কণ্ঠ ডেস্ক
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আরো তিন মাস বাড়ানো হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্র জমার মেয়াদ। মূলত বিদেশী কোম্পানিগুলো থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এতে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ আরো পিছিয়ে গেল। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পেট্রোবাংলা গত ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করেছিলো। দরপত্রে অংশ নিতে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরইমধ্যে দর প্রস্তাব কিনেছে ছয়টি বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি। দরপত্র জমার সময় ছিল ছয় মাস ছিলো এবং তা গত ৯ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যায়। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অংশে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টিসহ ২৬টি বøক রয়েছে। এর মধ্যে কনোকোফিলিপস ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি বøকে কাজ নেয়। প্রতিষ্ঠানটি দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা কাজ ছেড়ে চলে যায়। একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। এখন একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি বøকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। এই দুটি বাদ দিয়ে বাকি ২৪টি বøকে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করতে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) আকর্ষণীয় করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আগের চেয়ে বেশ কিছু সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। দরপত্রে দেশের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির স্বার্থও দেখা হয়েছে। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রুডের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে ওঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে আট ডলার। দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও কমানো হয়েছে। আগ্রহী কোম্পানির দরপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হলে পেট্রোবাংলা তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এরপর সেগুলো মূল্যায়ন করে চ‚ড়ান্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হলে তাদের সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে। তবে এর আগেও দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবে পেট্রোবাংলা। সব প্রক্রিয়া শেষে গ্যাস উত্তোলন পর্যন্ত প্রায় সাত-আট বছর সময় লাগতে পারে। সূত্র আরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে প্রাথমিক সম্ভাবনা যাচাই করতে জার্মানির কোম্পানি দিয়ে বহুমাত্রিক জরিপ চালানো হয়েছে। ওই জরিপের তথ্য এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি কিনে নিয়েছে। দরপত্রে আগ্রহী যে কোনো কোম্পানি জরিপের তথ্যগুলো কিনতে পারবে। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার কাছে কনোকোফিলিপসের পরিচালিত দ্বিমাত্রিক জরিপের তথ্যও আছে। এতেও বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের সম্ভাবনা দেখা গেছে। যদিও অনুসন্ধান ক‚প খনন ছাড়া উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার করা যায় না। তবে এখন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে কোনো ক‚প খনন করা হয়নি। যদিও একই সমুদ্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমার গ্যাস পেয়েছে। এদিকে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দরপত্রের সময় বাড়ানোতে যদি বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়ে তাহলে তো সময় বাড়ানো খারাপ কিছু নয়। তবে আর মেয়াদ বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ সমুদ্রে অনুসন্ধানে এমনিতেই অনেক পিছিয়ে গেছে। সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালোভাবে যদি অনুসন্ধানের কাজ শুরু হয়, তাহলে হয়তো নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি দরপত্রের সময় বাড়াতে বলেছিলো, তাদের অনুরোধে সময় তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। এতে আরো কয়েকটি কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়বে।