মোস্তাকিম সাকিব, দৈনিক প্রতিদিনের কন্ঠ:
দেশব্যাপী ছাত্রদলের ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় যশোরের মণিরামপুরেও ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে চলছে নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ। সংগঠন সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা সংগঠনকে চাঙা করতে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কমিটিতে আসার জন্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বিবদমান দুই গ্রুপের দুই নেতা এডভোকেট ইকবাল ও আবু মুছার নেতৃত্বে অনেকে কমিটিতে আসার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন। এ নিয়ে চলছে জোর গ্রুপিং-লবিং।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শহিদ ইকবাল দীর্ঘদিন যাবত তার নেতৃত্বে কমিটি বানিয়ে আসছেন। যার কারণে ত্যগী ও নির্যাতিত কর্মীদের মূল্যায়ন না করার কারণে তার কাছ থেকে সরে এসে অনেকে ই এখন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু মুছার নেতৃত্বে কাজ করছেন।
অাবার কেউ কেউ নিজে থেকে লবিং-গ্রুপিং পরিচালনা করছেন।
এরই মধ্যে উপজেলা ছাত্র দলের কমিটিতে নেতৃত্বপ্রত্যাশী ইউনুছ আলী জুয়েল বিবাহিত বলে অভিযোগ করেছেন চালুয়াহাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। জানা গেছে, তিনি এই অভিযোগ দায়ের করেছেন ছাত্রদলের খুলনা বিভাগীয় মনিটরিং কমিটির কাছে।অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, “ছাত্রদলের নেতৃত্বে বিবাহিত কেউ আসতে পারবে না। জুয়েল চালুয়াহাটি গ্রামের অহিদুজ্জামান বাবুলের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।”
২৫ সেপ্টেম্বর এই অভিযোগের তদন্ত করতে তদন্ত কমিটির ৪ নেতা যশোর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ ইমরান ও যুগ্ম-সম্পাদক সোহানুর রহমান শামীম শুক্রবার বিকেলে মণিরামপুরে যান।
হরিহরনগর ইউনিয়নের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ তাদেরকে জানান,
“‘২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তার কাছে শাহনাজ পারভিন একতরফা বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন। তিন মাস পর ২০১৫ সালে ২৭ ফেব্রয়ারি তা রেজিস্ট্রি হয়।
তবে তিনি আরো উলেখ করেন, “তিনি যখন বিবাহ বিচ্ছেদ করেন তখন বিয়ের রেজিস্ট্র পেপার বা কাবিনের কাগজ কোনোটায় না দেখেই বিবাহ বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রি করেন।”
চালুয়ায়াহাটী ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্টার কাজী অাব্দুস সালাম জানান,
“অামার এখানে জুয়েলের বিয়ে বা তালাক হয়নি। ইতোপূর্বে অামার নামে জাল স্বাক্ষর কে বা কারা একটি তালাকনামা বানিয়েছে, কিন্তু সেটা ভূয়া।”
চালুয়াহাটী ইউনিয়ন পরিষদের অাওয়ামলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার গত ২৯ আগস্ট দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে উলেখ করেছেন, সত্যতা যাচাই-বাছাই করে নতুন করে সনদপত্র দেওয়া হল। ইউনুচ আলী জুয়েল ২০১২ সালে চালুয়াহাটী গ্রামের অহিদুজ্জামান বাবুলের কন্যাকে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ করেছিলেন”।
এ বিষয়ে তৎকালীন চালুয়াহাটী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়নে কোন বিবাহ হলে তার একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও আমি এমন কোন কাগজ পায় নি এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে ইউনুচ আলী জুয়েল কে চিনি এবং সে এখন পর্যন্ত বিবাহ করেননি , ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও স্থানীয় বিরোধী গ্রুপের কিছু লোক তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, ” ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মুস্তাক নিয়মানুযায়ী উপজেলা বা জেলা কমিটির কাছে জুয়েলের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দেননি।
তদন্ত করা হচ্ছে কেন্দ্রের নির্দেশে,
অতএব তদন্তের ফলাফলের বিষয়টি কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির কাছে অবহতি করা হবে।”
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় মনিটরিং কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান সজিব মোবাইল ফোনে জানান, ‘জুয়েল নামে এক ছাত্র নেতার বিয়ে সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে কোনো বিবাহিত, অছাত্র, সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডসহ রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সাথে জড়িত কেউ ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। কারো বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা ইউনুচ আলী জুয়েল উক্ত অভিযোগের বিষয়ে প্রতিদিনের কণ্ঠ কে জানান,
“শাহনাজ পারভিনকে অামি পছন্দ করতাম।
কিন্তু পারভিনের পরিবার আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় পর অধিক বার অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে আমি পারভিনকে চাপ দিই,
সে যেনো তার বাড়িতে গিয়ে বলে আমার সাথে তার বিবাহ হয়ে গেছে, এতে করে পারভীন কে যেন তার পরিবার অন্য কোথাও বিবাহ দিতে না পারে। সটিক তথ্য হলো আমি কখনো শাহনাজ পারভিন কে কখনই বিবাহ করি নাই। কিছু কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছন। শুক্রবার জেলা তদন্ত টিম সকল কিছু তদন্ত করেছেন, আশা করি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হবে।”