1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

গর্ভবতী নারীর আতঙ্কসেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচারে ডা. নিকুঞ্জ বিহারীর সাফল্য

  • প্রকাশের সময় মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৩ বার সংবাদটি পাঠিত

কাজী নূর

প্লাসেন্টা হলো গর্ভফুল। যার মাধ্যমে বাচ্চা জরায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। গর্ভফুলের অবস্থান সাধারণত জরায়ুর ভেতরে ওপরের দিকে থাকে। এই গর্ভফুল কোনো কারণে যদি জরায়ুর নিচের দিকে নেমে যায়, তখন তাকে বলে সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta previa) বলা হয়। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা।
মূলত প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ০৪ টি স্টেজের হয়ে থাকে। এর মধ্যে চতুর্থ এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্টেজ হচ্ছে সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া। সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া গর্ভবতী নারীদের মধ্যে বিকাশ হওয়া একটি বিরলতম মেডিকেল কন্ডিশন। এমন রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপাচার করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন চিকিৎসক। কেননা সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া রোগীর অস্ত্রোপাচার মানেই ১৫ থেকে ২০ ব্যাগেরও অধিক রক্তের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়া রোগীর মৃত্যুঝুঁকি তো থেকেই থাকে।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়া রোগীর প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে ডেলিভারি প্রসেসের অংশ হিসেবে জরায়ুর নিচের অংশ স্ফীত হতে শুরু করে। বিপদ হচ্ছে, গর্ভফুল জরায়ুর নিচে অবস্থান করলে বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার আগেই জরায়ু স্ফীত হওয়ায় গর্ভফুল আলাদা হতে শুরু করে। এর ফলে রক্তের বন্যায় ভেসে যান গর্ভবতী মা। চপ চপ তাজা লাল রক্ত!
তবে এমন ঝুঁকিকে পাশ কাটিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে রক্তপাত ছাড়াই সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপাচার করে সাফল্য অর্জন করেছেন যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সাবেক প্রধান ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রথম তিনি এমন পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে সাফল্য অর্জন করেছেন।

ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানিয়েছেন, গত ১৫ আগস্ট যশোর শহরের বেসরকারি কিংস মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাহাবুব হোসেনের স্ত্রী নীরা বেগমকে (২৫)। গর্ভবতী অবস্থায় তার প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়েছিলো। ভর্তির দিনেই রোগীর প্রথম সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন তিনি। এর দুই দিন পর ১৭ আগস্ট দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর গর্ভফুল অপসারণ করেন তিনি। রক্তপাত ছাড়াই বিকল্প পদ্ধতিতে সফল অস্ত্রোপচারের কারণে রোগীর পরিবারের লোকজন দারুণ খুশি হয়েছেন।

ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানান, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলো একটি মারাত্মক জটিল অবস্থা। সাধারণত গর্ভবতী নারীদের জরায়ুর ওপরে গর্ভফুল থাকে। আর প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে, ফুল একদম নিচের দিকে চলে এসে গর্ভফুলটি জরায়ুর মুখে লেগে থাকে। যা রোগীর জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হয়ে ওঠে।
তিনি আরো বলেন, এমন অবস্থায় অস্ত্রোপচার করাও তুলনামূলকভাবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সন্তান প্রসবের সময় মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। কারণ যখন সার্ভিক্স (জরায়ুর গ্রীবা) খোলে তখন এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কেননা প্লাসেন্টা খুব শিগগিরই জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফলে রোগীর মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাত ঘটে, যা শিশুকেও প্রভাবিত করে।

ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানান, এই রোগীর অস্ত্রোপচারে নিজস্ব চিন্তা চেতনা, অভিজ্ঞতা থেকে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। পদ্ধতি প্রয়োগে রক্তপাতবিহীন রোগীর অস্ত্রোপচারে সফলতা এসেছে। তবে এক্ষেত্রে দুইবার রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রথম অস্ত্রোপচারে জরায়ু ও গর্ভফুল ভিতরে রেখে শুধু সন্তান বের করে আনা হয়। এরপর চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভফুল বেরসহ বাকি কাজটুকু করা হয়েছে। তার জানামতে, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রক্তপাতবিহীন সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচার তিনিই প্রথমবার করেছেন।

রোগীর স্বামী মাহবুব হোসেন জানান, তার স্ত্রী (নীরা বেগম) গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে একাধিক গাইনী সার্জনের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হওয়ার পর চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে কেউ ঝুঁকি নিতে চাননি। সর্বশেষ ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদারের কাছে আনা হয়। অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা সেবায় বর্তমানে তার স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ আছে। রক্তপাতবিহীন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসক সকলকে অবাক করে দিয়েছেন।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION