিনকেদিন বিপন্নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ু দূষণে প্রতিনিয়ত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে উদ্ভিদ ও প্রানী কুলের মধ্যে পরিবর্তন হওয়ার কারনে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্য প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যপক হারে পাল্টে যাচ্ছে। নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পানি দূষণ ও নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন নদ- নদী ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। অবাধে বালু উত্তোলনের নিকটবর্তী স্থানে মাটির ক্ষয় হওয়ার পাশাপাশি মাটির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে। বালু উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে নলকূপের পানি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। বালু উত্তোলনের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে ব্যপক হারে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এ বিষয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।