1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

শ্যামনগরে শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে ১২ টি প্রকল্প থেকে কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ !

  • প্রকাশের সময় বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০
  • ১৯ বার সংবাদটি পাঠিত

বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির সন্ধানে পর্ব – ০৮

ইব্রাহিম খালিল:
শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো মেরামত ও উন্নয়ন খাতে ১২টি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে শিক্ষা অফিসার সহ চার সহকারী শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলায় ১৯১টি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের বরাদ্দের চেক ছাড় পেতে শিক্ষকদের কে ৯৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নগত শিক্ষা অফিসারদের ঘুষ প্রদান করতে হয়েছে। ঘটনাটি এখন শ্যামনগর উপজেলার সর্বত্র আলোচিত ও সমালোচিত। এ ঘুষ আদায়ের পিছনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজস আছে বলেও শিক্ষকরা দাবী করেছেন।


অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ ও ২০ অর্থ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর হতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ১৯১ টি স্কুলে ১২টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্প গুলোর মধ্যে ৫৮টি স্কুলে পিইডিপি-৪ মাইনর মেরামত খাতে বরাদ্দ ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ঘূর্ণীঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ ৪২ টি স্কুলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। ১৯১ টি বিদ্যালয়ে স্লীপ খাতে বরাদ্দ ১ কোটি ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা, ১৩১টি বিদ্যালয়ে রুটিন মেইনটেনেন্স খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১৯১টি স্কুলে প্রাক প্রাথমিক খাতে বরাদ্ধ ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা, ১৬ টি স্কুলে ক্ষুদ্র মেরামত খাতে বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা। ৮টি বিদ্যালয়ে খেলা-ধুলা সামগ্রী খাতে বরাদ্দ ১২ লাখ টাকা, ৩টি বিদ্যালয় অস্থায়ী গৃহ র্নিমান খাতে ৯ লাখ টাকা। ৩টি বিদ্যালয়ে এডুকেশন ইন এমারজেন্সি খাতে বরাদ্দ ৬ লাখ টাকা। ২০টি বিদ্যালয়ের ওয়্যাশব্লক খাতে বরাদ্দ ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও ১টি বিদ্যালয়ে (নুরনগর) রাজস্ব মেরামত খাতে বরাদ্দ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উল্লেখ্য ১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৫১ টি স্কুলে স্লীপ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
উল্লেখিত ১২টি প্রকল্পের মধ্যে পিইডিপি-৪ মাইনর মেরামত খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ১৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ঘূর্ণীঝড় আম্ফান খাত হতে ২৬% হারে নগত ঘুষ আদায় ১১ লক্ষ ৭১ হাজার ৩ শত টাকা। স্লীপ খাত হতে স্কুল প্রতি ৪ হাজার টাকা হারে নগত ঘুষ আদায় ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ খাত হতে ১০% হারে নগত ঘুষ আদায় ৫ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। প্রাক প্রাথমিক খাত হতে স্কুল প্রতি ২ হাজার টাকা হারে নগত ঘুষ আদায় ৩ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। ক্ষুদ্র মেরামত খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।খেলা-ধুলা সামগ্রী খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। অস্থায়ী গৃহ র্নিমান খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। এডুকেশন ইন এমারজেন্সি খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ৯০ হাজার টাকা। ওয়্যাশব্লক খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ৮৮ হাজার ৫ শত টাকা। একটি ¯ু‹লে রাজস্ব মেরামত খাত হতে ১৫% হারে নগত ঘুষ আদায় ২২ হাজার ৫ শত টাকা। এ ছাড়া ২০১৯ অর্থ বছরে স্লিপ খাতে বরাদ্দ হতে ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ক্রয় থেকে শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন হাতিয়ে নেন ২৭ লক্ষ ৪৮ হাজার ২ শত টাকা। এখানে সব চেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে,জেডকেটিকো মডেল নং কে ৫০ এ নামীয় ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটির বাজার মূল্য ছিল ৬ হাজার ৮ শত টাকা। অথচ শিক্ষা অফিসার মেশিনটির ওয়ারেন্টির অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি মেশিন বাবদ ২৫ হাজার টাকা কর্তন করেন।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, ১২৭ নং স্কুলে প্রধান শিক্ষক হোসেন আলী জানান, ১৯ অর্থ বছরে ১৯১টি স্কুলের মধ্যে ১৫১টি স্কুলে স্লি¬প খাতের আওতায় আর ৪০ টি স্কুল সি,এফ,এস এর আওতাধিন ছিল। শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা ছিল স্লিপ খাতের বরাদ্দের টাকা স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে, যাতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও সংশ্লিষ্টরা বাজার যাচাই বাচাই করে হাজিরা মেশিন ক্রয় করবেন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরিপত্রের নির্দেশনা না মেনে উল্টোটা করেছেন। স্লিপ খাতের সমুদয় টাকা থেকে হাজিরা মেশিন কেনা বাবদ ২৭ হাজার ৫ শত টাকা কেটে নিয়ে বাকি টাকা স্ব-স্ব স্কুলের নামে চেক প্রদান করেন। যাহা অ্যাকাউন্ট চেক করলে প্রমান মিলবে। তবে,জেডকেটিকো মডেল নং কে ৫০ এ নামীয় ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটির বাজার মূল্য ৬ হাজার ৮ শত টাকা। কিন্তু শিক্ষা অফিসার মেশিন বাবদ অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিলেও অনেক স্কুল এখনও পর্যন্ত হাজিরা মেশিন পাইনি বলে জানান।
