যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ও রায়পুর ইউনিয়নে ২জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে গুজবে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ খবর মাইকে ও ফেইসবুকে প্রচার করায় লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন ওই দু’জনের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, জহুরপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের আমজাদ তরফদার (৪৫) সম্প্রতি ভারত থেকে এসেছে। ঠান্ডাজনিত কাঁশি নিয়ে যশোর শহরের শেখহাটি জামরুল তলার বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। নির্দিষ্ট ১৪দিনের আগেই শনিবার (২৮মার্চ) রাতে গ্রামের বাড়ি যাদবপুরে আসেন। পরদিন (রোববার) বেলা ১২টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ির বাইরে বের হলে সে করোনায় আক্রান্ত বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে বিষয়টি মাইকে পর্যন্ত প্রচার করা হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় করোনা প্রতিরোধে উপজেলা মনিটরিং টিম তার বাড়িতে আসলে আমজাদ নদী পার হয়ে সদরের এনায়েতপুর গ্রামে পালিয়ে যায়।
এদিকে সোমবার (৩০মার্চ) বিকেলে এজে তপু নামের স্থানীয় এক যুবকের ফেইসবুকে ‘খাজুরায় ২জন করোনা রোগী সনাক্ত, সবাই সাবধান’ এমন পোষ্ট করায় মুহুর্তেই দেশ-বিদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আমিন উদ্দীন জানান, করোনা সনাক্তের খবরে উপজেলা মনিটরিং টিম এসে আমজাদের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়ে গেছে। তবে মনিটরিং টিমের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার জানিয়েছেন তার শরীরে করোনা ভাইরাস নেই। এটা নিছক গুজব।এদিকে রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের করুনা দেবনাথের ছেলে সুকান্ত দেবনাথ (২৫) করোনায় আক্রান্ত বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সোমবার (৩০মার্চ) তার পরিবারের সাথে কথা হলে তারা জানায়, সুকান্ত ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করে। গত ২৩মার্চ ঠান্ডাজনিত কাঁশি ও গলা ব্যাথা নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে আসে। পরে ২৭মার্চ বাড়ির সামনের রাস্তায় ও মন্দিরে ঘোরাঘুরি করলে কে বা কারা গুজব ছড়ায় সুকান্ত করোনায় আক্রান্ত। এতে তার পরিবার মানসিকভাবে চিন্তায় ভেঙ্গে পড়ে হেল্পলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। বিশেষজ্ঞ ডা. আনিসুর রহমান তার সমস্যার কথা শুনে কয়েকটি ঔষধ খেতে বলেন এবং তার করোনা হয়নি বলে জানান। বর্তমানে সুকান্ত সুস্থ বলে জানিয়েছে তার পরিবার।এ ব্যাপারে ৮নং ইউপি সদস্য শাহীনুর রহমান গুজবের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত শনিবার (২৮মার্চ) উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহারের নেতেৃত্বে করোনা প্রতিরোধ মনিটরিং টিম এসে ওই বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে। তবে সুকান্তের করোনা হয়নি বলে তারা জানিয়েছে।জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার বলেন, গুজবের শিকার ওই দুজনের বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। করোনায় আক্রান্তের অনেকগুলো লক্ষণ থাকে। তাদের দু’জনের শুধুমাত্র কাঁশি ও সামান্য গলাব্যাথা হয়েছিল। তাই তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শরিফুল ইসলাম জানান, এমন সমস্যায় ভয়ের কোন কারণ নেই। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে প্রায় লোকের একটু কাঁশি ও গলাব্যাথা হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানিয়া আফরোজ জানান, করোনা সনাক্তের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানতে আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নেতৃত্বে মনিটরিং টিম পাঠিয়েছিলাম। মনিটরিং শেষে জানা গেছে তারা কেউই এ ভাইরাসে আক্রান্ত না। মাইক ও ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর ব্যাপারে তিনি (ইউএনও) বলেন, যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।