মোঃ ইব্রাহিম খলিল : শ্যামনগরে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে উপজেলার চার সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষা অধিদপ্তর হতে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত বিদ্যালয়ের টাকা হতে দফায় দফায় মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্যের ঘটনাটি এখন সর্বত্র আলোচিত ও সমালোচিত। ইতি মধ্যে (প্রাঃ) শিক্ষা অফিসের শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন সহ চার সহকারী শিক্ষা অফিসারের দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যের খবরটি বিভিন্ন পত্রিকায় চার পর্বে প্রকাশিত হওয়ায় তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। উপজেলার দূর্নীতি গ্রস্থ চার সহকারী শিক্ষা অফিসাররা হলেন; (১) মোঃ শাহআলম,(২) মোঃ আজহারুল ইসলাম, (৩) মোঃ সোহাগ হোসেন ও (৪) মোঃ সোহাগ আলম। দূর্নীতি দেশ ও জাতির জন্য হুমকী স্বরুপ। দূর্নীতি নামক ভাইরাসটি কোন দেশের জন্য কল্যানকর নয়। আর যদি শিক্ষা খাতে হয় দূর্নীতি তাহলে শিক্ষার মান উন্নয়ন কাজে বাধাগ্রস্থ হবে না একথা অস্বীকার করা যায় না। উপজেলার চার সহকারী শিক্ষা অফিসারের ঘুষ বানিজ্য ও দূর্নীতির যাতাকলে পিষ্ট শিক্ষকরা।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৯১ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ ৪২ টি স্কুলে বরাদ্দ পায় ৪৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। বিদ্যালয়ের বরাদ্দ কৃত টাকার চেক ছাড় পেতে শিক্ষকদের নগত মোটা অংকের টাকা চার সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দিতে হয়েছে। সহকারী শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির কারনে ভূক্তভোগী শিক্ষকরা এখন নিরুপায়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহকারী শিক্ষা অফিসাররা বদলির ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদেরকে স্থবির করেছে। দূর্নীতির কারণে পাল্টে গেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের দৃশ্যপট। তাই বলা চলে এদের খুটির জোর কোথায় ?
১৪৪ নং বন্যতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আম্ফানের বরাদ্দকৃত টাকা ছাড় পেতে শিক্ষা অফিসারের সামনে সহকারী শিক্ষা অফিসার সোহাগ আলমের হাতে নগত ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ১৮৭ নং আস্তাখালী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের ও ১১৪ নং বাইনতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপংকর কুমার ঘোষ সহ অনেক শিক্ষকরা বলেন, ঘৃর্ণিঝড় আম্ফানের বরাদ্দের চেক নিতে সহকারী শিক্ষা অফিসারদের কাছে ২৬% হারে নগত ঘুষ ও ভ্যাট বাবদ ১২% হারে টাকা কেটে নিয়ে চেক প্রদান করেছেন। ঘুর্ণিঝড় আম্ফান খাতে ২৬% হারে নগত দূর্নীতি করেছে ১১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ও ভ্যাট খাতে ১২% হারে দূর্নীতি করেছে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ খাতে মোট দূর্নীতি করেছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
ঘূর্নীঝড় আম্ফান খাত থেকে ১৪ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয় উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহ-আলম,আজহারুল ইসলাম, সোহাগ হোসেন ও সোহাগ আলম এর সাথে কথা হলে তারা ঘুষ বানিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলনের কাছে জানতে চাহিলে তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষকদের নিকট থেকে ঘুষ নেবে কেন ? বরাদ্দের টাকা দিয়ে স্কুলের উন্নয়নের কাজ হবে। তবে এবিষয় শিক্ষকরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবো।
এবিষয় সাতক্ষীরা জেলা (প্রাঃ) শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমীন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির ঘটনাটি খুবই আপত্তিকর। আপনাদের পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি তাই জেলা এ ডিপিও অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামালকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট দিলে ব্যবস্থা নিবো। বর্তমান সরকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন। আমরাও এবিষয় যথেষ্ট সচেতন আছি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক কমিটির সভাপতি আতাউল হক দোলন বলেন, আইনের উর্দ্ধে কেউ নন, শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মহিদার রহমান বলেন, শ্যামনগরের সহঃ শিক্ষা অফিসারাদের ঘূষ বানিজ্যের ঘটনা অত্যান্ত দুঃখ জনক। শিক্ষা অফিস একটি পবিত্র স্থান সেখানে দূর্নীতি মেনে নেওয়া যায়না। আমি তাদের বিভাগীয় শাস্তির পাশা-পাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এঘটনায় সূশীল সমাজ বলেন। শিক্ষা খাতে দূর্নীতি সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটা ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধোতন কতৃপক্ষের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।।