আবু সাঈদ হেলাল,যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কৃষকলীগ আয়োজিত সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
তিন মাসব্যাপী কৃষকলীগ আয়োজিত ১৪২৭ বঙ্গাব্দের বৃরোপণের মূল অনুষ্ঠান রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে কৃষক লীগ বর্ষাকালে সারাদেশে বৃরোপণের এই কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্তত এক কোটি গাছ তো আমরা লাগাবোই এবং এই কর্মসূচি আমাদের অব্যাহত থাকবে। তিনটি করে গাছ লাগালে তিন কোটি গাছ লাগানো যাবে। এ সময় সকলকে সারাদেশে ফলজ, বনজ ও ভেষজ এই তিন প্রজাতির গাছ অন্তত একটি করে হলেও লাগানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই হোক রাস্তার পাশে হলেও গাছ লাগাতে হবে। আর উপকূলীয় অঞ্চলে যে গাছগুলো মাটি ধরে রাখে যেমন-ঝাউ, নারকেল, খেজুর ও তালগাছ লাগাতে হবে। আর ব্যাপকভাবে ফলের গাছ লাগাতে হবে। কারণ আমাদের পুষ্টি এই ফল থেকে আসে। বৃরোপণ আর এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং এ কর্মসূচিটি এখন একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
কৃষকলীগ সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি স্বাগত বক্তৃতা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কৃষিখাত যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে।
২০২০-২০২১ অর্থ-বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কৃষি খাতে ২২ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের মানুষ যেন আর খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, সেই দিককে সামনে রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকরা যেন ঋণ নিতে পারে সে জন্য পৃথকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে ভিন্ন মাত্রায় অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও আজ অন্তত একটি গাছ তিনি গণভবনে লাগাবেন বলে অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর পর থেকে কৃষিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দলের নেতা-কর্মীদের হাতে বৃক্ষরোপণের জন্য গাছের চারা বিতরণ করেন।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের জন্য কৃষকলীগ দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেও সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এমনকি শ্রমিক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সকল সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি সদস্য তিনটি করে গাছ লাগাবেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সকল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কৃষকদের ধান কাটায় সহযোগিতা না করলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে দেশের বোরো ধানের ব্যাপক তি হয়ে যেতে বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেন।
৯৬ সালে সরকারে এসে প্রথম গবেষণার জন্য ‘থোক’ বরাদ্দ প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে গবেষণার জন্য আমাদের একটি টাকাও বরাদ্দ ছিলনা। তখন এই কৃষি গবেষণাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ বরাদ্দও দিয়েছি। তিনি বলেন, গবেষণার ফলেই আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। বিভিন্ন প্রকার ফল আজ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে চাষ হচ্ছে। মানুষ এখন প্রচুর ফল খাচ্ছে।
এমনকি আমাদের দেশের ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বন্যা, খরা ও লবণ সহিষ্ণু ধানও উৎপাদন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু গাছ লাগানোই নয়, গাছের যত্ন নেয়ার ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধু গাছ লাগালেই হবে না, নিজের সন্তানকে যেমন লালনপালন করতে হয়, একটা গাছ লাগালে তাকেও কিন্তু যত্ন করতে হবে, লালনপালন করতে হবে। তাহলেই তো সে ফল দেবে। বৃরোপনকে আরও উৎসাহিত করতে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি মাঝে মধ্যে খবর নিব, কে কয়টি গাছ লাগিয়েছে এবং কার গাছের কি অবস্থা।