১০১ নং হাজিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক কানাইলাল মল্লিক, ১১০ নং সোরা লক্ষীখালি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী, ১৬৬ নং ধানখালি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরষিত মন্ডল, ১৭১ নং টেংরাখালি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, ১৬৭ নং-পূর্ব পরানপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, ৫৮ নং-যাদবপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা বেগম, ৪২ নং নওয়াবেকী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন নাহার, ১৮৭ নং আস্তাখালী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের,১১৪ নং বাইনতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপংকর কুমার ঘোষ জানান, বরদ্দের চেক পেতে ১৫% আর আম্ফান খাতে ২৬% হারে নগত টাকা ও ভ্যাট ১২% হারে কেটে নিয়েছে। ১৪৪ নং বন্যতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম জানান, আম্ফানের বরাদ্দকৃত দেড় লাখ টাকা ছাড় পেতে শিক্ষা অফিসারের সামনে সহকারী শিক্ষা অফিসার সোহাগ আলমের হাতে নগত ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
৪২ নং মরাগাং স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন.(সচিব) ৩১। শ্রীফলকাটি স্খুলের প্রধান শিক্ষক আকিকুর রেজা (সচিব) সহ অন্যান্য শিক্ষক (সচিবরা) জানান, সহকারী শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশে স্ব-স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে বরাদ্দের ১৫% হারে নগত টাকা আদায় করে শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির নেতাদের স্বরনাপন্ন হলে তারা শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেন নি। অজ্ঞাত কারনে তাদের ভূমিকা ছিল নিরব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বরাদ্দের টাকা ছাড় না করলে সরকারী রাজ কোষে ফেরত যাওয়ার আশংখায় বাধ্য হয়ে বরাদ্দের টাকা পেতে শিক্ষা অফিসারদের ঘুষের মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে।
এবিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন ও সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহআলম,আজহারুল ইসলাম, সোহাগ হোসেন, সোহাগ আলম এর সাথে কথা হলে ১২% হারে ভ্যাট নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু ১২টি প্রকল্প থেকে ৯৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। শিক্ষা অফিসারদের পাহাড়সম দূর্নীতির খবরটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় নিজেরাই বাঁচতে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ,ন,ম আবুজার গিফারীকে ৫০ হাজার টাকা ঘূষ দিতে যেয়ে ব্যার্থ হন সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহআলম।
তিনি শিক্ষা অফিসারের বরাত দিয়ে বলেন, আমি ইউএনও অফিসে যেতে চায়নি, কিন্তু শিক্ষা অফিসার চাচার ভয় দেখান, তাই আমি নিরুপায় হয়ে উক্ত টাকার প্রস্তাব দিলে ইউএনও স্যার ভাল মানুষ হওয়ায় টাকা না নিয়ে প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেন।
সাতক্ষীরা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার বাবুল আক্তারের সাথে শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন- শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্তে শিক্ষা অফিসে যাই এবং শিক্ষা অফিসারের কিছু অনিয়ম ও দূর্নীতি ধরা পড়ে সে বিষয়ে আমি কথা বললে শিক্ষা অফিসার আমার সাথে খারাপ আচারণ করেন। সেই সাথে তিনি আমাকে বদলীর ভয় ও দেখান বলে জানান।
এ বিষয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষন বিভাগ) এর মোঃ আবুল কাশেম মিয়াকে শ্যামনগর শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির ঘটনাটি অবহিত করলে তিনি বলেন, ৩ অক্টোবর তদন্তে অফিসারদের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষকদের লিখিত প্রমান পাওয়া গেছে বলে জানান।
বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ডাঃ মহিদার রহমান বলেন, শ্যামনগরে শিক্ষা অফিসারাদের দূর্নীতির ঘটনা অত্যান্ত দুঃখ জনক। এসব দূর্নীতি গ্রস্থ শিক্ষা অফিসারদের কারনে সরকারের ভাবমুর্তি অনেকটা ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমি তাদের বিভাগীয় শাস্তির পাশা-পাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এঘটনায় সূশীল সমাজ ও ভূক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন শিক্ষা অফিস একটি পবিত্র স্থান। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী চার শিক্ষা অফিসারের দূর্নীতির কারনে পাল্টে গেছে শিক্ষা অফিসের দৃশ্য পট। শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির কারনে গোটা উপজেলার শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ ধংশের দার প্রান্তে। তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধোতন কতৃপক্ষের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের পাশা-পাশি আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION