1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

ডিজিটাল শিাব্যবস্থার বিবর্তন ও ভবিষ্যৎ

  • প্রকাশের সময় বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০
  • ১৪১ বার সংবাদটি পাঠিত

শিক্ষা কণ্ঠঃ বর্তমানে এমন একটা সময়ে আমরা আছি, যখন শিাব্যবস্থায় অভূতপূর্ব কিছু ধারণা উদ্ঘাটিত হচ্ছে, নতুন নতুন কৌশল তৈরি হচ্ছে। এসবই হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে। প্রশিণযোগ্য যুব জনগোষ্ঠীর ক্রয়মতা এবং অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি মাথায় রেখে শিার বিষয়বস্তুর ডিজিটালাইজেশন করা আবশ্যক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত ডিজিটাল শিা পৌঁছে দেওয়া এখন সহজসাধ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিায় নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা প্রদান করাও এখন সম্ভব। গতানুগতিক শিাব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন আসছে, তা এখন আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটি সম্ভব হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে। ইন্টারনেট এখন শিক ও শিার্থীর জন্য বিশ্বকে অবারিত করে দিয়েছে। যে যেখানে আছে, সেখানে থেকেই পৃথিবীর যেকোনো উৎস থেকে শিামূলক তথ্য আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে।গত এক দশকে শিাব্যবস্থায় প্রযুক্তির সমন্বয় ও ব্যবহার ছিল যুগান্তকারী একটা পদপে। শ্রেণিকরে অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ ও আরও ফলপ্রসূ করার জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার শুরু হয়। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে কীভাবে শিাদান করা যায়, সেই ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি। শিকেরা মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টর এবং ভিডিওর সমন্বয়ে শেখানো শুরু করেন। তখন এটাই ছিল আধুনিক শিাপদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে শিকেরা আরও বেশি কার্যকর শিাদান করতে সমর্থ হন এবং স্কুল-কলেজগুলোর শিা পরিচালনার কার্যক্রমও ফলপ্রদ হতে থাকে। কর্মমতা ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং সিস্টেমস ব্যবহার করে ছাত্রদের অগ্রগতি পরিচালনা সহজ হয়ে পড়ে। এ ধরনের সিস্টেম ব্যবহারকারী কাসরুমকে ‘স্মার্ট কাসেস’ বলা হয়। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে এই স্মার্ট কাসরুম এখন অনেক দূর এগিয়েছে।স্মার্ট কাসরুমের প্রধান সমস্যা হলো উচ্চ সেটআপ ব্যয়। তার ওপর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের রণাবেণও অনেক ব্যয়বহুল। তার চেয়ে কাউডে রাখা বিষয়বস্তু যেমন ইউটিউব ইত্যাদি, যা কিনা নিজের ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেখা যায়, তা জনসাধারণের জন্য উপযোগী। সারা দেশে ইন্টারনেটের বিস্তারের কারণে এ ধরনের শিাব্যবস্থা এখন গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত শিার্থীদের মধ্যেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। উচ্চমানের শিা যে শুধু শহর অঞ্চলেই পাওয়া যায়, এ কথাটা এখন আর বলা যায় না।রেকর্ডকৃত কাসের জনপ্রিয়তা জোরদার হতে শুরু করেছে। সুলভ মূল্যে ইন্টারনেটের উচ্চ ব্যান্ডউইথ প্রাপ্তির কারণে খান একাডেমির মতো শিামূলক ভিডিও কাসগুলো ছাত্ররা ধীরে ধীরে ব্যবহার করা শুরু করেছে। আমাদের দেশেও ‘টেন মিনিট স্কুল’, ‘রেপ্টো’, ‘শিক বাতায়ন’, ‘ই-শিণ’, ‘স্টাডি-প্রেস’ ইত্যাদির মতো আরও বেশ কয়েকটি অনলাইন কাসরুম প্ল্যাটফর্ম কার্যক্রম শুরু করেছে। শিার্থীরা নিজের সময়-সুযোগমতো নিজের অবস্থানে থেকেই এই শিা গ্রহণ করতে পারে।এই এডুকেশন টেকনোলজি বা এডুটেক এখন শিার বিভিন্ন েেত্র প্রয়োগ হচ্ছে। প্রাইমারি শিা, সম্পূরক শিা, পরীার প্রস্তুতি, রিস্কিলিং, অনলাইন সার্টিফিকেশন, ভাষা-শিা, ইত্যাদি েেত্র এডুটেক্ এখন বহুল ব্যবহৃত। পৃথিবী-বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউটগুলো এখন অনলাইন শিার মাধ্যমে ডিগ্রি প্রদান করছে। সামনের বছরগুলোয় এডুটেক আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এখন অনলাইনে শিাকে আরও ব্যক্তিবিশেষে স্বতন্ত্র করা যাচ্ছে। অর্থাৎ যে শিার্থীর যেমন প্রয়োজন বা যতটা প্রয়োজন, ঠিক ততটা তাকে শিাদান করা হবে। এর ফলে একজন শিার্থী নিজের গতিতে শিখতে পারবে, যা কিনা তার জন্য অধিকতর ফলপ্রদ হবে। আমাদের দেশের সাধারণ শিাব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রধান কারণ হচ্ছে, এই স্বতন্ত্র শিাদানের অভাব। যখন একটা সাধারণ কাসরুমে একজন শিকের কাছে পঞ্চাশজন ছাত্র থাকে, তখন প্রত্যেক ছাত্রকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ থাকে না। এই ঢালাও শিার কারণেই বেশির ভাগ শিার্থী উপযুক্ত শিাটি গ্রহণ করতে পারে না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর মেশিন লার্নিং শিার্থীভেদে যথোপযুক্ত শিা নিশ্চিত করতে পারে।রেকর্ডকৃত কাসের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন লাইভ কাসেরও প্রসার শুরু হয়েছে। ‘গুগল কাসরুম’ বা অন্যান্য অনেক কোলাবোরেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক একাধিক শিার্থীদের সঙ্গে ইন্টারেকটিভ কাস নিতে পারেন। এই কাসগুলোকে রেকর্ড করে শিার্থীরা পরে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এডুটেনমেন্ট বা গেমিফিকেশনের মাধ্যমে অনলাইন কাসও এখন দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে শিার্থীরা খেলার ছলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারে।
আমাদের মতো দেশে যেখানে কোচিং একটি অতি প্রচলিত সংস্কৃতি, সেখানে অনলাইন শিাকে সর্বজনীন করে জনপ্রিয় করে তোলাটা একটু কঠিনই বটে। তরুণদের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। শিা তখনই কার্যকর হয়, যখন শিার্থী সেই শিাক্রমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। এডুটেক বা ডিজিটাল শিাব্যবস্থা একজন ছাত্রকে তার নিজের গতিতে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী শিখতে সাহায্য করে। ফলে তা বেশি ফলপ্রসূ হয়।বাংলাদেশের নাগরিকদের গড় বয়স ২৫ বছর। অর্থাৎ এটি তরুণ জমসমষ্টির দেশ। এর আরেকটি মানে—আমাদের দেশের এই তরুণ কর্মম জনগোষ্ঠী আগামী দুই দশক ধরে কর্মেেত্র সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গবেষণা অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ শিার্থী যারা এখন প্রাইমারি শিাক্রমে প্রবেশ করছে, তাদের যখন কর্মেেত্র ঢোকার বয়স হবে, সে সময়কার কাজ বা বৃত্তি অথবা পেশা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের হবে, যার সম্বন্ধে এখন আমাদের কোন ধারণাই নেই। তার মানে হলো, এই শিার্থীদের যদি সেসব কাজের জন্য আমরা তৈরি করতে না পারি, তাহলে জনগোষ্ঠীর এই তারুণ্য বিফলে যাবে। কিন্তু যে কাজ বা পেশা এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি, তার প্রশিণ আমরা কীভাবে দেব!