আব্দুল্লাহ আল হাসিব, মণিরামপুর, যশোর:- মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে ৩ শিক্ষার্থীর অভিযোগের ৮ মাস পার হলেও এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ১৮মে বিদ্যালয় পড়ুয়া ২ শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র জমা দেয়।
অভিযোগপত্রে প্রধান শিক্ষকের ফেসবুক ম্যাসেন্জারে ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মাধ্যমে কুপ্রস্তাব দিতেন বলে ওই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বস্ত করেন শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের সত্যতা যাচায়ে তৎকালীন ইউএনও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। তদন্ত টিম সরাসরি বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৎকালীন ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর কাছে জমা দেন বলে জানা যায়। তবে তদন্ত প্রতিকেদন জমা দেয়ার ৮ মাস পার হলেও কেন এব্যপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সেটা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্য নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
৮ মাস পার হলেও কেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তদন্তকারী প্রধান প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আবুজার সিদ্দীকি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আমার দেওয়া সময়ের মধ্যেই তৎকালীন ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী স্যারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। তারপর আর কিছু আমি জানিনা।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের কথার সাথে আমি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি।”
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান মুঠোফোনে বলেন, “স্কুল না খোলা পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।”
এদিকে অভিযোগের ৮ মাস পার হলেও হায়দার আলির বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা না হওয়ায় উদ্বেগ কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগকারী এক অভিভাবক এই প্রতিবেদককে বলেন, “হায়দার আলীর বিচার কেন হলো না সেটা বুঝতেছি না। তবে তিনি খুব খারাপ মনের মানুষ। আমরা অভিযোগ করেছিলাম, তদন্ত টিমও গঠন হলো কিন্তু ৮মাস পার হলেও কোনো বিচার পেলাম না।”
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা কয়েকবার তৎকালীন ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর নিকট অভিযোগ পত্র দিলে তদন্ত শেষে সঠিক বিচারের আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু বিগত বছরের জুন মাসে মণিরামপুর থেকে বদলি হয়ে চলে যান ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী। তারপর থেকে থেমে যায় তদন্তের কাজ।
উল্লেখ্য, ছাত্রীদের কুরুচিপূর্ণ বার্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রেম নিবেদন করে আসতেন যশোরের মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। হায়দার আলী নিজের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডির ম্যাসেঞ্জার থেকে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীকে তাদের ব্যবহৃত ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে বার্তা দিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিদায় নেয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে এমন আপত্তিকর বার্তা দেয়ায় সে এটি ফাঁস করে দেয়। পরে ওই বছরের ১৮ মে প্রধান শিক্ষকের এ ধরণের কর্মকাণ্ডের বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি তৎকালীন ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর কাছে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী লিখিত আবেদন করেন।
এছাড়াও বিগত বছরের শুরুতে লিতুন জিরা নামে প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীকে ধানের বস্তা বলে কূটুক্তি করে সমালাচোনায় আসেন এই হায়দার আলী।