শাহাদাত হোসেন: মাত্র তেরো দিন বয়সের ফুটফুটে ছেলে শিশুটির পালক বাবা মা হলেন সাতক্ষীরার শিখা-বরুন শিক্ষক দম্পতি। মঙ্গলবার বিকালে তাদের কোলে শিশুটিকে তুলে দেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হক রাসেল। এ সময় উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকলপনা কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈয়বুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিশুটিকে হস্তান্তরকালে এক আনন্দঘন অবস্থার সৃষ্টি হয়। আজ থেকে শিশুটির নাম তিতাস ওরফে মহারাজ।
এদিকে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা সদ্যজাত শিশু তিতাস মহারাজকে শিক্ষক দম্পতিকে দেওয়ার নির্দেশ দেন সাতক্ষীরার শিশু আদালত।
সোমবার সাতক্ষীরা শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক রায়ে এই নির্দেশ প্রদান করেন । আদালত কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ দেন।
দত্তক গ্রহীতারা হলেন তালা উপজেলার রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রাণী চৌধুরী ও তার স্বামী যশোরের সাগরদাঁড়ি কারিগরি ও বানিজ্য মহাবিদ্যালয়ের কমপিউটার ইঞ্জিনীয়র বরুন কুমার পাল ।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন যে যেহেতু সদ্যজাত শিশুটিকে কালিগঞ্জের গোলখালি শ্মশানের কাছে একটি গাছে ব্যাগে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সেহেতু শিশুটি হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের বলে অনুমিত হয়। এই বিবেচনায় মোট ২৯ টি আবেদন পত্র থেকে যাচাই বাছাই করে কেবলমাত্র আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে সামাজিক ধর্মীয় ও অন্যান্য দৃষ্টিকোন থেকে আদালত শিশুটির মঙ্গলার্থে উক্ত শিক্ষক দম্পতিকে দত্তক দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন।
উল্লেখ্য যে গত ৪ অক্টোবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের গোলখালি শ্মশানের কাছে একটি গাছে বাজার ব্যাগে দুই এক ঘন্টা আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটিকে কে বা কারা ঝুলিয়ে রেখে যায়। স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে শিশুটিকে প্রথমে সার্জিকাল ক্লিনিক ও পরে কালিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্থানীয়রা ফুটফুটে এই শিশুটির নাম রাখেন ‘মহারাজ’।
শিশুটিকে দত্তক পেতে ২৯ টি আবেদনপত্র আসে। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অীফসারের নেতৃত্বে গঠিত শিশু কল্যাণ বোর্ড শিশুটি গ্রহনের জন্য আবেদন আহবান করেন। এসব আবেদন সাতক্ষীরা শিশু আদালতে পাঠানো হয়। আদালত সোমবার এক আদেশে শিশু ‘মহারাজ’কে ওই শিক্ষক দম্পতির হাতে দত্তক হিসাবে তুলে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এখন থেকে শিখা চৌধুরী ও বরুন পালই হবেন তার পালক পিতামাতা।