1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

উপকূল বাসীকে জীবনে স্বস্তির পরশ

  • প্রকাশের সময় সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ১৫ বার সংবাদটি পাঠিত

এম কামরুজ্জামান,শ্যামনগর

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚ল, যেখানে প্রতিটি সকাল শুরু হয় শঙ্কা নিয়ে। ঘ‚র্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন আর লবণাক্ততা এই জনপদের মানুষের নিত্যসঙ্গী। বছরের পর বছর ধরে এখানে মাটি হারিয়েছে তার উর্বরতা, পুকুরের পানি হয়েছে নোনা, নষ্ট হয়েছে খাবার পানির উৎস। প্রতিটি ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। নারী ও শিশুরা ঘরে নয়, সময় কাটায় পানি খুঁজে দ‚র-দ‚রান্তে হাঁটতে হাঁটতে। এই প্রেক্ষাপটেই আশার আলো হয়ে এসেছে ‘ব্লু-ইকোনমি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ সংক্ষেপে ইওউ৪ঈঔ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে উন্নয়ন সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ। তাদের লক্ষ্য একটাই, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার এসব দুর্বল জনগোষ্ঠীর জীবনে টেকসই পরিবর্তন আনা, যাতে তারা শুধু বাঁচে না, নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তেও পারে।” “ইওউ৪ঈঔ প্রকল্পের আওতায় উপক‚লীয় এলাকা সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর ও খুলনার কয়রা উপজেলার জলবায়ু ঝুঁকিপ‚র্ণ এলাকাগুলোতে বাস্তবায়িত হচ্ছে নানা কার্যক্রম।খনন করা হয়েছে বহু পুকুর, যাতে মিষ্টি পানি ধরে রাখা যায়। বাঁধাই ও সংস্কার করা হয়েছে পুকুরপাড়, যাতে দ‚ষণ না ঘটে। স্থাপন করা হয়েছে বড় আকারের রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাংক, যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বছরের অন্যান্য সময়েও ব্যবহার করা যায়। আধুনিক ফিল্টার প্লান্টের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানি। গ্রামীণ রাস্তা সংস্কার করে সহজ করা হয়েছে যোগাযোগ। পাশাপাশি, রাস্তার পাশে রোপণ করা হয়েছে লবণাক্ত সহনশীল গাছ। নদীর চরে চলছে ম্যানগ্রোভ বনায়ন যা পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। এই প্রকল্প শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের জীবনে এনেছে বাস্তব পরিবর্তন। এখানকার নারীদের আগে প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার দ‚র থেকে পানি সংগ্রহ করতে হতো। এখন ঘরের কাছেই ট্যাংক, ফিল্টার থেকে পানি পাচ্ছেন তারা। এই পরিবর্তন শুধু সুবিধা নয়, যেন নতুন করে বেঁচে ওঠার অনুভ‚তি দিয়েছে উপক‚লবাসীকে।ইওউ৪ঈঔ-এর আরেকটি বড় দিক হলো স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ এই প্রকল্পকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। গঠন করা হয়েছে ‘উপক‚ল সুরক্ষা কমিটি’, যার নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় তরুন ও নারীরা। তারা এখন নিজের এলাকার পরিবেশ রক্ষায় সচেতন ভ‚মিকা নিচ্ছেন। এভাবেই গড়ে উঠছে নেতৃত্ববান সমাজ, যা প্রকৃত অর্থে জলবায়ু ন্যায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপ‚র্ণ।উপক‚লীয় জনপদ শুধু একটি এলাকা নয়, এটি বাংলাদেশের পরিবেশ, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের প্রাণ। এই জনপদের মানুষ বাঁচলে, দেশ বাঁচবে। ইওউ৪ঈঔ প্রকল্প আজ প্রমাণ করেছে, যদি পরিকল্পনা সঠিক হয়, অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, তাহলে টেকসই পরিবর্তন সম্ভব।ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর এমন উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর এক বাস্তব উদাহরণ। এই গল্প শুধু সাতক্ষীরার নয় এটি বাংলাদেশের উপক‚লীয় মানুষের গল্প, বাঁচার গল্প।আটুলিয়া ইউনিয়নের উপকারভোগী দোলা, আরিফা মনিরা ও মঞ্জুয়ারা বলেন, আমরা দক্ষিণ পশ্চিম আটুলিয়া সমতা গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৮৮ সালে চুনা নদীর পাডে গ্রামটি পড়ে ওঠে। সেখান থেকে আমাদের পানির কষ্ট। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগের থেকে এখন পানির কষ্ট আরো বেশি। চারিপাশে লবণ পানি আর লবণ পানি। ২০২৩ সালে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স অক্সফাম ইন বাংলাদেশ আমাদের পাশে আসে এবং সমস্যাগুলোকে শুনে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয় দেয়। পানির কষ্ট দ‚র করতে মিষ্টি পানির পুকুর খনন সহ পুকুরের পাড় বেঁধে দেয়। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পানির ট্যাংক দিয়েছে। বিভিন্ন রকম বৃক্ষ দিয়েছে। এসব পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি।কৈখালী ইউনিয়নের উপকারভোগী সুরধনী সুমন ও খুকুমণি বলেন, আমারা কৈখালীতে ৪৭ ঘর মুÐা পরিবার বসবাস করি। আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স রাস্তার দুইপাশ দিয়ে বেঁধে দিয়ে সেখানে সাডে ৩০০ বিভিন্ন প্রকার লবণ সহনশীল গাছ রোপন করে দিয়েছে। পানির কষ্ট লাঘব করতে পানির ট্যাংক দিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলা, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন ও নারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সচেতন করতে প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। রমজাননগর ইউনিয়নের ভৈরবনগর শেখ আল মামুন জাহাঙ্গীর আলম হাফিজিয়া নুরানী মাদ্রাসার হাফেজ আলতাফ উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকায় পানির কষ্ট বহুদিনের। রাস্তাঘাট ও খারাপ। বহুদ‚র থেকে বেশি টাকা দিয়ে এলাকার মানুষ পানি কিনে খেতো ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স একটি পানির প্লান করে দিয়েছে সেখান থেকে স্বল্পম‚ল্যে মানুষ পানি পাচ্ছে। ফলে এলাকার মানুষের পানির কষ্ট লাঘব হয়েছে।ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের প্রজেক্ট অফিসার আব্দুল খালেক বলেন, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ান এইডের সহযোগিতায় ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের বাস্তবায়নে ব্লু ইকোনমি এন্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস প্রকল্পের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন মাদার নদীর চরে মোট ৪৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা লাগানো হয়েছে। গোলপাতা, গেওয়া, কেওড়া, কাঁকড়া প্রভৃতি। শ্যামনগরের ৮টি ইউনিয়নে, আশাশুনিতে ০৭ ইউনিয়নে ও কয়রাতে ০১টি ইউনিয়ন মোট ১৬ টি ইউনিয়নে জলবায়ু ও জেন্ডার ন্যায্যতা, ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ বান্ধব ব্যবসার প্রসারণ নিয়ে কাজ করছে। আর ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স জলবায়ু ও জেন্ডার ন্যায্যতা, ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে উক্ত অঞ্চলে কাজ করছে। উল্লেখ্য যে, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের আরেকটি প্রকল্প চলে নাম সিসিকে। তারা শুধু মুন্ডা কমিউনিটি নিয়ে কাজ করে।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION