কন্ঠ ডেস্ক
চার দশক কোনো টাকা না নিয়েই মসজিদে ইমামতি করে বিদায়বেলায় পেয়েছিলেন গ্রামবাসীর জমকালো সংবর্ধনা। স্থানীয় যুবকরা মোটরসাইকেলবহরে করে তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাড়িতে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার সেই ইমাম ওমরাহ পালন করতে গিয়ে পবিত্র মক্কা নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। নিহত ওই ইমামের নাম মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম (৭৬)। সিরাজুল ইসলাম পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্য তারাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তারাকান্দি আকন্দ বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। ৪৮ বছর ইমামতি করে ৭৫ বছর বয়সে বার্ধক্যের জন্য গত বছরের মার্চ মাসে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে প্রায় চার দশক তিনি বিনা বেতনে ইমামতি করার কারণে বিদায়বেলায় গ্রামবাসী তাকে জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। এমনকি মোটরসাইকেলবহরে করে সিরাজুলকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন গ্রামের যুবকরা। বিষয়টি তখন এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছিল। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তখন এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। সিরাজুল ইসলাম ঐতিহাসিক তারাকান্দি ঈদগাহ মাঠের ইমাম ছিলেন। ছিলেন পাকুন্দিয়ার চরফরাদি দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার (প্রধান শিক্ষক) এবং তারাকান্দি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি। সিরাজুল ইসলামের ছোট ছেলে আকিকুল ইসলাম বলেন, বাবার কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। পরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি হজ এজেন্সিকে জানায় পুলিশ। পরে তারা ফোন করে মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের জানায়। তিনি আরও জানান, ওমরাহ পালন করতে গিয়ে তার বাবা কাফেলা থেকে দলছুট হয়ে যাওয়ায় তার কাছে ভিসা-পাসপোর্ট কিছু ছিল না। এ কারণে মৃত্যুর খবর তাদের কাছে পৌঁছাতে চার দিন লেগে গেছে। সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে আকিক জানান, আগামীকাল সোমবার মক্কা নগরীর জান্নাতুল মুয়াল্লা কবরস্থানে বাবার লাশ দাফন করা হবে। পারিবারিক সূত্র জানায়, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ওমরাহ পালনরত অবস্থায় সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে নবীজির বাড়ির অদূরে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৯টার দিকে হেঁটে রাস্তা পারাপারের সময় একটি গাড়ি তাকে চাপা দেয়। এর আগের দিন পবিত্র ওমরাহ পালন করতে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েসহ অনেক আত্মীয়স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।