আমাদের তরুণ সমাজকে কাজে লাগিয়ে আমরা যদি সত্যিই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাই, তাহলে আমাদেরঅবিলম্বে মানবসম্পদের ওপর বিনিয়োগ করতে হবে। এডুটেক বা ডিজিটাল শিাব্যবস্থা প্রয়োগ করে আমাদের তরুণ শিার্থীদের আগামী দিনের অজানা কর্মেেত্রর জন্য প্রস্তুত করতে হবে। শিাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে উদ্ভাবনীমূলক ও দতাভিত্তিক শিাক্রম চালু করতে হবে। গতানুগতিক টেক্সট বইভিত্তিক শিায় একজন শিশুর বা তরুণের নিজস্ব মেধার বিকাশ ঘটে না। মুখস্থবিদ্যার বদলে নতুন কিছু তৈরিকে, অথবা নতুন চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করতে হবে। যার যে বিষয়ে দতা রয়েছে, তাকে সে বিষয়ে পারদর্শী করে তুলতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করে যে শিার্থীর যে বিষয়ে ঝোঁক বা প্রবণতা রয়েছে, তাকে সে বিষয়ে সুদ করে তুলতে পারলেই আমরা একটি দ জাতি তৈরিতে সম হব।শিাব্যবস্থার যে পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমাদের মতো দেশে করাটা হয়তো কিছুটা কঠিন হতে পারে। এখানে সমাজ-সংস্কৃতির একটা পরিবর্তন আনতে হবে। জনসচেতনতা তৈরিতে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গতানুগতিক বিষয়গুলোয় ব্যাচেলর বা মাস্টার ডিগ্রি লাভের পেছনে না ছুটে নতুন নতুন বিষয়ে ও পেশাতে দতা অর্জন যে অধিকতর শ্রেয় এবং ফলপ্রসূ, তা অভিভাবকদের বোঝাতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে যে প্রায় ২৬ লাখ শিতি বেকার রয়েছে এবং দতার অভাবে যে তারা কাজ পাচ্ছে না, এ জিনিসটা সবাইকে জানাতে হবে। উদ্ভাবনীমূলক ও দতাভিত্তিক শিা থাকলে, ভবিষ্যতের যেকোনো নতুন পেশা বা কাজে নিজেদের সহজে সম্পৃক্ত করা যায়, এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা তৈরি করতে হবে।আমাদের দেশের শিাব্যবস্থায় আরেকটি বড় ত্রুটি হচ্ছে বর্তমানে এখানে তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পাঠ্যক্রম চালু রয়েছে জাতীয় পাঠ্যক্রম, মাদ্রাসাভিত্তিক পাঠ্যক্রম, ও ব্রিটিশ/ইউরোপীয় পাঠ্যক্রম। এর একটির সঙ্গে অপরটির কোনো রকম মিল বা সমন্বয় নেই। ফলে এই তিনটি ভিন্ন পাঠ্যক্রমে পড়া ছাত্রছাত্রী সম্পূর্ণ ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে বড় হচ্ছে। এতে সমাজে একটা বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, একই দেশে তিন ধরনের নাগরিক তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের মতো একটা সমজাতিক দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের উচিত এখনই সব পাঠ্যক্রমকে একীভূত করে একটি ডিজিটাল উদ্ভাবনীমূলক দতাভিত্তিক পাঠ্যসূচি তৈরি করা, যাতে সব বাংলাদেশি একইভাবে একসঙ্গে অনাগত ভবিষ্যতের মোকাবিলা করতে পারে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় শেষ সীমা বলে কিছু নেই। এখানে সর্বদা নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন ও সম্পাদন চক্র চলমান থাকে। প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায়। এডুটেকভিত্তিক শিাব্যবস্থা দ্বারাই আমাদের মতো চিরাচরিত সমাজকে প্রবুদ্ধ করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে সব শিাপ্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ, তখন দেশব্যাপী ডিজিটাল শিাব্যবস্থার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা আমরা বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারছি।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION