কণ্ঠ ডেস্ক
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যে সকল পুলিশ সদস্য এখনো পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগদান করেননি, লুকিয়ে রয়েছেন, তাদের আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বুধবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আনসার ভিডিপি অ্যাকাডেমিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহীদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের হতে পারেনি বলেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যে সকল পুলিশ সদস্য এখনো পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগদান করেননি, লুকিয়ে রয়েছেন, তাদের আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে এখনো কাজে যোগ দেয়নি এমন পুলিশের সংখ্যা খুবই নগণ্য বলেও জানান তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল ভোগ করবে দেশের জনগণ। সেনাবাহিনী অনেকদিন ধরে মাঠে থেকে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। জনসেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। সেটা পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করছে সেনাবাহিনী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি জনবান্ধব সুশৃঙ্খল বাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে সাধারণ জনগণের কোনো সমস্যা নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সংস্কারের মাধ্যমে একটি দক্ষ, সুসংগঠিত, পেশাদার ও সময়োপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে যা যা করণীয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তা তা করা হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি জরুরি মুহূর্তে আনসার বাহিনীর সদস্যরা গভীর দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে এসেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বিধানসহ ক‚টনৈতিক এলাকার সুরক্ষায় এ বাহিনী বিশেষ ভ‚মিকা রেখে চলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থানা, ট্র্যাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তিনি বলেন, বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর স্বল্পতার মাঝেও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি জাতির জরুরি প্রয়োজনে সাহসী ভ‚মিকা রাখার জন্য বাহিনীটির সব সদস্যকে প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী ভিডিপি সদস্যরাও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক ভ‚মিকা রেখেছে। সা¤প্রতিক সময়ে গ্রামে গ্রামে যে সামাজিক নিরাপত্তা সংকট দেখা দিয়েছিল, ভিডিপি সদস্যরা তা নিরসনে প্রশংসনীয় ভ‚মিকা রেখেছে। তিনি বলেন, যারা মন্দির, গির্জা, চার্চে হামলা চালিয়ে সা¤প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ভিডিপি সদস্যরা। তারা ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে পাহারা বসিয়ে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি রক্ষায় অবদান রেখেছিল। উপদেষ্টা ভবিষ্যতেও ভিডিপি সদস্যরা তারুণ্য নির্ভর স্বেচ্ছাসেবকের ভ‚মিকায় সুসংগঠিত হয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তায় আরো বেশি অবদান রাখবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসান জানান, কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মৌলিক প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সালাম গ্রহণ করেন এবং কৃতী প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন।