কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: জীবনের দীর্ঘ সময় ভয়ংকর মাদকের অন্ধকার জগতে এসে তালিকাভুক্ত মাদক কারবারী হয়ে গিয়েছিলাম। দিনে আত্মগোপন, রাতে র্যাব-পুলিশের ভয়ে নির্ঘুম কাটাতে হতো। প্রতিটি মুহূর্ত যেন ভয় আর উৎকণ্ঠায় দিন কেটেছে। এর মধ্যেও মামলার ঘানি টানতে হয়েছে আদালতে কাঠগড়ায়। স্বজনদের ছেড়ে জেলখানার চার দেয়ালে বন্দি জীবন কাটানো অনেক বেদনাদায়ক। ভেবেছিলাম অভিশপ্ত জীবন থেকে বোধ হয় ফেরা হবে না। কিন্তু না, খুঁজে পেয়েছি আলোর দেখা। এখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করছি। অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে এসে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে এখন অনেক সুখী জীবন যাপন করছি।
অনেকটা আবেগ জড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো বলেছেন কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের শীতলপুর গ্রামের বাসিন্দা ৪৭ বছর বয়সী ফিরোজ কবির। তার পিতার নাম এলাহি বকস। এক সময়ের কুখ্যাত মাদক সম্রাট খ্যাত ফিরোজ কবির ওরফে বাদশা খান মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে জীবন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছেন। সে এখন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমাণ শাক-সবজি বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সোমবার সকালে নাজিমগঞ্জ বাজার এলাকায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে শাক-সবজি বিক্রয়কালে কথা হয় ফিরোজ কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরিবের ঘরে জম্ম নিয়ে মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা শিখেছি। বেকারত্ব জীবন নিয়ে কয়েকটি বছর কেটে যায়। দেখা দেয় চরম অর্থসংকট। অভাব অনটনের সংসারে বাবা মায়ের কষ্ট দেখে নিজেই উপার্জনের পথ খুঁজি। কোনো কাজ না পেয়ে অর্থের জোগান দিতেই বেছে নিয়েছিলাম অন্ধকার মাদকের জগৎ। প্রথমে মাদক সেবন, পরে সরাসরি ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসায় ধরা পড়ে হয়ে গেলাম তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ী। মাদক মামলা চালাতে গিয়ে যা উপার্জন করেছিলাম এর সবটুকুই ফুরিয়ে গেছে। কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে তা গুনে বলা যাবে না। কিন্তু নিষ্ঠুর এ জগতে কেউ কাউকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় না। বরং অশান্তি যেন চিরসঙ্গী হয়ে যায়। পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারতাম না। আমার ভাগ্যেও তেমনটিই ঘটেছিল। গত ৬ বছর আগে অঙ্গীকার নিয়ে মাদক ব্যবসা ছেড়ে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ভ্রাম্যমাণ শাক-সবজির পেশা বেছে নিয়েছি। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হেলেঞ্চা, থানকুনি, কলমি শাক, কচু শাক, কচুর লতি, কচুর ফুল, কলার মোচা, কাগজি লেবু সহ বিভিন্ন শাক-সবজি সংগ্রহ ও ক্রয়ের পর সেগুলো গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে উপার্জিত অর্থে অনেক সুখের দিন অতিবাহিত করছি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে মাদক সেবন বা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ভাল জীবন নয়। এখনো যারা এই অভিশপ্ত জীবনে রয়েছেন তাদেরও ফিরে আসা উচিত। আমি মনে করি অভিশপ্ত জীবন থেকে ফিরে এসে এখন অনেক সুখেই আছি। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা আর ইবাদত-বন্দেগী করে আমি বাকি জীবন কাটাতে চাই। এদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য, ফিরোজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে কিন্তু তার স্মৃতিশক্তির কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ আলাউদ্দিন সোহেল বলেন, শুনেছি একসময় ফিরোজ কবির উশৃংখল ও মাদকের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। মাদক ব্যবসা ছেড়ে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে ভ্রাম্যমাণ শাক- সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেন এ বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দেশের জন্য, সমাজের জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিনতা করে যে সকল মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের ভুল বুঝে অন্ধকার জগৎ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে তাদের ধন্যবাদ। আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।