শিক্ষা কণ্ঠঃ
ইচ্ছেগুলো পূরণ করছি
ফারিতা বিনতে হান্নান
তৃতীয় বর্ষ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কয়েক দিন হলো, পুরোপুরি বাসায় আছি। শিকেরা কিছু অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছেন, এর বাইরে পড়াশোনার চাপ খুব একটা নেই আপাতত। অতএব সময়টা কাজে লাগাতে এখন স্প্যানিশ ভাষা শিখছি। ব্যস্ততার কারণে আসলে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছু করার তেমন সময়ই পাওয়া যায় না। তাই পছন্দের যে কাজগুলো সময়ের অভাবে এত দিন করা হয়নি, এখন সেগুলো করে নিচ্ছি। ছবি আঁকা ও ফটোগ্রাফি আমি খুব ভালোবাসি। এখন একটু-আধটু আঁকাআঁকি আর ছবি সম্পাদনা করছি। ভৌতিক, সাইকোলজিক্যাল-থ্রিলার আর রম-কম (রোমান্টিক কমেডি) সিনেমা বা সিরিজ—যেগুলো এত দিন জমা পড়ে ছিল, সেগুলো দেখছি। এ ছাড়া মাকে বাসার কাজে সাহায্য করছি। আর সময় কাটানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো আছেই। নিজেকে নানাভাবে ব্যস্ত রেখে শারীরিক ও মানসিক—দুইভাবেই সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি এখন। আশা করছি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
ফাহমিদা বেগম মিনাফাহমিদা বেগম মিনাকরোনাভাইরাস সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা
ফাহমিদা বেগম মিনা
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৮ মার্চ থেকে সকল শিাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসার কিছুদিনের মধ্যেই রাজশাহী থেকে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। আমার বাড়ি পুরান ঢাকায় হওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আমাকে আরও বেশি সচেতন হতে হয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিার্থী আমি। তাই গবেষণাটা আমার পড়াশোনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাড়িতে বসেও তাই সেটাই করছি। করোনা নিয়ে পৃথিবীব্যাপী যে আতঙ্ক চলছে, তা নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। সেখান থেকে বিভিন্ন গবেষণা পরিবার এবং বন্ধুদের জানাচ্ছি। কারণ, আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়ে নানা রকম ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। এর বাইরে প্রচুর মুভি এবং সিরিজ দেখছি। পরিবারের সবার সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটাচ্ছি।
ফারুক গাজীফারুক গাজীমানুষকে সচেতন করছি
ফারুক গাজী
ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই আমি গ্রামে চলে এসেছি। এসেই এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। কারণ, এই সংকটের মুহূর্তে আমাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি, করোনাভাইরাস সম্পর্কে তাদের তেমন কোনো ধারণা নেই। তারা এখনো অবাধে হাট-বাজারে যাচ্ছে, হাত ধোয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এ জায়গাগুলোতে আমি আমাদের গ্রামের মানুষকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে চেষ্টা করছি, তাদের মাস্ক ব্যবহার করতে বলছি, বাড়িতে অবস্থান করতে বলছি। অবসরের বড় একটা সময় এভাবেই কেটে যাচ্ছে। আর এই অবসরটা যেহেতু হুট করে পাওয়া, একাডেমিক পড়াশোনাটাও এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
মো. আরিফুল ইসলামমো. আরিফুল ইসলামমাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি
মো. আরিফুল ইসলাম
দ্বিতীয় বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এখন আছি কুমিল্লায়। বাড়িতে এসে প্রথমেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা শুরু করি। নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, বিশেষত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করছি। সামাজিক এ কাজগুলোর বাইরে হঠাৎ এই ছুটিকে আমি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছি। প্রযুক্তির এই যুগে জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বাইরেও অনেক বেশি পড়াশোনা করা। সে চেষ্টাটাই করছি। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়ছি। করোনা নিয়ে সারা বিশ্বের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছি। আর অনেক দিন পর পরিবারকে অনেক বেশি কাছে থেকে সময় দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।
এ বি এম রায়হানুল ফেরদৌসএ বি এম রায়হানুল ফেরদৌসহঠাৎ সব স্থবির হয়ে গেছে
এ বি এম রায়হানুল ফেরদৌস
তৃতীয় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাসায় এক রকম অলস সময়ই কাটছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নিজ শহরে ফিরতে হয়েছে। টানা পাঁচ দিন বাড়ির বাইরে যাই না। অথচ এ সময়টাতে কাস, অ্যাসাইনমেন্ট, কাস টেস্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটার কথা। বন্ধের শুরুর দিনগুলোতে কিছুই করা হয়নি। শুয়ে-বসে দিন কাটিয়েছি। আসলে কোনো রকম মানসিক প্রস্তুতি ছিল না, পরিকল্পনা ছিল না। ফলে সবকিছুই কেমন যেন স্থবির হয়ে গেছে। এখন একটু একটু করে পরিকল্পনা সাজিয়ে নিচ্ছি। খুব শিগগিরই মনে হচ্ছে না সব স্বাভাবিক হবে। তাই এরই মধ্যে দু-একটা অনলাইন কোর্স শুরু করেছি। একাডেমিক চাপমুক্ত থাকায় এই সময়টাতে নিজের সফট স্কিলগুলো ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি উপন্যাস, প্রবন্ধ পড়ছি। টুকটাক লেখালেখিও করছি। তবে একাডেমিক বিষয়গুলো পুরোপুরি এড়ানোর সুযোগ নেই। সবকিছু যদি ঠিক হয়ে যায়, এপ্রিলেই টার্ম ফাইনালের জন্য বসতে হবে। লেখাপড়াতেও মনোযোগ দিতে হচ্ছে।
রিপা নূররিপা নূরপরিবারের সঙ্গে সময় কাটছে
রিপা নূর
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
যখন ছুটি পেয়েছি, তখন বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা এত ভয়াবহ হবে। ভেবেছিলাম ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ, এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সে হিসাব করেই পাঠ্যসূচী ধরে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিয়ে বাসায় এসেছিলাম। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে একাডেমিক পড়াশোনা করার মানসিকতা সত্যি বলতে নেই। অবসর সময় পরিবারের সঙ্গেই কাটাচ্ছি। বাবা, মা, ভাই, বোন সবাই একসঙ্গে আছি। অনেক দিন পর পুরো পরিবার একসঙ্গে আছি এই দুর্যোগের সুবাদে, এটিই একমাত্র পাওয়া। আর ইচ্ছা ছিল সাধারণ মানুষকে সচেতন করব, কিন্তু বাইরে বের হওয়ার সুযোগ কম থাকায় পরিচিতদের মধ্যেই সচেতনতামূলক কাজ করছি। সবাইকে বাড়িতে রাখার চেষ্টা করছি। এর বাইরে কিছু পছন্দের মুভি দেখা, গান শোনার মধ্য দিয়েই সময়গুলো কেটে যাচ্ছে।