1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

খারাপ সময়ে সবাই নিজেরটাই আগে দেখে

  • প্রকাশের সময় সোমবার, ৪ মে, ২০২০
  • ১০৯ বার সংবাদটি পাঠিত

করোনাভাইরাস কত দিন থাকবে, সেটা আমরা জানি না। এখন ভাইরাসের চেয়েও আমার কাছে বড় চিন্তার বিষয়, কত মানুষ না খেয়ে আছে এবং আগামী দিনগুলোতে না খেয়ে থাকতে হয় কিনা।

বাংলাদেশের মানুষ ঘাতসহিষ্ণু। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে তারা কোনো না–কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। তবে এবারের দুর্যোগটি ভিন্ন। এবার সারা পৃথিবী আক্রান্ত। পরিস্থিতি অন্য রকম। এই অন্য রকম পরিস্থিতিতেও মানুষ এগিয়ে এসেছে। কিছু ভালো দিক আমরা দেখতে পাচ্ছি। মানুষ মানুষকে সহায়তার জন্য দারুণভাবে এগিয়ে এসেছে। দেশজুড়ে এমন সহায়তার খবর পাচ্ছি। আবার আমার পরিচিতজন ও আমার পরিবারের সদস্যদের দেখছি, তারা দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে নানাভাবে সহায়তা করছে।

মানুষ কীভাবে এগিয়ে এসেছে তার কিছু উদাহরণ দিই। কেউ দরিদ্রদের খাবার দিচ্ছে। কেউ কৃষকের সবজি ন্যায্য দামে কিনে এনে বস্তিতে বিনা মূল্যে বিতরণ করছে। কেউ নিম্নবিত্ত পরিবারের কাছে সবার অগোচরে খাবারসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। আমি একটি হাসপাতালে দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) তৈরির কাজ দিলাম একটি পোশাক কারখানাকে। তারা এই কাজটি বিনা মূল্যে করে দিয়েছে। এ দেশের মানুষ বিপদের সময় মানুষকে সহায়তায় এগিয়ে আসে। সেটা আবার প্রমাণিত হলো।

আরেকটি পরিবর্তন হলো, ডিজিটাল ব্যবস্থায় মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে। আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারপারসন। সাধারণ ছুটি শুরুর আগে আমরা সব শিক্ষকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করলাম। আমরা ঠিক করলাম, অনলাইনে পড়ার কার্যক্রম চালিয়ে নেব। আমার নাতি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করে। সে জানিয়েছে, তারা অনলাইনে ক্লাস করছে। আমি এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে করলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা রাখে। কেউ কেউ জানত না। এখন দেখা যাচ্ছে, সবাই অনলাইনে ক্লাস নেওয়া ও ক্লাস করা রপ্ত করেছে।

শিক্ষার্থীরাও খুব আনন্দিত। তারা বলছে, সাধারণ সময়েও এত ভালো পড়াশোনা তারা করতে পারেনি। এখন পারছে। কারণ, শিক্ষকদের সব সময় পাওয়া যাচ্ছে। আমরা নিজেরাও এখন দিনে দরকার হলে দুবারও অনলাইনে বৈঠক করি।

আমার মনে হয়, করোনাভাইরাস অর্থনীতিতে বড় চাপ ফেলবে। পোশাক কারখানায় ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। আমি চাই না, কোনো লোক ছাঁটাই হোক। কারণ, একজনের ওপর একটা পরিবার নির্ভর করে। তাই ছাঁটাই না করে এই সময়টা কোনোভাবে কাটিয়ে নিতে পারলে ভালো হবে। চীনের আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বলেছেন, এ বছর কোম্পানিগুলোর মুনাফার চিন্তাই করা উচিত নয়। আমরা যদি বেঁচে থাকি, সেটাই হবে মুনাফা।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালির মতো দেশে যেভাবে মানুষ মারা গেছে, যেভাবে অর্থনীতির নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে তত মানুষ মারা যায়নি। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমবেই। ওরা আমাদের সহায়তা করবে, সেটা আশা করা যায় না। কারণ, তারা নিজেরাই বিপদে রয়েছে। তবে আমরা নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। হয়তো অনেক কষ্ট করতে হবে।

ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে আমাদের বেশি জোর দিতে হবে। এখন খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। এর কারণ, কৃষকেরা কাজ করেছে। তাদের ওপর বিনিয়োগ করতে হবে। সর্বজনীন চিকিৎসা, সর্বজনীন পেনশন, সর্বজনীন বিমা—এগুলো অনেক আগেই দরকার ছিল। যেহেতু হয়নি, এবার সেটা করতে হবে, সেটা যেভাবেই হোক।

খারাপ সময়ে সবাই নিজেরটাই আগে দেখে। তাই আমাদের প্রস্তুতি আমাদের নিজেদেরই নিতে হবে।

রোকিয়া আফজাল রহমান : উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION