আসাদুজ্জমান সনেট
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ড্রাগন ফলের চাষ। এই ফলের চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন চাষিরা। এরইমধ্যে অধিকাংশ চাষি ড্রাগন চাষে দেদারছে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করছেন। বহু গুণে গুণান্বিত পুষ্টিকর ড্রাগন ফলের গাছ ক্যাকটাস জাতীয়, লতানো। তাই এই গাছ খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হয়। একটি খুঁটিতে চার থেকে পাঁচটি ড্রাগন চারা দেওয়া যায়। এই ফল চাষে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কারণ ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। কিন্তু ক্ষতিকর টনিক ব্যবহারের ফলে মানুষজন এই ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বছর দশেক আগেও বিদেশি ড্রাগন ফল সম্পর্কে দেশের মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। ২০১০ সালের দিকে ব্যক্তি উদ্যোগে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কিছু চারা এনে বাংলাদেশে এই ফলের চাষ শুরু হয়। গত ১৫ বছরে দেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৫ গুণ। প্রথম দিকে ফলের আকার ছোট দেখা গেলেও এখন একেকটির ওজন মাপলে দেখা যায় ৭০০-৮০০ গ্রাম। এমনকি ১ কেজির উপর ওজনেরও এই ফলটি দেখা যাচ্ছে। অসাধু ড্রাগন চাষিরা ফুলে টনিক নামের একটি রাসায়নিক স্প্র্রে করছে। এ কারণে ফল বেশ বড় হয় এবং ফলটি গাছে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। রাসায়নিক স্প্রে করা ফলের আকার বড় হলেও ফলের একপাশে লাল হলেও আরেক পাশে থাকে সবুজ। আর জৈব সার দিয়ে পরিচর্যা করা বিষমুক্ত ড্রাগন ফল তুলনামূলক ভাবে ছোট হয়। বাজারে দামও পাওয়া যায় খুব কম। বাজারে বড় আকারের ফলের দাম বেশি পাওয়ায় অসাধু ড্রাগন ফল চাষিরা ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার করছে। একজন ড্রাগন চাষি জানায় ড্রাগন টনিক ভারত থেকে আমদানি করা। প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ডা. ডন ড্রাগন টনিক, প্ল্যান্ট হরমোন, সোপ্র অনলি ফ্রুট, ৫০ মিলি. লিটার, ১৫-১৮ দিন ফুলফুটার পর। প্যাকেটের গায়ে কোনো উপাদান লেখা নেই। ফলের আকার বড় করতে অধিকাংশ ড্রাগন ফল চাষিরা ইন্ডিয়ান ডক্টর ডানস ড্রাগন টনিক ব্যবহার করছেন। বর্তমানে অনেকে টনিকের পরিবর্তে প্লানোফিক্স ও পাওয়ার ট্যাবলেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে অপুষ্ট ড্রাগন ফলে স্প্রে করছেন। এতে ড্রাগন ফলের আসল লাল রং হারিয়ে লাল সবুজ ফলে পরিণত হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার অনেক ক্ষেত মালিকদের সাথে ড্রাগন ফলে টনিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষকরা বলেন, আমাদের ক্ষতি করবেন না। ড্রাগনে টনিক ব্যবহার করা হচ্ছে এটা জানলে ড্রাগন ফল কেউ কিনবে না। অসাধু কিছু চাষি অধিক লাভের আশায় ধরন্ত ড্রাগন ফলে হরমোন স্প্রে করছে। টনিক ব্যবহারের কারণে এ বছর মানুষ ড্রাগর কিনতে থুব একটা আগ্রহ করছে না।কৃষকরা জানিয়েছেন, চাষ পদ্ধতি সহজ, বেশি সময় ধরে ফল পাওয়া এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। কিন্তু এক শ্রেনির চাষিরা অধিক মুনাফার লোভে অনুমোদনহীন ড্রাগন টনিক ব্যবহার করে স্বাদহীন অধিক ওজনের ফল উৎপাদন করছেন। এতে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এসব ফল কিনে ঠকছেন ক্রেতারা।কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, লাল-সবুজ ড্রাগন ফলের স্বাদ লাল রঙয়ের ড্রাগনের মতো নয়। লাল-সবুজ ড্রাগনের ভেতরে শক্ত শক্ত কুলী আকার হয়ে থাকে। চিকিৎসক আমার ছেলের হজমের সমস্যা দূর করতে ড্রাগন খাওয়াতে বলেছেন। কিন্তু ক্ষতিকর টনিকের কারণে ড্রাগন খাওয়াতে ভয় পাচ্ছি।চাষি কবিরুস সোবহান বলেন, কোনো কোনো চাষি ড্রাগনের ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করছেন। এতে ড্রাগন চাষে ধস নামার শঙ্কা আছে। কারণ মানুষজন এসব ফল খেয়ে প্রতারিত হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ড্রাগনে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার বন্ধে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
কালীগঞ্জ উপজেলা জেলা কৃষি অফিস জানায় এবার প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে ৪ শতাধিক কৃষক ড্রাগনের আবাদ করেছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা চাণিদের বলছে আপনারা ড্রাগনে টনিক ব্যবহার করবেন নঅ্ কিন্তু অনেকেই অধিক লাভের আশায় এসব কাজ করছে।
ড্রাগনে টনিক ব্যবহার মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাষিদের টনিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছি। এরপরও যদি তারা টনিক ব্যবহার বন্ধ না করেন তাহলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে দন্ডজরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।