সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ ইতিপূর্বে বিভিন্ন নারীর সাথে অনৈতিক কাজের সময় বহুবার হাতে-নাতে ধরা পড়া, ছাত্রীদের ব্লাকমেইলিং করা এবং বিভিন্ন নারীকে ফুসলিয়ে যৌন লালসা মিটানো সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান এবং সহোযোগী অধ্যাপক চরিত্রহীন-লম্পট শিক্ষক আসাদুজ্জামান আবারও ছাত্রী (এনজিও কর্মী) সহ ধরা খেয়েছেন। তার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর (বাগআঁচড়া সংলগ্ন)।
ইতিপূর্বে এই শিক্ষক অসংখ্য ছাত্রীর সাথে অশালীন আচরণ করেছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ছাত্রী।
লম্পট আসাদুজ্জামন ২ সন্তানের জনক। তার কন্যা উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং পুত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী বাগআঁচড়াতেই থাকেন। আর সেই সুযোগে আসাদুজ্জামান একের পর এক বিভিন্ন মেয়ের সর্বনাশ করে যাচ্ছে। এই আসাদুজ্জামান তার ঘনিষ্ঠদের নিজের মোবাইলে থাকা বিভিন্ন মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলেন, “আমিতো প্লে-বয়, আমার ৬০/৬২টা ডার্লিং সবসময় থাকে।”
আজ শনিবার (১০ই অক্টোবর) সকাল ১১.৩০ টার দিকে আসাদুজ্জামান এক ছাত্রী (এনজিও কর্মী)-কে নিয়ে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল খুলনা রোড মোড়ে অবস্থিত কেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৫ম তলার সিঁড়িঘরে (চিলেকোঠা) ভাড়া করা রুমে নিয়ে ফূর্তি করছিলেন। ইতিপূর্বেও ঐ শিক্ষক সেখানে অনেক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের নজরে পড়ে এবং সন্দেহ হয়। একে একে বিষয়টি জানাজানি হলে কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে হাজির হন। খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে পুলিশও ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেয়। এদিকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজের শিক্ষক পর্ষদের সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম আজাদ সহ কয়েকজন শিক্ষক মোটরসাইকেল যোগে বেলা ২টার দিকে কেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে আটক শিক্ষক ও মেয়েটিকে নিয়ে পুলিশ পৌঁছানোর পূর্বেই সরকারি কলেজে নিয়ে চলে আসেন। ঐ মুহুর্তে লম্পট শিক্ষক ও তার লাম্পট্যের শিকার ওই তরুণীকে নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজের রুমে বৈঠক চলছিল।
কয়েকজন শিক্ষার্থী ফোনে অভিযোগ করেন, কলেজ প্রশাসনের কিছু পদস্থ শিক্ষকের প্রশ্রয়ে লম্পট আসাদুজ্জামান ছাত্রীদের উপর তার যৌন লালসা চালিয়ে যাচ্ছে। তখনও ঐ লম্পট শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ না করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রী জানান, কিছুদিন আগে লম্পট আসাদুজ্জামান ঐ ছাত্রীকে তার বাসায় গিয়ে ঘর-বাড়ি একটু গুছিয়ে দিতে বলেন। ঐ ছাত্রী প্রথমে অস্বীকার করলে আসাদুজ্জামান তাকে ইনকোর্সের নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখায়। এরপর ঐ ছাত্রী আসাদুজ্জামানের বাসায় গেলে আসাদুজ্জামান জোরপূর্বক তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। লজ্জ্বায় এ ঘটনা ঐ ছাত্রী কাউকে জানাতে না পেরে এক পর্যায়ে কলেজে আসা বন্ধ করে দেন। সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা লম্পট আসাদুজ্জামানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকাত পারভেজ জানান, আমরা আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখবো।এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, “মেয়েটি সম্পর্কে আমার নাতনি হয়। সে সাতক্ষীরায় এসেছিল বেড়াতে। আমি একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য তাকে আমার রুমে নিয়ে এসেছিলাম। বিষয়টি এর বেশি কিছুু নয়।” বিশিষ্ট নারী নেত্রী নাসরিন খান লিপি বলেন, সন্তানতুল্য মেয়েদেরকে যে শিক্ষক ব্লাকমেইল করে, যৌন হয়রানি করে সে শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক।” তিনি ঐ শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবী জানান। নারী নেত্রী ও অতিরিক্তি পিপি শাহনাজ পারভীন মিলি বলেন, ঘটনা শুনে আমি লজ্জিত। প্রিন্সিপাল স্যারকে আমি বলেছি ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। যে শিক্ষকের কাছে সন্তানতুল্য ছাত্রীরা নিরাপদ নয় তাকে শিক্ষকরুপে আমরা দেখতে চাইনা। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কথা দিয়েছেন ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে লিখবেন।” এদিকে লম্পট আসাদুজ্জামানকে উদ্ধার করতে যাওয়া সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক পর্ষদের সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “অধ্যক্ষ স্যার আমাকে ফোনে একাধিকবার অনুরোধ করেন শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে কলেজে নিয়ে আসার জন্য। যেহেতু অধ্যক্ষ স্যার বারবার আমাকে আদেশ করেছেন তাই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এই ঘটনা সম্পর্কে আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না, জানতাম না সে কি ধরণের পরিস্থিতির মধ্যে আছে।