1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

শ্যামনগরে সহকারী চার শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ২৯ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ!

  • প্রকাশের সময় শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৭৯ বার সংবাদটি পাঠিত

মোঃ ইব্রাহিম খলিল: শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি ততো বেশি উন্নত। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার শিক্ষার মান বাড়ানোর পাশা-পাশি শিক্ষার গতির চাকা সচল রাখতে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে এবং শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৭৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে শিক্ষা অধিদপ্তর হতে খুদ্র মেরামত খাতে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঠিক তখনি সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার চার সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র মেরামত ও ভ্যাটে ২৯ লক্ষাধিক টাকার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যালয় গুলোর মেরামত ও সংস্কারের কাজ শেষ করে ১০ জুলাই (২০২০) এর মধ্যে ব্যয়িত অর্থের হিসাব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রদান করার কথা থাকলেও অদ্যবধি কোন বিদ্যালয় কোন কাজ হয়নি। এমনকি কি ধরনের কাজ করবে তার প্রাককলন দেওয়া হয়নি।

শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা ছিলো বরাদ্দ কৃত প্রতিটি স্কুলে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস থেকে প্রাককলন নিতে হবে। আর কাজ শেষ হলে সরেজমিনে কাজ দেখে প্রত্যায়ন দেওয়ার পর স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের নামে চেক প্রদান করতে হবে। কিন্তু এখানে হয়েছে এর উল্টটা। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা উপেক্ষা করে কোন প্রকার নিয়ম নীতি না মেনে জুলাই ও আগস্ট (২০২০) স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককের কাছ থেকে ১২ টি ইউনিয়নে ১২ জন সচিব পদ সৃষ্টি করে ১৫% হারে নগত ২১ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়ে চেক প্রদান করেছেন সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহআলম,আজহারুল ইসলাম, সোহাগ হোসেন ও সোহাগ আলম। তারা এখানে খ্যান্ত হননি মোটা অংকের টাকার বিনিময় নিয়ম বহিভূত ভাবে একই বিদ্যালয়ে দু-টি বরাদ্দ পাইয়ে দিয়েছে। বরাদ্দ কৃত স্কুল গুলোর উৎকোচের টাকা দিতে অস্বীকার করায় রীতিমতন এক স্কুলের বরাদ্দ অন্য স্কুলে দেয়া ও বদলির ভয় দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৯ অর্থ বছরের প্রতিটি বিদ্যালয় বরাদ্দ কৃত প্রকল্পের টাকা হতে মোটা অংকের উৎকোচ ও ১৫১ টি স্কুলের স্লীপ খাতের বরাদ্দ হতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বাবদ ২৫ হাজার টাকা হারে কর্তন করেন চেকের মাধ্যমে। কিন্তু হাজিরা মেশিনের বাজার মূল্য ছিল মাত্র ৬ হাজার ৮ শত টাকা। ইতি পূর্বে দূর্নীতির খবরটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় শিক্ষা অফিসারের অনেক প্রশ্নের স¤ু§খিন হতে হয়েছিল। তাই ২০২০ সালে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসাররা কৌশল পরির্বতন করেছেন। তারা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের বরাদ্দ যেমন প্রাক প্রাথমিক, স্লীপ খাতের চেক আগেই শিক্ষকদের কাছে প্রদান করেছেন। যাতে শিক্ষকরা ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে ক্যাশ করে ১৫% হারে নগত উৎকোচ দিতে পারেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য মতে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে পিডিবি-৪ ক্ষুদ্র মেরামত খাতে ৫৮টি স্কুলে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং ক্ষুদ মেরামত খাতে ১৬ টি স্কুলে বরাদ্দ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ২৪ লাখ টাকা প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা দেয়ার সময় প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে ভ্যাট, আয়কর বাবদ ১২% আর নগত ১৫% হারে ২১ লাখ টাকা ১২ জন পদ সৃষ্টি কৃত সচিবদের মাধ্যমে ঘুষ বানিজ্য করে চেক প্রদান করেছেন সহকারী শিক্ষা অফিসাররা।
উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিসের তথ্য মতে বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত খাতে র্নিমান সংস্থার কর্তন কৃত মূসকের হার ৬%। কিন্তু নিয়ম বহিভূত ভাবে কোন আইনের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত ৬% হারে ভ্যাটের দোহায় দিয়ে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা দূর্নীতি করেছেন শিক্ষা অফিসাররা।
১০১ নং হাজিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক কানাইলাল মল্লিক, ১১০ নং সোরা লক্ষীখালি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী, ১৬৬ নং ধানখালি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরষিত মন্ডল সহ অনেকে জানান, বরাদ্দ কৃত টাকা পাওয়ার জন্য স্ব-স্ব ইউনিয়নের সচিবদের মাধ্যমে ১৫% হারে সহকারী শিক্ষা অফিসারদের কাছে নগত টাকা দিয়েছি। চার সহকারী শিক্ষা অফিসারের দূর্নীতিতে শিক্ষকরা চরম ভাবে ক্ষুদ্ধ। এঘটনায় শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত পূর্বক প্রতিকার সহ দুদকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
৪২ নং মরাগাং স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন (সচিব) সহ অন্যান্য সচিবরা জানান, সহকারী শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশে স্ব-স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে ১৫% হারে টাকা উত্তোলন করে শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছি। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে পাপ কখনো বাবকেও ছাড়েনা। ১২৭ নং স্কুলে প্রধান শিক্ষক হোসেন আলী জানান,বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার জন্য তিন কেজি মধু,ছয় কেজি রাজহাসের মাংশ দিয়েছি শিক্ষা অফিসারের বাসায়। তিনি আরো জানান, নগত দশ হাজার টাকা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দেওয়ার জন্য নিয়েছে শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও শিশু শিক্ষা নিকেতন এর প্রধান শিক্ষক পরিমল কর্মকার।
এবিষয় উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহআলম,আজহারুল ইসলাম, সোহাগ হোসেন ও সোহাগ আলম এর সাথে কথা হলে ১২% হারে ভ্যাট নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন, কিন্তু ১৫% হারে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। এদিকে নিজেদের দূর্নীতি ও কুকর্ম ঢাকতে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী আ,ন,ম আবুজর গিফারীকে ৫০ হাজার টাকা দিতে যেয়ে ব্যার্থ হন সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহআলম। তিনি শিক্ষা অফিসারের বরাত দিয়ে আরো বলেন, আমি ইউএনও অফিসে যেতে চায়নি কিন্তু শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জান মিলন চাচার ভয় দেখান তাই আমি নিরুপায় হয়ে উক্ত টাকার প্রস্তাব দিলে ইউএনও ভাল মানুষ হওয়ায় প্রত্যাখান করেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান বলেন. গত ২০১৯ সালে শিক্ষকদের কাছে থেকে কিছু টাকা উঠানোর ফলে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল। তাই এবার শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা তোলায় আমি রাজি ছিলাম না। আমার সহকারী শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষা সমিতির কিছু শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষকদের নিকট থেকে কিছু টাকা তুলে নিজেদের কাছে রেখেছে। তবে শিক্ষকরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
এ বিষয় সাতক্ষীরা- ৪ আসনের এম পি এস এম জগলুল হায়দার বলেন, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসাররা ১৫% হারে যদি ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন, তবে শিক্ষকদের দিয়ে সমুদয় টাকা আদায় করে শিক্ষক সমিতির ভবনের কাজে লাগানো হবে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে তার নিজস্ব তহবিল হতে দুই লাখ টাকা অনুদান দিয়ে ভবনের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে জানান।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION