কণ্ঠ ডেস্ক:
দাম বেশি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে ইলিশ। আর চড়া দামের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ দেশের বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ছোট-বড় যে কোনো আকারের ইলিশের চাহিদা রয়েছে। আকার বড় হলে তো আরো ভালো। এ বছর জেলেদের জালে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম, আবার কখনো এক বা দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু এর প্রায় বেশিরভাগই রফতানি হয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ সাগর থেকে সংগ্রহ করে সেখানকার বাজারে তুলছে। ইলিশের দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের ট্রলার থেকে নিয়ে তা বেশি দামে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এ ছাড়াও সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্থলবন্দর কাকদ্বীপ হয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ। ফলে দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্খিত ইলিশ। কোনোভাবেই ইলিশ পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পাওয়ায় বৈধপথে ইলিশ রফতানি তো আছেই। এ বছর সরকার ইলিশ রফতানির সুযোগ দিয়েছে ৩ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশের ইলিশ ব্যবসায়ী ও জেলেদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলাসহ আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সঙ্গে ইলিশও চলে যাচ্ছে। আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে বৈধপথে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে রুই, পাবদা, কৈ, শিংসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রফতানি হচ্ছে। এর সঙ্গে অবৈধভাবে রফতানি হচ্ছে ইলিশ। কার্টুনের উপরভাগে রুই, পাবদা, কৈ, শিং লেখা থাকলেও নিচে লুকিয়ে রাখা হয় ইলিশ। আর স্থলবন্দরে কড়াকড়ি না থাকায় পাচার বাড়ছে। সূত্র জানায়, দেশের বাজারে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশ মাছের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। ইলিশের আকার-ওজন এক কেজির বেশি হলে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বারাসাত ও হাওড়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ৯০০ গ্রাম থেকে ১০০০ গ্রাম বা এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ২০০ রূপি দরে, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় ২ হাজার ৪৭০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৬০ টাকা দরে। (ভারতীয় ১০০ রূপি বাংলাদেশের ১৩০ টাকা হিসেবে)। একইভাবে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের বিভিন্ন বাজারে একই ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ রূপি থেকে ২ হাজার রূপি দরে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৩৪০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। সূত্র আরো জানায়, কলকাতার বিভিন্ন বাজারে এখন ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দুর্গা পূজা উলপক্ষে কলকাতায় ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। সেক্ষেত্রে দামের চেয়ে ইলিশ পাওয়াটাই মুখ্য। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গতবছরের তুলনায় অনেক বেশি দামে এবছর ইলিশ কিনছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ থেকে প্রতি কেজি ইলিশ বাংলাদেশি টাকায় ১৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। দেশের ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানান, জেলেদের দুঃসময়ে দুঃসময়ে দাদন দেয়া হয়। আর দাদনের টাকা পরিশোধে জেলেরা ব্যবসায়ীদের ইলিশ দেয়। ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারে তা সরবরাহ করে। কিন্তু এ বছর নানা কারণেই ইলিশ কম ধরা পড়ছে। ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত ইলিশ মিলছে না। এর উপরে ভারতে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। দামও মিলছে ভালো। ভারতের ব্যবসায়ীরা সাগর থেকেই ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের বাজারেও গতবছরের তুলনায় এবছর ইলিশের সরবরাহ কম। ফলে নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে আসেনি ইলিশের দাম। আকার-ওজনের উপর নির্ভর করা এ মাছের দাম সব সময়ই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থাকে। অক্টোবরের ১৩ তারিখ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা, বাজারজাত, বিপণন বন্ধ থাকবে। ওই ২২ দিন কেউ কাউকে উপহার হিসেবেও ইলিশ দেয়া যাবে না। করা যাবে না ইলিশ সংরক্ষণও। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। ইলিশের ওজন এক কেজির বেশি হলে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়ার কোনো কারণ নাই। তিন হাজার টন ইলিশ চাঁদপুরে এক দিনের উৎপাদনও নয়। এটি ইলিশের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে না।