নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের শংকরপুরের নুর হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি রনি ওরফে কানা রনিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। ইতিমধ্যে তিনি মুখ খুলেছেন বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরআগে এ মামলার অন্যতম আসামি পচার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি ও পিবিআই এর কাছে রনির দেওয়া তথ্যে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর কাহিনী। এছাড়া এ হত্যার সাথে জড়িত পাঁচ আসামি সম্প্রতি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদেরকেও রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানাবে পিবিআই।পিবিআই ও আদালত সূত্র জানায়, রনিকে গত বৃহস্পতিবার রিমান্ডে নেয় পিবিআই। শুক্রবার জিজ্ঞাবাদ শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।সূত্র জানায়, পচার আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও রনির জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে ফুটবল খেলায় রেফারি নিয়ে গোলোযোগ শুরু হয়। গত ১০ মে শংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুই ক্লাবের মধ্যে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। একটি ব্রাদার্স ক্লাব অপরটি বারেক সড়ক একাডেমি ফুটবল ক্লাব। নুর হোসেন বারেক সড়ক একাডেমি ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন। অন্যদিকে, পাপ্পু ব্রাদার্স ক্লাবের খেলোয়াড় হয়েও ছিলেন এখেলার রেফারি। পাপ্পুর সিদ্ধান্ত মানতে চাননা নুর হোসেনেরা। যা নিয়েই গোলোযোগ বাধে। পরবর্তীতে সিনিয়রদের উপস্থিতিতে তা মিমাংসাও হয়। এদিন ঘটনাস্থলে পচা ছিলেন না। পরের দিন পচা যশোরে এসে এসব শোনেন। আর এ গোলোযোগকে পুঁজি করেন পচা। কারণ এরআগে থেকেই পচার সাথে দ্বন্দ্ব ছিল নুর হোসেনের। ১১ মার্চ সন্ধ্যার পর শংকরপুর চোপদারপাড়ার বারেক সড়কের কালামের দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন নুর হোসেন ও শান্ত। এসময় সেখানে আসে পচা ও মনিরুল। এসময় উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন মনিরুল। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে পচা ডেকে আনে রনি,পাপ্পু, রিয়াদসহ অন্য আসামীদের।তদন্তে জানা গেছে, প্রথমে ছুরিকাঘাত করে পচা নিজে। এরপর অন্যরাও হামলা করে। ছুরিকাঘাতে নিহত হন নুর হোসেন। এঘটনায় নিহতের মা আম্বিয়া খাতুন ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তে নামে পিবিআই। পিবিআই খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আটক করে পচাকে। পচার কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়। পরে তিনি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।অন্যদিকে, ডিবি পুলিশ মুন্সিগঞ্জ উপজেলার সিরাজদিখান থানা এলাকা থেকে রনিকে আটক করে। রনিকে আটকের পর পিবিআই তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায়। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।এছাড়া, এ মামলার আর এক আসামি বাধনকেও মাগুরার শালিখা থেকে আটক করে পিবিআই। এরমাঝে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আশিক, পাপ্পু, আকাশ, আলী আহম্মেদ ও মনিরুল ইসলাম। তবে, এখনো পলাতক রয়েছেন এজাহারভুক্ত দুই আসামি রিয়াদ ও সোহাগ।এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোরের এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে রনি। মামলাটি তদন্তাধীন হওয়ায় এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা।তিনি বলেন, এ মামলায় আটক বাধনসহ ছয়জনের রিমান্ডের আবেদন জানানোর প্রস্তুতি চলছে। দ্রুতই আদালতে আবেদন জানানো হবে। তাদেরকে রিমান্ডে আনলে বাকি রহস্য উঠে আসবে। এছাড়া অপর পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান নুর জামাল। নিহত নুর হোসেন যশোর আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছুরিকাঘাতের পর তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তার খুলনায় রেফার করেন। খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান নুর হোসেন।