এম কামরুজ্জামান,শ্যামনগর
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার মোড়ল ও উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি পদ্মাপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাজাদুল ইসলাম কর্তৃক চিংড়ী ঘের দখল ও হয়রানি মূলক মামলায় জড়ানোর হুমকিতে পদ্মপুকুর ইউনিয়নে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ১১ নভেম্বর বেলা ১২ টার দিকে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সোনাখালী চন্ডিপুর মডেলের সামনে চিংড়ি ঘের ও জমির মালিকগণের আয়োজনে মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য রাখেন বিসমিল্লাহ ফিস -৩ এর স্বত্ব অধিকারী জি এম রবিউল্লাহ বাহার। এসময় উপস্থিত ছিলেন জমির মালিক তারক চন্দ্র সরকার, বিল্লাল হোসেন,মাখন লাল সরকার, মাস্টার হাবিবুর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য মমতাজুর রহমান সহ শত শত জমির মালিক ও নারী-পুরুষ।মানববন্ধন অনুষ্ঠিনে বক্তব্য রাখেন কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান, কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান,জমির মালিক হাবিবুর রহমান প্রমুখ। সকলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমির মালিক রবিউল্লাহ বাহার,ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পট পরিবর্তনের পর আপামর দেশবাসীর মত আমরাও আশাবাদি হয়েছিলাম। কিন্তু জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার মোড়লের ষড়যন্ত্র ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলামের হুমকিতে আজ আমরা চরম বিপদাপন্ন। সদয় জ্ঞাতার্থে আরও জানাচ্ছি, আমরা শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাঁপা মৌজাভুক্ত ‘বিসমিল্লাহ-০৩’ নামীয় মৎস্য প্রকল্পের আওতাধীন জমির মালিকগন। উপকুলবর্তী আমাদের এই এলাকা অত্যন্ত দুর্যোগ প্রবণ। আমরা এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ মৎস্য চষের উপর নির্ভরশীল।আমরা প্রায় শতাধিক ভুমি মালিক আমাদের স্বত্ত দখলীয় প্রায় ৪০০ একর জমি বিগত ১৯৯৭ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মৃত শমসের আলী গাজীর নিকট লীজ প্রদান করি। পরবর্তীতে উক্ত সমশের আলী তারই পরিচিত বন্দকাটি গ্রামের আব্দুস সাত্তার মোড়লকে যৌথভাবে অংশীদার হিসেবে নিযুক্ত করে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। তারপর থেকে ১৯৯৭ সাল থেকে শমসের আলী গাজী ও সাত্তার মোড়ল দুই নামে জমি মালিকদের সাথে মৎস্য প্রকল্পের চুক্তিপত্র দিয়ে আসছে। তবে ২০২০ সালেল দিকে সমশের আলী গাজীর মৃত্যুর পরে উক্ত ঘের পরিচালনার দায়িত্ব সাত্তার মোড়লের উপর বর্তায়। সেই কারনে সাত্তার মোড়ল এবং সমশের আলী গাজীর নামে বর্তমান ২০২৪ সাল পর্যন্ত জমির ডিড রয়েছে। সাত্তার মোড়ল ২০২৩ সালের হারীর টাকা আটকে রেখে তার একক নামে জমি ডিড দিতে চাপ প্রয়োগ করে। এমনকি তার একার নামে সমুদয় সম্পত্তি লীজ বা ডিড না দিলে ২০২৩ সালের বকেয়া হারী পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। এমতাবস্থায় আর্থিক অনটনের মধ্যে অসংখ্য স্থানে দৌড়াদৌড়ির পরও প্রতিকার না পেয়ে আব্দুস সাত্তারের এক নামে আমরা ডিড প্রদানে বাধ্য হই। আর ঐ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চতুর আব্দুস সাত্তার মোড়ল পরক্ষনে মুল উদ্যোক্তা মৃত শমসের আলী গাজীর ছেলেদের প্রাপ্য না মিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে আব্দুস সাত্তারের চাতুরতা বুঝতে পেরে বিষয়টি নিয়ে আমরা জমি মালিকগন বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানায়। একপর্যায়ে প্রাপ্য হারীর টাকা বুঝে পেয়ে ২০২৩ সালের জন্য শমসের আলী গাজীর ছেলেদের নামে আমরা আমাদের প্রায় ৪০০ একর জমি ডিড দিয়েছি। যদিও ঝাঁপা মৌজাভুক্ত উক্ত মৎস্য প্রকল্পের মধ্যে মরহুম সমশের আলী গাজীর নিজস্ব জমি আছে। কোন বিপদে আপদে শমসের আলী গাজীর দারা আমরা উপকৃত হতাম। যার প্রেক্ষিতে আমরা সকল জমি মালিক সমশের গাজীকে শুরু থেকে চিংড়ি ঘের পরিচালনার জন্য নিজেদের জমি প্রদান করেছিলাম। ছাত্তার মোড়লকে আমরা কখনো কোন জমি দেয়নি এবং দিব না। মালিকদের থেকে লীজ না পেয়ে আব্দুস সাত্তার নানা কুট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। প্রভাবশালী হওয়ার সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির ঔ কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের জমিতে জোরপুর্বক পানি তুলে নিজে চিংড়ি ঘের করার হুমকি দিচ্ছে। অব্যাহতভাবে হারীর টাকা দাবির মুখে উক্ত আব্দুস সাত্তার চলতি ২০২৪ সালের এক কানাকড়ি পরিশোধ না করেই ঘের ছেড়ে লোকজন নিয়ে চলে