কণ্ঠ ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ইরভিন শহরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একটি লেকচার হল থেকে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। হলটি টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে আটকে রেখেছিলেন তারা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি ক্যাম্পও ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পটিতে অবস্থান করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা লেকচার হলটি দখল করেছিল, যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এই ঘটনাকে একটি ‘হিংসামূলক প্রতিবাদ’ হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ১০টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হন এবং বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লেকচার হলটি দখল করার ঘণ্টা চারেক পর হল ও ক্যাম্প থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করে দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে টেলিফোনে ইউসি আরভিনের মুখপাত্র টম ভাসিচ বলেছেন, ‘লেকচার হলটি পুনরুদ্ধার করেছে পুলিশ। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা ভবনটি খালি করেছে।’ এসময় ‘অসংখ্য বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার’ করার কথা জানিয়েছেন ভাসিচ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবারের সব ক্লাস অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের ক্যাম্পাসে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ৪০ মাইল (৬৫ কিলোমিটার) দক্ষিণে ইরভিন শহরে এই বিক্ষোভ হচ্ছে। গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বেসামরিকদের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়ে সর্বশেষ ইরভিনে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনপন্থিরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইসরায়েলি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সম্পর্ক থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইউসি ইরভিনের বিক্ষোভকারীরা ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার হলের সংলগ্ন একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। ভাসিচ বলেছিলেন, বুধবার ২০০ থেকে ৩০০ বিক্ষোভকারী লেকচার হলটি দখল করেছিল। তখন হলটি অবশ্য খালিই ছিল। সেখানে কোনো ক্লাস সেশন চলছিল না। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক অরেঞ্জ কাউন্টি রেজিস্টার পত্রিকা জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ একটি ব্যারিকেড তৈরি করে। তখন লাউড স্পিকারে এক অফিসার জনতাকে সতর্ক করে হলটি খালি করার নির্দেশ দেন। বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাবেশ করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন তিনি। রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে, ড্রাম বাজিয়ে এবং ব্যানার উত্তোলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাদের কাছাকাছি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। ভাসিচ আরও জানিয়েছেন, চারটি সংলগ্ন গবেষণা ভবনের ভেতরে শত শত মানুষকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে অবশ্য তাদেরকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যার দিকে লেকচার হলে প্রবেশ করেছিল পুলিশ। এরপর ক্যাম্পে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে হেলমেটধারী পুলিশ। এ সময় অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়। ক্যাম্প শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন চ্যান্সেলর হাওয়ার্ড গিলম্যান। তিনি বলছিলেন, আলোচনা হলেও একটি কোনো সমাধানে আসা সম্ভব হয়নি। গিলম্যান বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবৈধ ক্যাম্প স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া’ স্পষ্ট জানিয়েছে যে তারা ইসরায়েল থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সোমবার গিলম্যান বলেছেন, ‘বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগ দাবিই এমন যা মানতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুষদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার অধিকার, অনুষদ ও শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতার অধিকার এবং আমাদের অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীর নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করতে হবে।’