যায়। এসময় আমরা নিরুপায় হয়ে আমর মরহুম শমসের আলী গাজীর ছেলেদের শরনাপন্ন হই এবং ২০২৪ সালের জন্য হারীর টাকা দাবি করি। একপর্যায়ে আমাদের সকল ভুমি মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে শমসের আলী গাজীর ছেলেরা আমাদের সমুদয় টাকা পরিশোধ করলে তাদের অনুকুলে আমরা জমি লীজ প্রদান করি। সম্প্রতি আমরা জানতে পারলাম জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার মোড়ল বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার পাঁয়তারা করছে। পট পরিবর্তনের কারনে নিজেকে কিছুটা আড়ালে রেখে তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি স্থানীয় চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলামের শরনাপন্ন কাঁধে ভর করেছেন। চতুর আব্দুস সাত্তার মোড়ল সম্প্রতি তার অংশের ৮০ শতাংশ বিএনপি নেতা আমজাদুল ইসলামের নামে হস্তান্তর করেন। তবে দখলবাঁজ নেতাকর্মীদের ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ‘কড়া পদক্ষেপে’র সম্ভাবনা থাকায় শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি ৫ আগষ্ট পুর্ববর্তী সময় অর্থাৎ গত ০১/০৪/২৪ তারিখের বলে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। যার স্পষ্ট প্রমান মেলে একই ঘেরের মালিকানা দাবি করে আব্দুস সাত্তার ও আমজাদুলের পক্ষ হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেনা বাহিনীর কাছে গত ২৯/০৯/২৪ তারিখে পরস্পর বিরোধী ভিন্ন দু’টি লিখিত অভিযোগ থেকে।চেয়ারম্যান আমজাদুল অত্যন্ত ভয়ংকর প্রকৃতির মানুষ। দুর্ঘর্ষ্য স্বভাবের উক্ত বিএনপি নেতা নিজ প্রভাব খাটিয়ে সমগ্র ঘেরের জমি মালিকদের নানাভাবে ভীত সন্ত্রস্থ করছেন। তার ভয়ে আমরা রীতিমত অসহায় অনুভব করছি। প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হওয়ার সুযোগ নিয়ে পরিবর্তিত পরিস্তিতিতে তিনি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাকে উদ্ধারে মাঠে নেমেছেন।আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরও জানাচ্ছি বিএনপি নেতা আমজাদুল ইসলাম আমাদের স্বত্ত¡ দখলীয় জমি ও ঘের দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুস সাত্তারের পক্ষে শমসের আলী গাজীর ছেলেদের সরিয়ে ঘেরের মালিকানা নিতে তিনি নানা দুরভিসন্ধি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের মত নিরীহ মানুষকে হয়রানীর হুমকি দিচ্ছেন তিনি। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা জানান দিয়ে আমজাদুল ইসলাম ঘের দখলে বিরোধীতাকারীদের হয়রানীমুলক মামলা জড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন।এমতাবস্থায় আমাদের মত নিরুপায় ও অসহায় শ্রেনীর শেষ ভরসা সাংবাদিকদের কাছে আকুল আবেদন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতার প্রেতাত্মা হয়ে আবির্ভুত বিএনপি নেতা আমজাদুল ইসলামের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। ষড়যন্ত্র করে তারা আমাদের মত নীরিহ মানুষদের নিস্কন্টক জমি জবর দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। তারা জাল হস্তান্তরপত্র তৈরী করে আমাদেরই স্বত্ত দখলীয় জমিতে আমরা শতাধিক ভুমি মালিকসহ ঘের মালিক শমসের আলী গাজীর ছেলেদের প্রবেশ ঠেকাতে নানান কুট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। সবশেষে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতার কবল থেকে আমাদের জমি ও ঘের জবর দখলমুক্ত রাখতে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে গত ১লা জানুয়ারি-২০২৪ সাল থেকে বিসমিল্লাহ প্রকল্প-২ মৎস্য ঘেরটি যৌথ মালিক বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার মোড়ল ২০/% ও আমি ৮০%। এক থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ করে মাছ ছাড়া সহ সকল কার্যক্রম শেষ করে শান্তিপূর্ণভাবে ঘের করে আসছি। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদল তার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরে।গত ৬ ৬ই আগস্ট রবিউল্লাহ বাহারের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার ও সাত্তার মোড়লের যৌথ ঘেরটি দখল করে। আমি অত্র ইউনিয়নে বিপুল ভোটে টানা তিন বাচ্চার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় সাতক্ষীরা এটিএম কোডের শরণাপন্ন হয়। এবং উপজেলা বিএনপি ও জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের শরণাপন্ন হয়েছে। তাদের কথামতো মীমাংসার জন্য অপেক্ষায় আছি। হঠাৎ করে আজ সোমবার আপনাদেরকে একত্রিত করে মানববন্ধনের ব্যানারে আমার ছবিতে লাল করাচ্ছিন্ন দিয়ে আমার মান-সম্মান নষ্ট করেছে। এই চিহ্ন দিয়ে আমার মেরে ফেলবে বলে আমি মনে মনে করি।